শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

তাহাদের চোখে হুমায়ূন

তাহাদের চোখে হুমায়ূন

গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ।

গল্প দিয়েই তিনি মানুষের মনকে নানাভাবে আলোড়িত করেছেন। গল্পে গল্পে জীবনের কথা বলেছেন, আনন্দ-বিষাদে ভাসিয়েছেন। এ কারণেই তিনি অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে উঠেছেন বাঙালি পাঠকের কাছে। বাঙালি মধ্যবিত্তের মুগ্ধতাকে, আনন্দ অশ্রুকে নতুন রূপ দিয়েছেন তিনি। অনাবিষ্কৃত বা অকথিত জীবনের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। পেয়েছেন জনমানুষের উপচে পড়া ভালোবাসা। আজ নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের সপ্তম প্রয়াণ দিবস। বিভিন্ন সময় তাকে পরম ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন তার কাছের মানুষেরা। তাদের সেই স্মৃতিকাতরতা তুলে ধরেছেন-  পান্থ আফজাল

 

 

গতকালকেই এটিতে একটি লাশ ক্যারি করা হয়েছিল

: আলী যাকের

বাঙালির জীবনকে নিবিষ্টভাবে হুমায়ুন দেখতেন। মামা চরিত্রটি করতে গিয়ে জোকারি চরিত্র দেখে বিরক্ত হয়ে বলি, কি করছেন আমারে! জোকার বানাইছেন। সবাই দেখলে শুধু হাসবে! তিনি বলেন, ‘যাকের ভাই, বলেন তো কোন বাঙালি পরিবারে এরকম একটা মামা নাই? নাটকের দৃশ্যে কফিন থেকে উঠলে তিনি মজা করে বললেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ যাকের ভাই! শর্টটি অনেক ভালো হয়েছে। তবে একটা কথা বলতে চাচ্ছি, গতকালকেই এটিতে একটি লাশ ক্যারি করা হয়েছিল।’

 

 

 

স্ক্রিপ্টটার ওপরে লিখে দিতেন, এই চরিত্রটা হায়াত ভাইয়ের

: আবুল হায়াত

একসময় আমার সঙ্গে তার অনেক ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমি তার এখনো ভক্ত। তাকে চিনি ৮৪-৮৫ সাল থেকে। তখন তার লেখা ‘প্রথম প্রহর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেছিলাম। আমার অভিনয় দেখে তার ভালো লেগেছিল বলেই যে নাটকই লিখতেন সেখানে আমার একটা চরিত্র থাকত। এবং সেই স্ক্রিপ্টটার ওপরে লিখে দিতেন, এই চরিত্রটা হায়াত ভাইয়ের। কিন্তু একসময় দেখলাম তার চারপাশে প্রচুর চাটুকার জমে গেছে। এরপর আস্তে আস্তে আমি সরে আসি।

 

 

 

হুমায়ূন ভাইয়ের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি

: সারা যাকের

হুমায়ূন ভাইয়ের বিকল্প তৈরি হয়নি। তখন যিনি যে নাটকই বানিয়েছেন তার মধ্যে অনেক মেসেজ থাকত। তিনি গল্প এত সুন্দর নির্মাণ করতেন যে, মেসেজনির্ভর নাটক সবাই গোগ্রাসে গিলত। তিনি নিজের ইচ্ছায় যে নাটকগুলো লিখতেন সেগুলো ছিল অসাধারণ! তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। এখনো শ্রিয়া তার নাটকের ‘হিজিবিজি, হিজিবিজি’ সংলাপ বলে। শ্রিয়া তো অনেক ছোট ছিল, ২-৩ বছর বয়স তখন; তার তো মনে থাকার কথাও না!

