বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিল্পীরা এত বিভক্ত কেন

শিল্পীরা এত বিভক্ত কেন

একটা সময় সংগীতাঙ্গনে ছিল অনেক গুণী শিল্পীর সমারোহ। তাদের গান ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বে। গীতিকার, সুরকার, সংগীতশিল্পীদের সম্মিলিত প্রয়াস ঋদ্ধ করেছে আমাদের সংগীতকে। ফোক, আধুনিক, সিনেমার গান সর্বত্রই ছিল বৈচিত্র্য। সংগীতাঙ্গনের মানুষের মধ্যে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। এখন আর সেদিন নেই। জৌলুস হারিয়েছে সংগীত। যেটুকু আছে সেটুকু নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত শিল্পীরা। এখন অধিকাংশ শিল্পী ব্যস্ত দলবাজিতে। স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা সবার মাঝে। ব্যক্তি স্বার্থে একটি গোষ্ঠী এগুলো করছে নিজেদের শোডাউন করার জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংগীত। এর আগেও শিল্পীরা নানা বিষয় নিয়ে পারস্পরিক সমঝোতায় মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি। শিল্পীদের এমন বিভক্তি নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে প্রবীণদের মাঝে। এ অবস্থার উত্তরণ কীভাবে হবে কেউ জানে না। এ নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তিরা। তুলে ধরেছেন-  আলী আফতাব

 

অন্তরকে শুদ্ধ করতে হবে

------ গাজী মাজহারুল আনোয়ার

প্রতিটি মানুষের মধ্যে প্রাপ্তি ও তৃপ্তির বিষয়টি আছে। প্রাপ্তির সঙ্গে তৃপ্তির ব্যবধান হলেই মানুষের মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধে সবাই মাঠে নেমে যুদ্ধ করেনি। যে যখন যেভাবে পেরেছে যুদ্ধ করেছে। আমি আমার জায়গা থেকে লিখেছি, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। এ ছাড়া ‘কেউ পাবে কেউ পাবে না’ এই মন্ত্র যদি আমাদের মনে থাকে তবে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির দ্বিধার জায়গাটা কোনো দিন ঠিক হবে না। সংগীত অন্তরকে শুদ্ধ করে। আমরা যদি অন্যের ভালোটা না দেখতে পারি তবে কী করে হবে। আমাদের ভালোকে ভালো বলতে হবে আর মন্দকে সমালোচনা করতে হবে। শিল্পীদের মধ্যে দ্বিধার জায়গাটা তৈরি হওয়ার পেছনে আরও একটা কারণ আছে। সেটি হলোÑ ‘আমরা কার কত কাছাকাছি।’ সব ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আজ একজন যদি ভালো কাজ করে তার প্রসংশা করতে হবে। আর তা না করতে পারলে চুপ করে থাকতে হবে। পারলে নিজের যোগ্যতা দিয়ে অন্যকে টপকাতে হবে। সব শেষে বলতে চাই, নিজেদের মনকে সুন্দর করতে হবে।

 

তারা আমাদের বাতিল মানুষ মনে করে

---------  আলম খান

সংস্কৃতি অঙ্গনে কেউ কোনো দিন একা পথ চলতে পারে না। সবাইকে নিয়ে আমাদের পথ চলতে হয়। আমরা শুরু থেকে যে কোনো কাজ করতে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি সবাইকে এক করে কাজটি করতে। মতের অমিল থাকতেই পারে কিন্তু তা যুক্তি-তর্কের ঊর্র্ধ্বে নয়। কিন্তু এখন সবাই নিজেকে বড় মনে করে। নিজেরাই সব জানে। এখন তারা আমাদের বাতিল মানুষ মনে করে। কোনো প্রয়োজনে তারা আমাদের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। যদি গানের কথা বলি, ‘একটা সময় আমাদের গান ছিল মানুষের মুখে মুখে। এখনো সেই গানগুলো মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু এখন কয়টা গান মানুষের মুখে মুখে? বেশির ভাগ গানই কিছু দিন পর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তারা বুঝতে চায় না। আরও এটি বিষয় আমাকে ভাবায়। আর তা হলো, ‘এখনকার অধিকাংশ গান প্রেম আর ভালোবাসার। প্রেম ভালোবাসা ছাড়া যেন এখন আর গান হতে চায় না। তারা সীমাবদ্ধতায় পড়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে। 

 

প্রায় সবার মধ্যে না মানার প্রবণতা কাজ করে

--------- শেখ সাদী খান

শিল্পীদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি বা সমন্বয়হীনতা হচ্ছে না তা আমি বলব না। বিষয়টা আমাদের মধ্যে আগেও ছিল, কিন্তু এতো পরিমাণে নয়।

আমরা যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছি, চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে সে সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু এখন বাজারে চাহিদা থাকা কিছু শিল্পী আমাদের শ্রদ্ধা করতে ভুলে গেছে। তারা মনে করে এখন তাদেরই সময়। অনেক শিল্পীর মধ্যে একটি না মানার প্রবণতা কাজ করে।

আমি মনে করি, সংগীতাঙ্গনে যে কোনো সমস্যায় সিনিয়র শিল্পীরা এগিয়ে আসবেন এবং সেই সমস্যার সমাধান করবেন। আর আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। তারা যখন আমাদের ডাকবে তখন তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সিনিয়র শিল্পীদের প্রাপ্য মর্যাদা ও শ্রদ্ধা করতে হবে। এ বিষয়গুলো যখন সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে লোভ পাবে তখনই সমস্যগুলো তৈরি হবে।

 

গানের মানুষদের রাজনীতির সঙ্গে মেশানো ঠিক না

-------- খুরশিদ আলম

নতুন-পুরনো কোনো বিষয় নয়। শিল্পীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের জায়গাটা থাকতেই পারে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন একসঙ্গে বসে তার সমাধান করা। আমরা যখন আগে একটি গান করতাম তখন গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী সবাই একসঙ্গে বসতাম। কিন্তু এখন শিল্পীদের বসার কোনো জায়গা নেই। আমার শিল্পী জীবনের শুরু থেকে আমি কৃতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আবদুল জব্বার ভাইয়ের কাছে। তিনি প্রথম আমাকে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সামনে গান গাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমার বন্ধুসুলভ সম্পর্ক ছিল। যে কোনো সমস্যায় আমি তার কাছে ছুটে যেতাম। এখন শিল্পীরা কেন জানি সিনিয়র শিল্পীদের সঙ্গে মিশতে লজ্জা পায়। এখন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখে প্রায় শোনা যা, এখন সিনিয়র শিল্পীদের একক গানগুলো খায় না। গান কি খাওয়ার বিষয়। অনেক কষ্ট লাগে এসব শুনলে। সবশেষ আরও একটি কথা বলি। গানের মানুষদের কখনো রাজনীতির সঙ্গে মেশনো ঠিক না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর