সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

টালিগঞ্জ মাতানো এ সময়ের ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

টালিগঞ্জ মাতানো এ সময়ের ছবি

হিন্দি, তামিল, তেলেগু ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গিয়ে কলকাতার বাংলা ছবি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শক্ত ভিতের ওপর। বর্তমান সময়ের জিৎ আর দেব, তার আগের নায়ক প্রসেনজিৎ, রঞ্জিত মল্লিক আর পঞ্চাশ দশকে আসা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ অভিনেতা এখনো তাদের রাজত্ব টিকিয়ে রেখেছেন টালিগঞ্জে। ২০০০ সালের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এসব অভিনেতার বেশকিছু ছবি এর প্রমাণ দেয়। যেমন- বেলাশেষে (সৌমিত্র, প্রসেনজিৎ), বিসর্জন (জয়া আহসান), বাদশাহ আর বস  টু (জিৎ), পোস্ত ও প্রাক্তন (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়), জুলফিকার (প্রসেনজিৎ, দেব),  রাজকাহিনী (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও জয়া আহসান), অটোগ্রাফ, মনের মানুষ, নৌকাডুবি, বাইশে শ্রাবণ, মিসর রহস্য, জাতিস্মর, শঙ্খচিল, ইয়েতি অভিযান, ওয়ান (প্রসেনজিৎ), বোঝে না সে বোঝে না (সোহম, মিমি) ইত্যাদি। ২০১৪ সাল থেকে ঢাকার নায়ক শাকিব খানকে নিয়ে যৌথ আর স্থানীয়ভাবে সেখানে নির্মিত হয় শিকারি, নবাব, ভাইজান এলোরে, চালবাজ, নাকাবসহ কয়েকটি ছবি। সেগুলোও সেখানে সাড়া জাগায়। টালিগঞ্জে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন সবেচেয়ে খ্যাতিমান পরিচালক। ১৯৮০ সালে উত্তমের প্রয়াণের পর টলিপাড়া দর্শকখরায় পড়ে। সাড়া জাগানো অভিনয়শিল্পী আর নির্মাতার অভাবে সিনেমা হলবিমুখ হয় দর্শক। দীর্ঘ এই খরার কবলে পড়ে টলিপাড়া যখন প্রায় বন্ধের পথে তখনই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বপন সাহা নব্বই দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসাসফল প্রচুর ছবি রিমেক করেন এবং সৌভাগ্যক্রমে স্বল্প বাজেটের এই ছবিগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে যায়। যেমন- ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘নয়নের আলো’, ‘প্রেমের প্রতিদান’, ‘বাবা কেন চাকর’সহ আরও অনেক ছবি। ফেরদৌস, অঞ্জু ঘোষসহ অনেক অভিনয়শিল্পী কলকাতায় গিয়ে অভিনয়ও করেন। তবে উত্তম কুমারের প্রয়াণের প্রায় ৭ বছর পর ১৯৮৭ সালে কলকাতার চলচ্চিত্রের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন দুই ব্যক্তিত্ব। এর মধ্যে একজন হলেন নির্মাতা অঞ্জন চৌধুরী আকেজন অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। এই জুটি ‘শত্রু’ ছবির সফলতা দিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘গুরু দক্ষিণা’সহ নব্বই দশকজুড়ে প্রচুর হিট ছবি উপহার দেন।

বর্তমানে কলকাতার ছবি নিয়ে সেখানেই যে অভিযোগটি কমবেশি শোনা যায় তা হলো কালের বিবর্তনে এখন প্রযুক্তির আধুনিকায়ন হয়েছে। বাজেট বেড়েছে। তবে কলকাতার ছবিতে শিল্পচর্চা বাড়েনি। শিল্পচর্চা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া ব্যবসার কথা মাথায় রাখতে হয় অর্থ লগ্নিকারীদের।

কলকাতার চলচ্চিত্র এখন দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি বাণিজ্যিক, দ্বিতীয়টি আর্টফিল্ম বা বিষয়ভিত্তিক ধারার চলচ্চিত্র। দর্শকও এখন এই দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। কেউ বাণিজ্যিক ছবি দেখছে। কেউবা বিষয়ভিত্তিক ছবি দেখছে। নির্মাতারা তাই নির্দিষ্ট শ্রেণির কথা মাথায় রেখে ছবি নির্মাণ করছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক ছবির অবস্থা খুব একটা সুখকর নয়। লগ্নিকৃত টাকা ফেরত পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে রিমেক ছবি নির্মাণকে দায়ী করছেন। প্রথমদিকে দক্ষিণ ভারতের রিমেক ছবি মোটামুটি চললেও এখন দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যার ফলে কলকাতার সিংহভাগ বণিজ্যিক ধারার ছবি ব্যবসায়িকভাবে লোকসানের মুখে পড়ছে। অনেক নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী রিমেকের এই ক্ষতির বিষয় অনুধাবন করতে পেরে সেখান থেকে সরে আসতে চাইছেন। চিত্রনায়ক দেব ঘোষণা দিয়েছেন আর রিমেক ছবি করবেন না তিনি।

বাণিজ্যিক ধারার ছবি থেকে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে আর্ট ফিল্ম। শহুরে দর্শকের কথা মাথায় রেখে নির্মিত এ ধরনের ছবিগুলো শহুরে দর্শকরাই দেখছেন। আর বর্তমানে কলকাতায় সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জাতীয় ছবির দর্শক সানন্দে এসব ছবি  দেখছেন। ‘বেলা শেষে’র পর সবশেষ ‘পোস্ত’র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। টানা ১০০ দিন প্রেক্ষাগৃহে চলেছে। এ ছাড়া ‘বিবাহ ডায়রিজ’ ছবির কথাও বলা যায়। এটিও ১০০ দিনের মতো চলেছে। এসব ছবির বাজেট খুব বেশি না হওয়ায় শহরের সিনেপ্লেক্সগুলোতে মুক্তির মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আর স্পন্সর, টেলিভিশন স্বত্ব তো রয়েছেই। এদিকে গত ঈদে কলকাতায় মুক্তি পাওয়া জিৎ অভিনীত ‘শুরু থেকে শেষ’ ছবিটিও ভালো ব্যবসা করেছে। এর আগে তার বাদশাহ, বস টু, সুলতানও হিটের তকমা পায়। অন্যদিকে, দেবের পাগলু, রোমিও, খোকাবাবু, চাঁদের পাহাড়, দুই পৃথিবী, চ্যাম্প, ককপিট, লাভ এক্সপ্রেস, সেহমের বোঝে না সে বোঝে না, ব্লাক বাণিজ্যিক ধারার ছবিগুলোও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

ফলে টালিগঞ্জ এখন বাংলা ছবির ব্যবসার দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলা যায়।

সর্বশেষ খবর