শিরোনাম
সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ মুক্তি দেব

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সাংবাদিক সাহিত্যিক জহির রায়হানের ৮৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বের জন্মদিনে তাকে নিয়ে কথা বলেছেন তারই সহধর্মিণী চলচ্চিত্রকার সুচন্দা। তার বলা কথা তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ মুক্তি দেব

স্বাধীন দেশে জহির রায়হানকে হারালেন, কী বলবেন-

উফ্ (দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, চোখের কোণে পানি জমে উঠেছে) যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যদি জহির রায়হান নিখোঁজ হতেন বা মারা যেতেন তাহলে মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতে পারতাম যে, যুদ্ধে হারানোটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাধীন দেশে কেন তাকে নিরুদ্দেশ হতে হলো? অন্য কোনো বুদ্ধিজীবী তো শত্রুমুক্ত দেশে নিখোঁজ হননি। মনে হয় এর পেছনে দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র অবশ্যই ছিল। স্বাধীন শত্রুমুক্ত একটি দেশে এ ধরনের একজন মানুষকে হারানোর বেদনা কোনোভাবেই প্রশমন করা যায় না। নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষাও থাকে না। আমার আজীবনের একটি আফসোস, স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে জহির রায়হানকে হারালাম।

 

চলচ্চিত্রকার হিসেবে জহির রায়হানের মূল্যায়ন নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

না, এক কথায় মোটেও নয়, জহির রায়হান নির্মিত ছবিগুলো মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট নিয়ে নিল। ছবিগুলোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় বহুবার গেলাম। কেউ ছবিগুলো বা এর জন্য একটি পয়সাও দিল না। শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিল। অনেকের কাছে অপ্রিয় হলাম। বড় কষ্ট হয়, জহির রায়হানের সম্পদ তার উত্তরাধিকাররা কেন পাবে না। জীবনভর শুধু যুদ্ধই করে গেলাম। সুখ শান্তির দেখা পেলাম না। নিজ দেশে জহির রায়হানের কোনো মূল্যায়ন হলো না। ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় একবার জহির রায়হানের পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন ‘তোমার মতো মেধাবী একজন মানুষের জন্ম ভারতে কেন হলো না।’

 

জহির রায়হানের স্মৃতি রক্ষায় আপনার কোনো উদ্যোগ ছিল?

তার স্মৃতি রক্ষায় পারিবারিকভাবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না কখনো। নানা প্রতিকূলতায় সেই চেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। ওই যে বললাম তার ছবি নিয়ে গেল। তাছাড়া তাকে নিয়ে তেমনভাবে কিছুই করা হয়নি আজ পর্যন্ত। তাকে নিয়ে আজও অনেকে ব্যবসা করতে চায়, তার কাজকে নিজের কাজ বলে অপপ্রচার চালায়। এটি দুঃখজনক। এতদিন এসবের প্রতিবাদ করিনি। এখন আর চুপ করে থাকব না। সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেনের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেমন হাস্যকর জহির রায়হানের বেলাতেও তাই। তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল কর্মের অধিকারী একজন মানুষ। তার নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করব। তার অসমাপ্ত ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। ছবিটির ডাব

করা বাকি আছে শুধু। এই কাজটি সম্পন্ন করে ছবিটিকে আলোর মুখ দেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে জহির রায়হানকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি। তাছাড়া জহিরের কালজয়ী উপন্যাস ‘বরফ গলা নদী’সহ অন্যান্য রচনার চলচ্চিত্রায়ণের পরিকল্পনা রয়েছে আমার।

 

জহির রায়হানকে ঘিরে কোন স্মৃতি এখনো মনকে ভাবায়?

জহিরের সঙ্গে ঘর বাঁধার ৫ বছরের মাথায়  দেশে শুরু হয়ে গেল মুক্তির সংগ্রাম।

একদিকে মুক্তিযুদ্ধ অন্যদিকে আমার জীবনযুদ্ধ। কোলের শিশুদের নিয়ে জহিরের সঙ্গে আমিও দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ৯ মাসের অবর্ণনীয় ঝড়ো হাওয়ার পর একসময় পূর্ব আকাশে স্বাধীনতার সূর্য উঠল। স্বাধীন দেশে আবারও জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি আমি। মানে জহিরকে হারালাম। তারপর ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু আবার, বুকের মাঝে কষ্টকে ছাই চাপা দিয়ে হাসি মুখে যুদ্ধ করে যাচ্ছি এখনো। (আবারও দীর্ঘ নিঃশ্বাস)।

 

জহির রায়হানের জন্মদিনকে ঘিরে আজকের কর্মসূচি কী                                                     ?

হ্যাঁ, পারিবারিকভাবে মিলাদ ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জহির রায়হানকে স্মরণ করব। এখনতো চলচ্চিত্রের বা অন্য কোনো অঙ্গনের মানুষ জহিরকে নিয়ে তেমনভাবে ভাবার চিন্তাও করে না। এটি শুধু তার পরিবারের দুঃখ নয়, এক কথায় একটি

জাতির লজ্জা।

সর্বশেষ খবর