সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ঈদের ব্র্যান্ডিং নাটক

হারিয়ে যাচ্ছে ঈদের ব্র্যান্ডিং নাটক

এক সময় ঈদের নাটক মানেই ছিল প্রবল দর্শক আকর্ষণের বিষয়। বেশ ঘটা করে দর্শক বিশেষ সেই নাটকগুলো দেখে তৃপ্তি পেত। যাকে বলা হতো উৎসবের নাটক! চ্যানেলগুলো পসরা সাজিয়ে বসত ব্র্যান্ডিং সব নাটক নিয়ে। এখনো দর্শক এ নাটকগুলো খোঁজে। জনপ্রিয় কিছু ঈদ সিক্যুয়াল নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

যখন শুধু বিটিভি ছিল তখন ঈদে জব্বার আলী এবার কী ঘটনা ঘটাবে তাই দেখার জন্য পুরো বছরের অপেক্ষায় থাকত দর্শক। রাস্তাঘাট ফাঁকা করে দিয়ে নাটক দেখতে বসত দর্শকরা। প্রচারের পর কয়েকদিন ধরে চলত সেই নাটকের আলোচনা-সমালোচনা। এখন কী হচ্ছে সেটা? ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি ঈদে প্রচার হতো জব্বার আলী সিরিজের নাটক। আমজাদ হোসেনের রচনা ও পরিচালনায় এ নাটকটি শুরু থেকেই হয় জনপ্রিয়। প্রথম দিকে নাটকটি শুধু রোজার ঈদেই প্রচার হতো। পরবর্তীতে কোরবানির ঈদেও এটির প্রচার শুরু হয়। জব্বার আলী চরিত্রে ছিলেন আমজাদ হোসেন নিজেই। তার নাটক শেষ হতো বাড়িতে ঈদের দিন ‘জব্বার আলী’র সেমাই খাওয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেই হাসির নাটক কি শুধুই হালকা বিনোদন বা হাসির নাটক ছিল? এটি ছিল দুর্নীতিবাজ, ভেজাল দেওয়া ব্যবসায়ীর অন্যায়ের প্রতিবাদস্বরূপ।

সিরাজগঞ্জের বাহেরগোলা এলাকার পুলক টেলিভিশনের ছোট পর্দায় এসেই হয়ে যান জাহিদ হাসান। এরপর ক্রমাগত বদলে যাওয়ার পালা। তার জাহিদ হাসান নামটিও আড়াল হতে শুরু করল। দর্শকের মুখে মুখে ফেরে কখনো তিনি ‘ক্যাকু ক্যাকু’, ‘মফিজ পাগল’, কখনো ‘গাধার বাচ্চা’, ‘মতি পাগলা’। এরপর একসময় নিজের সব নামকে ছাপিয়ে তার কেবল একটিই নাম হয়- আরমান ভাই। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাভিশনে ঈদ অনুষ্ঠানমালায় প্রচারিত হয় আরমান ভাই সিরিজ। গল্পটাও পুরান ঢাকাকে নিয়ে। নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক সাগর জাহান। এ চরিত্র নিয়েই তৈরি হয় ছয় পর্বের দুটি ধারাবাহিক ‘আরমান ভাই দ্য জেন্টেলম্যান’ ও ‘আরমান ভাই হানিমুনে’। এ ছাড়া হয় আরও পাঁচটি সিঙ্গেল নাটক ও টেলিছবি। জাহিদ হাসান ২০১২ সালে বলেছিলেন, ছোট পর্দায় আর আরমান ভাই চরিত্রে অভিনয় করবেন না। সিদ্ধান্ত হয়, আরমান ভাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হবে। এরপর এ চলচ্চিত্র তৈরির ব্যাপারে তেমন কিছু জানা যায়নি। বাবা কদু আজাদ, তার যমজ দুই ছেলে একাব্বর-নেকাব্বর। এ তিনজনের চরিত্রেই আছেন মোশাররফ। তিনজনের চরিত্র তিন রকম। গল্পে আহামরি কিছু না থাকলেও হাসির খোরাক আছে। আছে কমেডির প্রাণ মোশাররফ করিম। আর নাটকে মোশাররফ করিম থাকা মানেই হাসি-আনন্দে ভরপুর প্যাকেজ। নাটকের নাম ‘যমজ’। দর্শকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় নাটক এটি। গত কয়েকটি ঈদে যমজ নাটক নিয়ে আসছেন মোশাররফ করিম। ঈদের আগে তাই এ নাটকের সিক্যুয়াল নির্মাণের জন্য অনুরোধ করেন মোশাররফ ভক্তরা। যমজ নির্মাণ করছেন আজাদ কালাম। ২০১৩ সালে বাংলাভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘সিকান্দার বক্স’ সিরিজ নাটকের যাত্রা শুরু করেন সাগর জাহান। প্রথম নাটকের নাম ছিল ‘সিকান্দার বক্স এখন অনেক বড়’। এর পর ধীরে ধীরে ঈদের জন্য সাগর নির্মাণ করেন ‘সিকান্দার বক্স এখন বিরাট মডেল’, ‘সিকান্দার বক্স এখন কক্সবাজারে’, ‘সিকান্দার বক্স এখন পাগলপ্রায়’সহ বেশ কিছু নাটক। আড়াই বছরে সিকান্দার বক্স সিরিজের সাতটি নাটক নির্মাণ করেছিলেন নির্মাতা সাগর জাহান। নাটকটি পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। নাটকে মোশাররফ করিমের বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানিয়া আহমেদ ও জুঁই করিম। নাটকের গল্পে মোশাররফ করিমের গায়ের রং কালো থাকে। বাস্তবে মোশাররফ করিম ও জুঁই করিম স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু নাটকে তারা দুজন ভাইবোন। এ সিক্যুয়ালটি নিয়ে একটি মজার ঘটনা হয়েছিল। ‘সিকান্দার বক্স’ নাটকের সিরিজ যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, এটা অনেক দর্শক কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি তখন। তাই নাটক নির্মাণ বন্ধ করলে সাগর জাহানকে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছিল অনেকে।

সর্বশেষ খবর