মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সেন্ট্রাল ক্যারেক্টরে নেই সিনিয়র শিল্পীরা

সেন্ট্রাল ক্যারেক্টরে নেই সিনিয়র শিল্পীরা
ঢাকাই ছবিতে সিনিয়র শিল্পীদের কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাস্ট করে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় না এখন। অথচ ভারতে শ্রীদেবী অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, মিঠুন চক্রবর্তী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিতের মতো সিনিয়র শিল্পীদের কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাস্ট করে ছবি নির্মাণ এবং তা পুরস্কৃত ও দর্শকনন্দিত হয়। কেন এখানে এই অনাগ্রহ। এ বিষয়ে বেশ কজন চলচ্চিত্রকারের বক্তব্য তুলে ধরেছেন-  আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কবরী

হলিউড আর বলিউডে দর্শক যখন একই গল্পের ছবি দেখতে দেখতে বিরক্ত তখন শন কনোরি, অমিতাভ বচ্চন, শ্রীদেবী, সৌমিত্রের মতো শিল্পীদের নিয়ে নতুন ডায়মেনশনে ছবি তৈরি শুরু হয়। দর্শক এসব ছবি গ্রহণ করল, গল্পে নতুনত্ব পেয়ে নড়েচড়ে বসল। এমন ব্যবস্থা আমাদের দেশেও দরকার। প্রয়োজন সিনিয়রদের সেন্ট্রাল ক্যারেক্টরে এনে ছবি নির্মাণ করা। এভাবে নির্মাণ হলে চলচ্চিত্রের দুরবস্থার দ্রুত পরিবর্তন আসবে।

 

শাবানা

আমাদের এখানে সিনিয়রদের নিয়ে ছবি বানানোর ঝুঁকি কেউ নিতে চান না। এখন যারা নির্মাণে আসছেন তাদের মধ্যে গবেষণা বা ভেরিয়েশনের চিন্তাভাবনা তেমন নেই। এক সময় রাজ্জাককে কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাস্ট করে ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ফারুককে নিয়ে ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এর মতো ছবি নির্মাণ এবং তা জাতীয় পুরস্কার আর দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সিনিয়রদের নিয়ে কাজ করার চিন্তা থাকলেও ব্যবসায়িক ঝুঁকির কারণে অনেকে পিছিয়ে যান। এটিই দুঃখজনক।

 

ববিতা

সিনিয়র হয়ে গেলে শিল্পীকে সেন্ট্রাল ক্যারেক্টর দিয়ে ছবি নির্মাণ করেন না। নির্মাতাদের অজুহাত- ‘ছবির বাজার মন্দা, ছবি চলে না আবার সিনিয়রদের সেন্ট্রাল ক্যারেক্টরে কাস্ট করে কে লোকসান গুনতে যাবে।’ কথাটি মোটেও ঠিক নয়। সিনেমা হচ্ছে একটি গবেষণা ধর্মী মাধ্যম। আমাদের দেশে এ নিয়ে গবেষণার কোনো বালাই নেই। খ্যাতিমান গল্পকারেরও অভাব রয়েছে।  সিনিয়রদের ছবি যদি নাই দেখত তাহলে আমাদের দর্শক কেন শ্রীদেবীর ‘ইংলিশ ভিংলিশ’, ‘মম’, অমিতাভ বচ্চনের ‘পিংক’, ‘পা’, ‘নট আউট ১০২’, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’র মতো ছবিগুলো বারে বারে দেখছে। আমাদের গতানুগতিক ধারার গ-ি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

 

সোহেল রানা

সিনিয়রদের নিয়ে কেন ছবি নির্মাণ হয় না তা এখনকার নির্মাতারাই ভালো জানেন। আমরা গল্পে ডায়মেনশন আনার চেষ্টা করতাম। নতুনত্ব খুঁজতাম। এখন এই অবস্থা কোথায়। শিল্পীরা চলচ্চিত্রে আসেন দুটো কারণে। অর্থ এবং সম্মানের জন্য। এখন তো কোনোটাই নেই। একজন মাছ ব্যবসায়ীও এখন সিআইপি, ভিআইপির মর্যাদা পাচ্ছেন। কিন্তু একজন চলচ্চিত্র শিল্পী বা নির্মাতাকে এসব সম্মান তো দূরে থাক এয়ারপোর্টে গেলে বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসব দেখে বড় কষ্ট হয়।

 

আলমগীর

সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে গল্প তৈরির মেধাসম্পন্ন লেখক এখানে আছে বলে মনে হয় না। এমন নির্মাতাও নেই যারা সিনিয়রদের কন্ট্রোল ও ডমিনেট করতে পারবেন। কারণ সিনিয়ররা ভুল দেখলে শুদ্ধ করতে বলবেন। তাই সাহস করে এখনকার নির্মাতারা সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে ছবি নির্মাণ করেন না। সিনিয়র নির্মাতাদের নিয়েও কাজ করতে চান না, কারণ তাদের নিয়ে কাজ করতে গেলে অ্যাডজাস্ট করতে বলবে। যদি একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখায় তাহলে এখনো সিনিয়রদের সেন্ট্রাল ক্যারেক্টরে কাস্ট করে কাজ করা সম্ভব।

 

অঞ্জনা

আমাদের চলচ্চিত্রে গল্প পরিবর্তন না হলে কীভাবে সিনিয়র শিল্পীরা কাজ করবেন। বিষয়ের কোনো অভাব নেই, অভাব মানসিকতার। যেমন আমি তো নৃত্যশিল্পী। একজন নৃত্যশিল্পীর জীবন নিয়ে গল্প লেখা যায়। যেমনটি হয়েছিল বলিউডে মাধুরীকে নিয়ে ‘আজা নাচলে’ ছবিটি। এসব ভাবার মতো নির্মাতা কোথায়। বেশিরভাগ নির্মাতাই তো সস্তা গল্পে সীমিত হয়ে আছেন।

সর্বশেষ খবর