বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

চরম সংকটে এফডিসি

চরম সংকটে এফডিসি

চরম সংকটে পড়েছে এফডিসি। ছবি নির্মাণ কমে যাওয়ায় আয় কমেছে সংস্থাটির। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদানসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এফডিসির দৈন্যদশার চিত্র তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

ছবির প্রিন্ট বন্ধ

এফডিসি কর্তৃপক্ষের কথায় সংস্থাটির আয়ের প্রধান উৎস ছিল চলচ্চিত্রের প্রিন্ট করা ও নেগেটিভ বিক্রির অর্থ। একটি প্রিন্ট করতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হতো। প্রতি প্রিন্ট বাবদ এফডিসির আয় ছিল প্রায় ১০ হাজার টাকা। আর একটি ছবির জন্য কমপক্ষে ৩০টি প্রিন্ট হতো। একসময় বছরে কমপক্ষে ৭০টি ছবি নির্মাণ হতো। ছবি মুক্তির এক সপ্তাহ পর আবার সেই ছবির রিপ্রিন্টও হতো। সেখান থেকেও আবার বড় অঙ্কের আয় আসত। তাছাড়া নেগেটিভ বিক্রির খাত থেকেও বড় অঙ্কের আয় থাকত। ২০১৩ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল প্রযুক্তির চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেমা হলে ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপন করলে ছবি চলে যায় পেন ড্রাইভ, মেমোরি কার্ড আর সিডিতে। এতে নেগেটিভ আর প্রিন্টের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এফডিসির প্রধান আয়ের এই খাতটি বন্ধ হয়ে যায় এবং সংস্থাটি আর্থিক সংকটে পড়ে। এফডিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়ে আরও বলেন, বর্তমান সরকার এফডিসির আধুনিকায়নের জন্য ২০১১ সালে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে যথাসময়ে এফডিসির আধুনিকায়ন করতে না পারায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ছবি নির্মাণে নির্মাতারা প্রাইভেট সংস্থায় চলে যান। ফলে ডিজিটাল প্রযুক্তির নির্মাণ থেকে পিছিয়ে পড়ে এফডিসি। দেরিতে ২০১৪ সালের স্থলে ২০১৭ সালে এফডিসির আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হলেও তা নানা অনিয়মের কারণে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপ লাভে ব্যর্থ হয়। ফলে দৈন্যদশায় পড়েছে এফডিসি।

 

প্রাইভেট সংস্থায় চলে গেছেন নির্মাতারা

এফডিসিতে যন্ত্রপাতি ও ফ্লোর ভাড়া প্রাইভেট সংস্থার চেয়ে বেশি হওয়ায় নির্মাতারা আর এফডিসিমুখী হতে চান না বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এফডিসি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো- ‘প্রাইভেট খাতে ভ্যাট ফাঁকিসহ নানাভাবে খরচ কম রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এফডিসিতে ভ্যাটসহ রসিদ কাটতে হয়। ফলে এখানে খরচ কম রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেতে প্রতিযোগিতায় গিয়ে নানা অফার দিয়ে নির্মাতাদের বাগিয়ে নেয়। ফলে নির্মাতারা কম খরচে কাজ করতে এফডিসির বাইরে চলে যায়। তাই এ ক্ষেত্রেও আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এফডিসি। এতে আর্থিক সংকট আর কাটছে না।

 

নির্মাতাদের কাছে বকেয়া অনাদায়ী

এফডিসিতে বকেয়ায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কোনো কোনো নির্মাতা এই সুযোগের অপব্যবহার করছেন। এর ফলে এফডিসি নির্মাতাদের কাছে এখনো বিশাল অঙ্কের বকেয়া অর্থ পাবে। সূত্র জানায়, আশির দশক থেকে অনাদায়ী এই বকেয়ার পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও  বেশি। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০ বছরে ৪১টি প্রযোজনা সংস্থার কাছে এফডিসির পাওনা ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৭০ টাকা। এসব ছবির বকেয়া আদায় করার জন্য ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল এফডিসির প্রশাসন বকেয়া আদায় সংক্রান্ত এক সভা করে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রযোজকদের দ্রুত বকেয়া পরিশোধের জন্য নোটিস পাঠানো হয়। কিন্তু এফডিসিতে এন্ট্রি করা ৯৫ ভাগ প্রযোজকের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং এক টাকাও আদায় করা যায়নি।

 

আয় কমেছে এফডিসির

এফডিসিতে দীর্ঘদিন ধরে ছবি নির্মাণ হয় না বললেই চলে। টিভি অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন নির্মাণের অর্থই এখন সংস্থাটির একমাত্র ভরসা। তা দিয়েও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয় না। এমন তথ্য জানিয়ে এফডিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান এফডিসিতে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় দুইশ। তাদের মাসিক বেতন প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। উৎসবের সময় বোনাসসহ এর পরিমাণ আরও বেশি দাঁড়ায়। কিন্তু এফডিসির বর্তমান মাসিক আয় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এর ফলে সময়মতো বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ভর্তুকি দিয়ে চলছে এফডিসি।

 

অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পাওনা বঞ্চিত

চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে পাওনা থেকে বঞ্চিত এফডিসির কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অবসরে যাওয়া ৭২ জন কর্মচারীর মধ্যে পাওনার জন্য দেনদরবার করতে করতে ইতিমধ্যে ২১ জনের মৃত্যুও ঘটেছে।

অবসরপ্রাপ্তরা গ্রাচ্যুইটি ও ছুটি নগদায়ন হিসেবে পাবেন ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৮ টাকা। এফডিসির এমডি মো. আবদুল করিম জানান, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধকল্পে সরকারি অনুদানের জন্য গত ৪ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর