শিরোনাম
বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

গান দিয়েই যেসব ছবি হিট

আলাউদ্দীন মাজিদ

গান দিয়েই যেসব ছবি হিট

একসময় চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনে বলা হতোÑ ‘আসিতেছে গানের ছবি, প্রাণের ছবি...’, মানে নির্মাতারা ছবি হিট করার জন্য গল্পের পাশাপাশি গানকে প্রাধান্য দিতেন আর এর সুফলও পেতেন। মানে গানের জোরেই ছবি হিট হয়ে যেত। এমন উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। যেমন- ১৯৫৬ সালে এ দেশে সবাক বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলে ১৯৬০ সালে এহতেশাম নির্মিত ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির একটি গান কে জি মোস্তফার কথায় ও তালাত মাহমুদের কণ্ঠে ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’, শবনম-রহমান জুটির ছবিটির এই গানটি এতটাই দর্শক-শ্রোতার মন কেড়েছিল যে, কথিত আছে গানটি শোনার জন্যই দর্শক একাধিকবার ছবিটি দেখতে হলে গিয়েছিল। ফলাফল ছবি সুপার হিট। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক অনুপম হায়াতের কথায় গান হচ্ছে ছবির অন্যতম অনুষঙ্গ। যেহেতু চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি প্রধান বিনোদন মাধ্যম তাই দর্শকদের বিনোদিত করতে মার্জিত ও মনকাড়া কথায় চমৎকার সুরে গান তৈরি করতে হবে। তাহলেই দর্শক ছবিতে মনের মতো গান পেয়ে বার বার ছবিটি দেখবে এবং ছবিটি সফলতা পাবে। আগে নামকরা সব গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক আর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। যেমন- কে জি মোস্তফা, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ জামান চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, খান আতাউর রহমান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রমুখ গীতিকার। আর সংগীত পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন- সুবল দাস, সত্য সাহা, আলম খান, শেখ সাদী খান, আনোয়ার পারভেজ, আবু তাহের, মনসুর আলী, আলী হোসেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, আজাদ রহমান, আলাউদ্দীন আলী প্রমুখ। কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম হলেন- খন্দকার ফারুক আহমেদ, আবদুল আলীম, মাহমুদুন্নবী,  ফেরদৌসী রহমান, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শাম্মী আখতার, আবিদা সুলতানা, সালমা সুলতানা, দিলরুবা খান, খালিদ হাসান মিলু, এন্ড্রু কিশোর, কনকচাঁপা প্রমুখ। এসব ছাড়াও আরও অনেক সুরকার, সংগীত পরিচালক, কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা আর গবেষণার ফসল ছিল একটি হিট গান। একটি তৈরিতে কয়েক মাস সময় লেগে যেত। এখন সেই অবস্থা নেই বলে গানও হিট হয় না, ছবিও দর্শক দেখে না।