 

 

 

হুমায়ূন আমার জীবনে প্রচণ্ড একটা কষ্টের নাম

: জুয়েল আইচ

তিনি ছিলেন অত্যন্ত কাছের, বন্ধুর মতো। সুযোগ পেলেই তার বাসায় চলে যেতাম। আড্ডা দিতে দিতে সময় পার হয়ে যেত। যখন যা মনে চাইত তাই করতেন। তিনি আমাকে নিয়ে একটি নাটক লিখেছিলেন। আমি অভিনয়ও করেছিলাম। হুমায়ুন আমার জীবনের জন্য প্রচন্ড একটা কষ্টের নাম। একেবারে কলিজার লোক ছিলেন তিনি। বিচিত্র রকমের মানুষের সঙ্গে তার পরিচয়। কাছে ডাকতেন, মজা করতেন। প্রতিদিন আড্ডার প্রোগ্রাম করতেন। তার লেখা স্ক্রিপ্টও থাকত সেখানে। তিনি কীভাবে মজা করবেন, তার পরিকল্পনা করে রাখতেন।

 

 

ছবি মুক্তির পর সবাই তো আপনাকে ছি. ছি. করবে

: তারিক আনাম খান

তার প্রথম দিককার কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। তারপর কিছু কারণে তার সঙ্গে সৃষ্টি হয় অভিমান এবং দূরত্ব। তিনি মনে করতেন, অভিনয়টা আমি ভালো জানি না। তবে তার শেষ কাজ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র সেই জমিদার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একদিন ডাকেন। শুটিংয়ের সময় মজা করে বললেন, ‘এ ছবিতে অভিনয় করতে আসলেন ক্যান? ছবি মুক্তির পর সবাই তো আপনাকে ছি. ছি. করবে। কেউ তো আপনার পাশে বসবেও না, হা হা হা।’

 

 

 

চিকামারো গানটি আমার মেজাজে গাইতে বললেন

: সেলিম চৌধুরী

তার দুটি নাটকে অভিনয় করেছি- ‘প্যাকেজ সংবাদ’ ও ‘সমুদ্র বিলাস’। অভিনয় করাটা তার ইচ্ছায়। তখন ছিল প্যাকেজ নাটকের হিড়িক। তাই এই বিষয়টি নিয়ে স্যাটারধর্মী নাটক করতে চাইলেন। বিষয়টি নিয়ে একটি ক্যারিকেচার গান গাইতে বললেন, ‘এই চিকামারো গানটি তোমার মেজাজে না গেয়ে একটু ফানি করে গাও। তুমিও অভিনয় করবে; নাচানাচি করে গানটি করবে।’ আমি কাঠমুলার কোম্পানির ড্রেস-সানগ্লাস পরে চিকামারো গানটি করলাম।

 

 

 

বৃষ্টিতে ভিজতে স্যার অনেক পছন্দ করতেন

: ডা. এজাজ

নির্মাণের নানা কাজেও স্যার আমার ওপর ভরসা রাখতেন। শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় দেখি স্যারের ঠিক করা লোকেশনে গিয়ে শুটিং করা সম্ভব নয়। কিন্তু ‘স্যার’কে বলতেও পারছিলাম না ব্যাপারটা। তাই তাকে দুশ্চিন্তায় না ফেলে মুহূর্তের মধ্যেই শুটিং  লোকেশন ঠিক করে ফেলি। আমার কাজে অবাক হয়ে স্যার তখন ‘গুড জব ডাক্তার’ বলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাহবা দিয়েছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজতে স্যার অনেক পছন্দ করতেন। স্যারকে খুশি করা খুব সহজ ছিল।

 

 

 

বিদেশ থেকে আনা লাখ টাকার ফুলদানি ভাঙবেনই

: ফারুক আহমেদ

স্যার ছিলেন খুবই মজার মানুষ। যখন যা করতে ইচ্ছা হতো তাই করতেন। আজ রবিবার নাটকের একটি দৃশ্য ছিল ফুলদানি ভাঙার। দৃশ্যটি করতে দামি ফুলদানির দরকার ছিল, যা কেউ ম্যানেজ করতে পারেনি। স্যার গুলতেকিনকে ডেকে বিদেশ থেকে আনা লাখ টাকার ফুলদানিটা নিয়ে আসতে বললেন। স্যারের স্ত্রী বুঝতে পেরে অনেক অনুনয় শুরু করলেন। স্যার মানছেনই না, ভাঙবেনই! তবে শেষ পর্যন্ত স্যারের মন গলে। আরেকটি ফুলদানি ভেঙে দৃশ্যটি করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর