বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিনেমা হলে নতুন মেশিন আছে ছবি নেই

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হলে নতুন মেশিন আছে ছবি নেই

দেশের সিনেমা হলগুলোতে সম্প্রতি নতুন প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম আর সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রদর্শকরা সন্তুষ্ট হলেও তারা বলছেন শুধু মেশিন দিয়ে কি হবে, ছবি কোথায়? আমরা তো লোকসানেই রয়ে গেলাম। ছবির অভাবে তো সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা যাবে না।

প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলছেন, শাকিব খান সিনেমা হলগুলোতে নতুন মেশিন দিয়েছেন আর মেশিন ভাড়াও জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে কম। এটি প্রদর্শকদের জন্য ইতিবাচক দিক। কিন্তু ছবি কোথায়? চলতি বছর এ পর্যন্ত প্রায় ২৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এ সংখ্যা একদিকে যেমন স্বল্প তেমনি ছবিগুলোও মানসম্মত নয়। এর মধ্যে আবার আমদানি করা কলকাতার বাংলা ছবিও রয়েছে বেশ কটি। এই ২৭টি ছবির মধ্যে একটি মাত্র ছবি দিয়ে সিনেমা হল মালিকরা আয়ের মুখ দেখেছেন। আর সেটি হলো শাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’। গত ঈদুল ফিতরে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। বছরে যদি মাত্র দুই-একটি ছবি থেকে আয় হয় তা হলে সারা বছর সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিভিন্ন বিল, কর- এসব কীভাবে বহন করা হবে। এভাবে চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশে যে বাকি প্রায় ১৭০টি সিনেমা হল রয়েছে সেগুলোও তো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এর ওপর প্রযোজক সমিতি বলছে তারা মেশিন ভাড়া দেবে না। যদি তাই হয় তা হলে তাদের ফিনিশড প্রোডাক্ট দিতে হবে। সিনেমা হল মালিক প্রজেক্টর ভাড়াও দেবে আবার ছবিও কিনবে তা তো হয় না। প্রয়োজনে সিনেমা হল মালিকরাই প্রজেক্টর কিনে বসাবে। তার আগে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে প্রযোজককে। আমি চাই প্রদর্শক ও প্রযোজক, উভয়পক্ষ মিলে বিষয়টির সুরাহা করা উচিত।

এদিকে, প্রযোজক, পরিচালক ও প্রদর্শক সমিতির খবর অনুযায়ী মাত্র একডজনের মতো ছবির নির্মাণ কাজ চলছে। তাও আবার অনিয়মিত। আর এসব ছবির দুই-একটি ছাড়া বাকিগুলো স্বল্প বাজেটের। এ ধরনের ছবি নির্মাণ করে লাভ নেই কারণ দর্শক তা দেখে না। সূত্র জানায়, যে নায়কের ওপর নির্ভর করে দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হল টিকে আছে সেই শাকিব খানের হাতেই এখন পর্যাপ্ত ছবি নেই। তার দুটি ছবির কাজ শেষ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে তা পড়ে আছে। এগুলো হলো- ‘শাহেনশাহ’ ও ‘একটি প্রেম দরকার’। আর এখন একটি মাত্র ছবিতে তিনি কাজ করছেন। এটি হলো বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘আগুন’। মানে ছবির খরায় ভুগছে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প।

এদিকে, প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম বৈঠক হয়ে গেল গত রবিবার। এতে সমিতির নতুন সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু জোর দিয়ে বলেছেন, সিনেমা হলে সিনেমা দেখানোর প্রজেকশন  মেশিনের ভাড়া এখন থেকে আর প্রযোজকরা দেবেন না। হল মালিকরা দেবেন। তিনি আরও বলেন, প্রজেকশন মেশিনের ভাড়া প্রযোজকরা দেবেন না, সিনেমার টিকিটপ্রতি তিন টাকা কমিশন বাদ দিতে হবে, ই-টিকিটিং সেবা চালু করতে হবে, পুরনো প্রযোজক ফিরিয়ে আনতে হবে, হলসংখ্যা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নিতে হবে।  চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে বৈঠকে প্রাথমিক একটি খসড়া তৈরি করা হয়। প্রাথমিক ওই খসড়া নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, সিনেমা হলের ব্যবসা যেহেতু হল মালিকদের, যন্ত্রের ভাড়াও তাদেরই দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সরাসরি হল মালিকদের সঙ্গে বসব আমরা। উভয়পক্ষ মিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। আর পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত ছবির ব্যবস্থাও আমরা নিশ্চিত করব।

প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, আমি বরাবরই বলে আসছি সার্ভারের ভাড়া প্রযোজক দেবে আর প্রজেকশন মেশিনের ভাড়া সিনেমা হল মালিক দেবে। তবে প্রযোজকদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা দীর্ঘদিন পর নতুন কমিটি গঠন করেছেন তাই আমার বিশ্বাস ছবির অভাব আপনারাই পূরণ করে দেবেন। তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, প্রযোজকরা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিলে মেশিন ভাড়া নিয়ে অবশ্যই একটি সমঝোতার পথ তৈরি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর