শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানিকগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে যাত্রা

মো. কাবুল উদ্দিন খান

মানিকগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে যাত্রা

মানিকগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য জনপ্রিয় বিনোদন যাত্রাপালা। একসময় মানিকগঞ্জে বিশটির অধিক যাত্রার দল ছিল। এই যাত্রাপালাকে কেন্দ্র করে জেলায় প্রায় এক হাজার পরিবারের কর্মসংস্থান ছিল। কালের বিবর্তনে এখন জেলায় একটি যাত্রাদলেরও অস্তিত্ব নেই। ফলে এ পেশার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ লোক বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন পেশায় কর্মসংস্থান করে নিয়েছেন। জানা যায়, একসময় সারা দেশে প্রায় দুইশটি যাত্রার দল ছিল। এরমধ্যে মানিকগঞ্জেই ছিল ছোট-বড় বিশটির মতো। জনপ্রিয় নায়িকা অরুণা বিশ্বাসের বাবা অমলেন্দু বিশ্বাসের চয়নিকা নাট্যগোষ্ঠী, গণেশ ঘোষের গণেশ অপেরা, শুকুমার কর্মকারের নবপ্রভাত অপেরা, সত্যনারায়ণ অপেরা, প্রগতি অপেরা, কাকলী অপেরা ছিল মানিকগঞ্জ তথা দেশের অন্যতম যাত্রাদল। যাত্রাশিল্পে শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের অনেকের বাড়ি মানিকগঞ্জে। (নায়ক-নায়িকা) দেশসেরা জুটি ছিল মানিকগঞ্জের সুলতান সেলিম ও রিক্তা সুলতানা।  দেশের অন্যতম ভিলেন ছিলেন মানিকগঞ্জের দাশরার আবুল কালাম আজাদ। যাত্রায় বিবেকের চরিত্রটি ছিল অপরিহার্য। ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকার বলাই সরকার ও উপেন সরকার দুই ভাইয়ের  বিবেকের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যেত সবাই।

কালের বিবর্তনে আমাদের দেশের যাত্রাদলগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এ পেশার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ লোক বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন পেশায় কর্মসংস্থান করে নিয়েছেন। জানা যায়, একসময় সারা দেশে প্রায় দুইশটি যাত্রার দল ছিল। এরমধ্যে মানিকগঞ্জেই ছিল ছোট-বড় বিশটির মতো।

নিয়মিত যাত্রার দর্শক ছিলেন শহরের আবদুল মোন্নাফ ও কামরুদ্দিন রেজা। তারা বলেন যাত্রাই ছিল আমাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। যাত্রার কাহিনি দেখে আমরা জীবনের সঙ্গে মিলাতাম। সেই সময়ের মা-মাটি-মানুষ, সিঁদুর নিও না মুছে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, নিচু তলার মানুষ, রূপবান, বেদের মেয়ে জোসনাসহ অসংখ্য যাত্রাপালার কাহিনি আজো আমাদের মনে দাগ কেটে রয়েছে। তারা আরও বলেন আমরা রাতে যাত্রা দেখতাম। দিনে কাজের মধ্যে সেই যাত্রার বিষয় নিয়ে আলাপ করে সময় কাটিয়ে দিতাম। আবার যাত্রা এ দেশে ফিরে আসুক এই আমাদের প্রত্যাশা। যাত্রার নাচের মাস্টার ঘিওরের রঞ্জিত কুমার ধর বলেন ১৯৬০ সালে কুমিল্লার জয়দুর্গা অপেরার মাধ্যমে যাত্রাদলে প্রবেশ তার। ১৮টি যাত্রাদলে তিনি নাচ শিখানোর দয়িত্ব পালন করেছেন। যাত্রাশিল্প ধ্বংস হওয়ায় তিনি বেকার হয়ে পড়েন। এখন তিনি জাবরা বাজারে চায়ের দোকান করে জীবন চালাচ্ছেন। অভিনেতা চানমিয়া (৬৫) বলেন  যাত্রায় অশ্লীল নৃত্যের জন্য দর্শক হারিয়ে গেছে। যাত্রার অন্যতম নায়ক, পরিচালক, যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান সেলিম বলেন, ১৯৯০ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় প্রশাসন যাত্রার অনুমতি বন্ধ করে দেয়। অনুমতি না পাওয়ার কারণে যাত্রার দলগুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে থাকে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যাত্রাপালা করার অনুমতি দেয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি প্রদানে আগের অবস্থান ধরে রাখে। শুধু অনুমতি না পাওয়ার কারণে দেশের ঐতিহ্য জনপ্রিয় যাত্রাপালা  দেশ থেকে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে বেকার হয়ে গেল হাজার হাজার মানুষ। দেশ হারালো তার ঐতিহ্য। সুলতান সেলিম ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করে আজও সবার হৃদয়ে অবস্থান করছেন। মুক্তিযোদ্ধা, যাত্রার নায়ক সুলতান সেলিম যাত্রাশিল্পকে রক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে আবার যাত্রাশিল্পকে ফিরিয়ে আনবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

সর্বশেষ খবর