গান দিয়েই যেসব ছবি হিট হয়েছে এমন তালিকার মধ্যে রয়েছে- ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’ (সুতরাং, ১৯৬৪), ‘ও দাইমা কিসের বাদ্য বাজে গো’ (রূপবান, ১৯৬৫), ‘ও সাত ভাই চম্পা জাগোরে’ (সাত ভাই চম্পা, ১৯৬৮), ‘অনেক সাধের ময়না আমার’ (ময়নামতি, ১৯৬৯), ‘নীল আকাশের নীচে আমি’, ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ (নীল আকাশের নীচে, ১৯৬৯), ‘পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’ (পিচঢালা পথ, ১৯৭০), ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ (জীবন থেকে নেয়া, ১৯৭০), ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ (স্বরলিপি, ১৯৭০), ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’ (নাচের পুতুল, ১৯৭১), ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এই গান’ (অশ্রু দিয়ে লেখা, ১৯৭২), ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ (অবুঝ মন, ১৯৭২), ‘সে যে কেন এলো না কিছু ভালো লাগে না’, ‘হই হই হই রঙিলা’ (রংবাজ, ১৯৭৩), ‘ও অনুপমা ও নিরূপমা’ (জিঘাংসা, ১৯৭৩), ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কেন সৈকতে পড়ে আছি’ (আলো তুমি আলেয়া, ১৯৭৫), ‘ভালোবাসার মূল্য কত’ (এপার ওপার, ১৯৭৫), ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা’, ‘গুন গুন গুন গান গাহিয়া নীল ভ্রমরা যায়’ (সুজন সখী, ১৯৭৫), ‘ও প্রাণের রাজা’ (বাদশা, ১৯৭৫), ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’ (প্রতিনিধি, ১৯৭৬), ‘চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা’ (সূর্যকন্যা, ১৯৭৬), ‘ও আমার রসিয়া বন্ধুরে’, ‘মাগো মা ওগো মা’ (সমাধি, ১৯৭৬), ‘ইশারায় শিষ দিয়ে আমাকে ডেক না’ (বন্দিনী, ১৯৭৬), ‘চুল ধইর না খোঁপা খুলে যাবে যে নাগর’, ‘নানী গো নানী’ (নয়নমণি, ১৯৭৬), ‘আয়রে মেঘ আয়’, ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’ (দ্য রেইন, ১৯৭৬), ‘মা তোর কান্না আমি সইতে পারি না’ (আগুন, ১৯৭৬), ‘মেঘ থম থম করে’, ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’ (সীমানা পেরিয়ে, ১৯৭৭), ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’ (অনন্ত প্রেম, ১৯৭৭), ‘তোমার এই উপহার আমি চিরদিন’ (পিঞ্জর, ১৯৭৭), ‘যাদু বিনা বাঁশি বাজিতে পারে না’ (যাদুর বাঁশি), ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে’ (সোহাগ, ১৯৭৮), ‘একটুস খানি দেখ একখান কথা রাখ (বধূ বিদায়, ১৯৭৮), ‘ওরে নীল দরিয়া’ (সারেং বৌ, ১৯৭৮), ‘আছেন আমার মোক্তার’, ‘হায়রে কপাল মন্দ’ (গোলাপী এখন ট্রেনে, ১৯৭৮), ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’, ‘ঢাকা শহর আইস্যা আমার’ (অশিক্ষিত, ১৯৭৮), ‘পিরিতি পিরিতি’ (ফকির মজনু শাহ, ১৯৭৮), ‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি’ (অনুরাগ, ১৯৭৯), ‘দিন যায় কথা থাকে’ (দিন যায় কথা থাকে, ১৯৭৯), ‘তুমি আরেকবার আসিয়া’ (নদের চাঁদ, ১৯৭৯), ‘আমার নায়ে পার হইতে’ (মাটির ঘর, ১৯৭৯), ‘চিঠি আসবে জানি আসবে’ (আরাধনা, ১৯৭৯), ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী,’ ‘একদিন ছুটি হবে’ (ছুটির ঘণ্টা, ১৯৮০), ‘তোমাকে পেয়ে আমি সোহাগিনী’ (বৌরানী, ১৯৮০), ‘এই নীল মণিহার’ (ঘুড্ডি, ১৯৮০), ‘তোমারই পরশে’ (অংশীদার, ১৯৮১), ‘ওই রাত ডাকে আর চাঁদ জাগে আজ তুমি কোাথায়’ (কাজল লতা, ১৯৮২), ‘এমনো তো প্রেম হয়’ ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’ (দুই পয়সার আলতা, ১৯৮২), ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ (বড় ভালো লোক ছিল, ১৯৮২), ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ (বদনাম, ১৯৮৩), ‘হারজিত চিরদিন থাকবে’ (পুরস্কার, ১৯৮৩), ‘আমি চাঁদের সাথে দেব না তোমার তুলনা’ (আশীর্বাদ, ১৯৮৩), ‘তুমি আমার মনের মাঝি’ (ঝিনুকমালা, ১৯৮৩), ‘চুপি চুপি বল কেউ জেনে যাবে’ (নিশান, ১৯৮৬), ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ (সারেন্ডার, ১৯৮৭), ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’ (বেদের মেয়ে জোসনা, ১৯৮৭) প্রভৃতি। এ ছাড়া নব্বই দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেসব গান সাড়া জাগিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো- ‘আমার মতো এত সুখী নয়তো কারও জীবন’ (বাবা কেন চাকর, ১৯৯৪), ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ (আনন্দ অশ্রু, ১৯৯৪), ‘এই দিন সেই দিন চিরদিন’ (স্বপ্নের ঠিকানা, ১৯৯৫), ‘আয়না তুমি মোর হৃদয়ের আয়না’ (হৃদয়ের আয়না, ১৯৯৫), পড়ে না চোখের পলক (প্রাণের চেয়ে প্রিয়, ১৯৯৬), ‘আমি নিঃস্ব হয়ে যাব’ (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী, ২০১৩), ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ (সত্তা, ২০১৪) ইত্যাদি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর