সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঈদ অনুষ্ঠানে নেই আগের সেই আমেজ

ঈদ অনুষ্ঠানে নেই আগের  সেই আমেজ
প্রতিবারের মতো এই ঈদেও টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রস্তুতি চলছে ভিন্ন স্বাদের বাহারি অনুষ্ঠান তৈরির। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, আগের মতো আদৌ কি মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে? নাকি ফরমায়েসি সব নাটক, রিয়েলিটি শো, সেলিব্রেটি আড্ডা-গান আর টিভি অনুষ্ঠান দিয়ে ভরপুর হচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলো? বিস্তারিত লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

আবার শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ। টিভি চ্যানেলে চ্যানেলে চলছে শুটিং ব্যস্ততা। কোরবানি ঈদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত টিভি প্রযোজক, নির্মাতাসহ নাটকের তারকারা। ভিন্নধর্মী ঈদের অনুষ্ঠান তৈরি করা নিয়ে ব্যস্ত নাগরিক, বাংলাভিশন, বিটিভি, বৈশাখী টিভি, এনটিভি, আরটিভি, দুরন্ত টিভি, একুশে, মাছরাঙা, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলাসহ প্রায় সব টিভি চ্যানেল। তবে দর্শকের অভিযোগ, আগের মতো বিনোদননির্ভর টিভি অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে না। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশীয় চ্যানেলে নেই আগের সেই উৎসবের আমেজ। তাদের মতে, বর্তমানে টিভি অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে যাচ্ছেতাইভাবে। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, কেন টিভি প্রযোজক, বিজ্ঞাপন এজেন্সি, চ্যানেল মালিক বা নাটক নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা পারছেন না দর্শকদের সঠিক মূল্যায়ন করতে? টিভির কোনো অনুষ্ঠানই এখন আর আগের মতো দর্শক ধরে রাখতে পারছে না, এটা কিন্তু সত্য! মানহীন টিভি অনুষ্ঠান দিয়ে সমস্যা থেকে উত্তরণ আসলেই সম্ভব নয়। তাহলে উপায় কি নেই? বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের বলেন, ‘এখন তো অনেক চ্যানেল! এত এত চ্যানেল হলে তো মান ধরে রাখা যায় না। দর্শকপ্রিয়তা আসলে আপেক্ষিক ব্যাপার। শিল্প-কারখানার মতো প্রোডাকশন হচ্ছে এখন। মান কি করে ভালো হবে? আমি মনে করি, প্রকৃত মেধা আর মান দিয়ে কোনো কিছু বানালে দর্শক তা দেখে।’ একই কথা বললেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। ‘টিভি চ্যানেলে যে সব উৎসবভিত্তিক অনুষ্ঠান হয়, তা কি আগের মতো হয়? দায়সারাগোছের কাজ হচ্ছে। আর এখনকার নাটকে বাবা থাকলে মা নেই আবার মা থাকলে বাবা নেই! তাই এসব নাটক দর্শকের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না।’ বিশিষ্ট নাট্যজন আবুল হায়াত নাটক বিষয়ে বলেন, ‘এখন তো নাটকই হচ্ছে চ্যানেলের ডিমান্ডে। এরা যেভাবে চাইছে সেভাবেই হচ্ছে। তাদের যদি বোধোদয় না হয় তাহলে কীভাবে ভালো কিছু হবে? যারা ভালো বানায়, তারা না বানালে ভালো কিছুই হবে না। প্রপারলি নাটক বানাতে হবে, প্রপার বাজেট হতে হবে; তাহলেই ভালো নাটক নির্মিত হবে। এক্ষেত্রে চ্যানেল-এজেন্সিগুলো যদি আরও বেশি সিরিয়াস হয়, তবে ভালো ভালো রোমান্টিক, কমেডি কিংবা সিরিয়াস ধারার নাটক আমরা পাব। আর নাটক প্রচারের আগে ঠিকমতো প্রিভিউ করতে হবে। খারাপ হলে ফেরত দিতে হবে।’ এদিকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী দিলারা জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘আগের সেই আমেজ কি আর আছে? আগে বিটিভিতে যে কোনো অনুষ্ঠান দেখতে দর্শক বসে থাকত। টিভি অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল উৎসব। এখন তা নেই। আর বাজেট স্বল্পতা দেখিয়ে টিভি নির্মাতারা দিন দিন চরিত্র কাটছাঁট করছেন। যেখানে সিনিয়র শিল্পী সংখ্যা নেই বললেই চলে।’ চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, ‘এসব উত্তরণের জন্য সবরকমের প্রোডাকশনই লাগবে। যেন সব কাজের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকে। তাহলে দর্শক বিমুখ হবেন না।’ তবে গিয়াসউদ্দিন সেলিম বললেন ভিন্ন কথা। ‘এই বিষয় নিয়ে অনেক বলেছি। মূল কথা হলো, বাজেট যদি ঠিকমতো পাওয়া না যায়, তাহলে আমরা ভালো কিছু আশা করি কীভাবে?’ এদিকে অমিতাভ রেজা দেশীয় চ্যানেলের নাটক নিয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু ভালো নাটক হচ্ছে। ভালো কাজ মানেই হলো ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়া। অবশ্যই বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক নাটক হওয়া উচিত। রোমান্টিক, কমেডি নাটক তো আর খারাপ নয়। কিন্তু নির্মাণ খারাপ হলে দর্শক তা পছন্দ করে না। আর বাজেট কিন্তু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গল্প খারাপ হলে, নির্মাণ খারাপ হলে নাটক খারাপ হতে বাধ্য। বাকিগুলো তেমন কোনো ফ্যাক্টর নয়।’ বিশিষ্টজন অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘টিভি চ্যানেলের কোনো কিছুই এখন আর তেমন করে মনোযোগ আকর্ষণ করে না। আগের নাটকের মতো এখনকার নাটকে তেমন পরিশীলিত গল্প-নির্মাণ নেই। একটা সময় মোস্তাফিজুর রহমান, বরকতউল্লাহ কি সুন্দর সুন্দর নাটক বানিয়েছেন! এখনকার নাটক ছ্যাবলামোতে ভরা। গল্পের বিষয়বস্তু হালকা, গভীরতা নেই।’ তবে এত হতাশার পরও যে কোনো উৎসবে বরাবরের মতো দর্শক এখনো টিভি সেটের সামনে বসে থাকে জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ দেখার জন্য। দর্শক ঈদ উৎসবে দেখে বিটিভির ‘আনন্দ মেলা’, এটিএন বাংলায় ড. মাহফুজুর রহমানের গান, চ্যানেল আইয়ের ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’সহ জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকানির্ভর বাংলা ছবি।

ভালো মানের যে কোনো টিভি অনুষ্ঠান বা নাটক দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে দর্শক। তাই মানের দিক থেকে আর আপস কেন?

সর্বশেষ খবর