বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছবি নেই এই ঈদে!

আলাউদ্দীন মাজিদ

ছবি নেই  এই ঈদে!

দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্মলগ্নের পর এবারই প্রথম ঈদের ছবি নিয়ে নেই কোনো উত্তাপ। ঈদের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। ছবি পাড়া ফাঁকা। পোস্টার ব্যানারের জৌলুস নেই ফিল্মপাড়া-খ্যাত কাকরাইল আর সিনেমা হলে। আগে ঈদের কমপক্ষে একমাস পূর্ব থেকেই ঝলমলে প্রচার-প্রচারণায় সরব থাকত চলচ্চিত্রাঙ্গন। সেই জৌলুসের রং এসে পড়ত দর্শকের মনে। দর্শক ঈদের ছবি দেখতে মুখিয়ে থাকত উৎসবের এ দিনটির জন্য। মুক্তি পেত উন্নতমানের তারকাবহুল একাধিক ছবি। গত রমজানের ঈদেও মুক্তি পেয়েছে তিনটি তারকাখচিত ছবি-পাসওয়ার্ড (শাকিব-বুবলী), নোলক (শাকিব-ববি) এবং আবার বসন্ত (তারিক আনাম-স্পর্শিয়া)। আর আসন্ন ঈদুল আজহায় মুক্তি পাচ্ছে তিনটি ছবি। এর মধ্যে রয়েছে শাকিব-বুবলী অভিনীত ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’, রোশান-ববির ‘বেপরোয়া’ ও শাকিল-অর্পার ‘ভালোবাসার জ্বালা’। প্রদর্শকদের মতে এসব ছবি নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নয় সিনেমা হল মালিকরা। তাদের মতে এর কারণ হলোÑ এই তিনটি ছবির মধ্যে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত শাকিব-বুবলীর ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’ ছবিটি ঈদের জন্য তাড়াহুড়া করে স্বল্প সময়ে নির্মাণ করায় এর মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এটিকে বিগ বাজেট ও অ্যারেঞ্জম্যান্টের ছবি বলা যায় কিনা তা ছবিটি মুক্তির পরই বোঝা যাবে। অন্যদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ও কলকাতার নির্মাতা রাজা চন্দের বেপরোয়া ছবিটি মহরত হয় ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট। কথা ছিল ছবিটি ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে এটি মুক্তি পাবে। কিন্তু ছবিটির নির্মাণ কাজ যথাসময়ে শেষ হলেও নানা জটিলতায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে এটি মুক্তি দিতে পারেনি। এই ঈদে প্রায় ৮০টি সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। প্রদর্শকদের কথা হলোÑছবির নায়ক রোশান এখনো দর্শকদের মনে নায়ক হিসেবে শতভাগ স্থান করে নিতে না পারায় এখন দেখার বিষয় ঈদে দর্শক ছবিটি কতটা গ্রহণ করে। সর্বশেষ নতুন নির্মাতা বশির আহমেদের নির্মাণে অচেনা মুখ শাকিল খান ও অর্পা অভিনীত ‘ভালোবাসার জ্বালা’ ছবিটিকে কোনোভাবেই ঈদের ছবি বলা যায় না বলে প্রদর্শকদের অভিমত। তাই ছবিটি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে সিনেমা হল মালিকরা।

প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিনে দিনে দেশীয় চলচ্চিত্র যেভাবে তার কৌলিন্য হারাচ্ছে তাতে আমরা সিনেমা হল মালিকরা এই ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত। আগে ঈদের ছবির মান ও মুক্তি নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত নির্মাতাদের মধ্যে। প্রচুর ছবি ঈদে মুক্তির জন্য নির্মাণ হতো। এই অবস্থা এখন আর নেই। নির্মাতারা নানা কারণে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ হারিয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে পর্যাপ্ত ও মান সম্মত ছবি পাওয়া যায় না। এ কারণে আমরা প্রদর্শকরা উপমহাদেশীয় ছবি আমদানি করে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিবার নিজেরাও মানসম্মত এবং পর্যাপ্ত ছবি নির্মাণ করবে না আবার বিদেশি ছবি আমদানিও করতে দেবে না। এতে ছবির অভাবে নব্বই দশকের শেষভাগে সারা দেশে থাকা প্রায় ১৩শত সিনেমা হল এখন ১৫০ এর কোঠায় নেমে এসেছে। এর আগে স্বাভাবিক সময়ে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত দেশীয় ছবি পাওয়া না গেলেও অন্তত দুই ঈদে তা পাওয়া যেত। এখন তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছবির অবস্থা দেখলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ঈদুল ফিতরেও একই অবস্থা ছিল। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র শিল্পের অস্তিত্ব অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।

এদিকে সিনেমা হল মালিকরা নির্মাতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছেন, ‘প্রচারেই প্রসার’ এই প্রাচীন ও মূল্যবান প্রবাদটি এখনকার নির্মাতারা আমলে নেন না বলেই ছবির প্রতি দর্শক আগ্রহ আর নেই। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত পত্রিকা, রেডিও, টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ, মাইকিং, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে অলিগলি রাজপথ প্রদক্ষিণ, রাস্তায় রাস্তায় দৃষ্টিনন্দন পোস্টার ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানোসহ নানা জমকালো আয়োজনে ছবির প্রচার চলত। এতে ছবি দেখার জন্য স্বাভাবিকভাবেই দর্শক আগ্রহ বাড়ত। সিনেমা হল মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, আগে একাধিক নামি দামি তারকার ছবি একসঙ্গে ঈদে মুক্তি পেত। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে বিশেষ করে উৎসবে ঘুরে ফিরে একই মুখ দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে দর্শক। ফলে এটিও দেশীয় সিনেমার প্রতি দর্শক আগ্রহ নষ্টের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এতে করে শুধু স্বাভাবিক সময় নয়, ঈদেও উত্তাপ হারাচ্ছে ছবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর