সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

জৌলুস হারিয়েছে নাটক সরণির মহিলা সমিতি

মোস্তফা মতিহার

জৌলুস হারিয়েছে নাটক সরণির মহিলা সমিতি

নাটককে বলা হয়ে থাকে সমাজের দর্পণ। নাটকের মধ্য দিয়ে শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের প্রতিচ্ছবি। নান্দনিকতা ও শৈল্পিকতার অপূর্ব মিশেলে এ দেশের নাটক নিঃসন্দেহে অহংকার করার মতো। আমাদের দেশের মঞ্চনাটককে শিল্পায়নে রূপ দিতে বেইলি রোডের অবদান অনস্বীকার্য। ঢাকার নাটক সরণির আর নাটকের ইতিহাস একটা আরেকটার পরিপূরক। দুঃখজনক হলেও সত্য জৌলুস হারিয়েছে নাটকের জন্য সমৃদ্ধ আগেকার বেইলি রোড। এখান থেকে নাটক বিচ্যুত হওয়ার পর এই অঙ্গনেও সৃষ্টি হয় স্থবিরতা। মূলতঃ ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটির মধ্য দিয়েই বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে দর্শনীর বিনিময়ে প্রথম নাটক মঞ্চায়ন শুরু হয়। ‘বাকি ইতিহাস’ নাটক দিয়ে শুরু করে দীর্ঘ চার দশক মহিলা সমিতির মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ায় নাট্যকর্মীরা। মঞ্চে নাট্যকর্মীদের অভিনয়ের শৈল্পিকতা আর মিলনায়তনে নাট্যানুরাগী দর্শকদের সরব উপস্থিতি বেইলি রোডের মহিলা সমিতির মঞ্চে ফুটে উঠত শিল্পের গৌরবজনক অধ্যায়। এই মঞ্চটির পর বেইলি রোডের গাইড হাউস মিলনায়তনেও শুরু হয় নাটকের মঞ্চায়ন। বলা চলে, সমৃদ্ধ ও সফলতার সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ আর বেইলি রোডের নাটকপাড়া প্রায় একসঙ্গেই বেড়ে উঠছিল। নাটকের গৌরবজনক ইতিহাস বেইলি রোডকে ঘিরে আবর্তিত বলে নাট্যকর্মীদের দাবির মুখে বেইলি রোডের নাম পরিবর্তন করে ‘নাটক সরণি’ করা হয়। জৌলুসপূর্ণ চার দশক পার করে বেইলি রোড নাটকের ইতিহাসে এখন কালের স্বাক্ষী। ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকের মাধ্যমে নাট্যকর্মীরা তাদের শুভ সূচনা করলেও বেইলি রোডের মহিলা সমিতির সেইসব আলোকিত দিন এখন সোনালি অতীত।

সংস্কারের অজুহাতে মহিলা সমিতি ও গাইড হাউস মিলনায়তন ভেঙে ফেলার পর মহিলা সমিতির নাটকের মঞ্চায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা চালু করা হলেও নাট্যকর্মীদের নাটকের চর্চার নতুন দিক উন্মোচিত হয়। তবে বেইলি রোডের সেই স্বর্ণযুগ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে নাট্যাঙ্গন। নাটকের ঐতিহ্য নিয়ে বেইলি রোড তার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করলেও বর্তমানে নানা কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে নাটক সরণি। মহিলা সমিতির মঞ্চকে ভেঙে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করার পর তাতে নাটক মঞ্চায়নের জন্য মিলনায়তন রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই মঞ্চ আজও জমে উঠেনি। মহিলা সমিতিতে নাটকের মঞ্চায়ন শুরু হলেও গাইড হাউস মিলনায়তনটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। নাটকের পাশাপাশি এখানে নানা পূজা-পার্বণ ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। নাট্যজন কেরামত মওলা বলেন, গাইড হাউস মিলনায়তন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এজন্য নাট্যাঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে নাটক সরণি। কারণ নাটক সরণির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সবকিছুই গড়ে উঠেছে মঞ্চনাটককে ঘিরে। পরবর্তীতে শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাট্যশালা নির্মিত হলেও নাটক সরণির সেই উচ্ছ্বাস ও আন্তরিকতা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে পাওয়া যায় না। মহিলা সমিতির মঞ্চ চালু হলেও সেই জৌলুস নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কেরামত মওলা জানান, একবার কোনো কিছুতে গ্যাপ পড়লে সেটা পূর্বের অবস্থায় নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, যানজট বেড়েছে। ইচ্ছা করলেই এখন মানুষ নাটক দেখার জন্য সময় বের করতে পারে না। তাছাড়া আকাশ সংস্কৃতিও এক্টর-ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর