শিরোনাম
রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংগীত

সিক্রেট সুপারস্টার...

সিক্রেট সুপারস্টার...

অনলাইন প্ল­্যাটফর্ম ইউটিউবের কল্যাণে আজ অনেকেই জনপ্রিয় শিল্পী, শুধুমাত্র আকবর ছাড়া। আকবরের গান ভাইরাল হয়েছিল বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে। এ ছাড়া বাকিরা ইউটিউবে বিভিন্ন শিল্পীর কাভার সং করে রাতারাতি হয়েছেন জনপ্রিয়। আবার হারিয়েও যাচ্ছেন কিছু দিন পর। অনেকে মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটাই হুজুগে মাতামাতির স্থান। এখানে কোনো কিছুর স্থায়িত্ব বেশি দিন থাকে না, নতুন কিছু পেলে আগেরটা ভুলে যায়। তেমনি ইউটিউবে ভাইরাল গানের জনপ্রিয় কিছু শিল্পীর কথা তুলে ধরেছেন-  আলী আফতাব

 

আকবর

বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে ভাইরাল হন আকবর। ‘ইত্যাদি’র অনুষ্ঠানে গানের মাধ্যমে রিকশাচালক থেকে আকবর গায়ক হিসেবে সারা দেশে পরিচিত পান। আর এরপর থেকেই বদলে যায় জীবন। গান নিয়েই কাটতে থাকে তার সময়। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েক বছর নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগেছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে  আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং হানিফ সংকেতের সহযোগিতায় আবার গানের ভুবনে ফিরে এসেছেন।

 

জাহিদ

‘মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলা’ গানটির মধ্য দিয়ে ইউটিউবের বেশ জনপ্রিয়তা পায় জাহিদ। সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়া মানুষদের গান শুনানোটাই ছিল জাহিদের কাজ। শ্রোতাদের মধ্যে কেউ কেউ খুশি হয়ে তাকে ৫/১০ টাকা দিতেন। একদিন জাহিদের গান শুনে ইমরান হোসাইন নামের এক পর্যটক তা ভিডিও করে নেন। সেই ভিডিও ছাড়া হয় ইউটিউবে। ব্যস, আর যায় কোথায়। রাতারাতি তারকা বনে যায় জাহিদ। ফেসবুক-ইউটিউবে শুরু হয় তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। জাহিদ ও তার গান দিয়ে নির্মিত হয় মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও। এখন জাহিদের গান শুনতে পাওয়া যায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্টেজে।

 

আরমান আলিফ

‘অপরাধী’ শিরোনামের একটি গান গেয়ে বাংলাদেশের সংগীত ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ডই গড়েছে আরমান আলিফ। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েই গানটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। এই এক গানই তারকা বানিয়ে দিয়েছে গানটির গায়ক, গীতিকার ও সুরকার আরমান আলিফকে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক এই তরুণের। জন্ম নেত্রকোনায়। গান করার স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘চন্দ্রবিন্দু’।

‘অপরাধী’ দিয়ে হিট হলেও গান প্রকাশ করছেন আরও আগে থেকে। এরই মধ্যে বাজারে তার বেশ কিছু জনপ্রিয় গান আছে।

 

টুম্পা

আরমান আলিফের ‘অপরাধী’ গানের কাভার করে আলোচনায় চলে আসে কণ্ঠশিল্পী টুম্পা। এক কাভার গান তাকে রাতারাতি খ্যাতি এনে দিল। ২০১৪ সাল থেকে অন্যদের গান গেয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতেন টুম্পা খান সুমি। শোনার সময় গানের তালে গিটার বাজান।  ভিডিওর জন্য একটি ক্যামেরাও আছে তার। বাসার সোফায় বসে ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করেন। এই গানের পর টুম্পাকে ডেকে পাঠান গীতিকার কবির বকুল। তার কথায় ‘ও মাই লাভ’ চলচ্চিত্রের একটি গানে প্লে­ব্যাক করেন টুম্পা। গানটিতে টুম্পার সহশিল্পী কিশোর। এ ছাড়া ফরহাদের সুরে ‘অষ্টপ্রহর’ শিরোনামে আরেকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

 

মাহতিম শাকিব

মাহতিম শাকিব ভাইরাল হয়েছেন ‘মানসী’ চলচ্চিত্রে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ দিয়ে। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ করেন তিনি, যা খুব দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। মাহতিম বলেন, ‘আমার উৎসাহের জায়গাটা পেয়েছি  সনমপুরীকে দেখে। তারা পুরনো গানগুলোকে নতুন করে গাইছে। সেটা শ্রোতারাও গ্রহণ করছে। আমি চেয়েছি আমাদের জনপ্রিয় ছবির গান নিয়ে কাজ করতে।’ এরই মধ্যে মাহতিম শাকিব ব্যস্ত আছেন নতুন কিছু সলো ও কাভার গান নিয়ে।

 

লিউনা তাসনিম সাম্য

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে লিউনা তাসনিম সাম্য এখন পরিচিত মুখ।  এত অল্প বয়সেই সাম্য প্রায় ৭০টি গান মুখস্থ করে ফেলেছে। সরকারি কোয়ার্টারে থাকার সুবাদে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামীনের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে লহরী লিলিথের সঙ্গে খেলে ও একসঙ্গে গান শেখে সাম্য। তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে সেই গান ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করেন ইউএনও তামিম আল ইয়ামীন। অতঃপর বিভিন্ন জন ভিডিওটি শেয়ার করতে থাকলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ভিডিওতে ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’ শিরোনামে একটি নজরুলগীতি গাইতে দেখা যায় সাম্যকে।

এ প্রসঙ্গে সাম্য বলেন, ‘আমি তখন আম কাটছিলাম, আর গান গাচ্ছিলাম। সাম্য মূলত নৃত্যশিল্পী হিসেবেই পরিচিত। ছোট থেকেই মঞ্চে নাচে সে। নাচ শেখেও। তবে হঠাৎই সে নাচের চেয়ে গানের দিকে বেশি ঝুঁকে যায়। বর্তমানে ফেসবুকে জানাজানির সুবাদে উৎসাহটা আরও বেড়েছে।’ বর্তমানে সাম্য পড়াশোনা আর গান নিয়ে ব্যস্ত।

 

রানা

বস্তির এক বন্ধুকে পাশে বসিয়ে হাত-মাথা ঝাঁকিয়ে গাইছে ‘আমার অনেক ইচ্ছা ছিল স্কুলে যামু/তিন বেলা পেট ভইরা ভাত-মাছ খামু’ এমনি আড়াই মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করে ভাইরাল কামরাঙ্গীরচর বস্তির শিশু রানা। এসব সম্ভব হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান তবীবের জন্য।

তিনি বলেন, ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একটি শিশু বাইকে ওঠার আবদার করে। বাইকে যেতে যেতেই রানাকে গান গাইতে বলেন তবীব। সঙ্গে সঙ্গেই গলা উঁচিয়ে একটি র‌্যাপগান গাইতে শুরু করে রানা। কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে যান তবীব। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত র‌্যাপসংগীত চর্চা করেন তবীব। তার অনেক দিনের ইচ্ছা কোনো একজন পথশিশুকে দিয়ে তাদের কষ্টের গল্প তুলে ধরবেন।

‘রানার কণ্ঠ শোনার পরই মনে হলো, ওকে দিয়েই ইচ্ছাটা পূরণ করা যায়। এরপর ওর পরিবারের গল্প শুনি। খুব কম সময়ের মধ্যেই গানটা লিখে ফেলি। কোথাও কখনো গান না শিখলেও আমার কাছে অল্প সময়ের মধ্যেই গানটি গলায় তুলে নেয় রানা’ বলছিলেন তবীব।

রানাকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবেই এগোতে চেয়েছিলেন তবীব।

গান রেকর্ড, সংগীতায়োজন, ভিডিও নির্মাণ সব কিছু চলছিল ঠিকমতোই। কিন্তু তার আগেই কেউ একজন খালি গলায় রানার গানটি রেকর্ড করে ভিডিও আকারে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। তার পরই ভাইরাল রানা।

এরপর তবীবের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পায় ‘গলি বয়’ শিরোনামের গানটি।

একই চ্যানেলে ১৭ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে রানার ‘গলি বয় পার্ট টু’ ও ‘গলি বয় পার্ট-৩’ গানটি। গানগুলো এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

 

রানু মণ্ডল

পুরো নাম রানু মারিয়া মণ্ডল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা রানু মণ্ডল। ১৯৬৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর জেলার কার্তিকপাড়া গ্রামে তার জন্ম। বাবা আদিত্য কুমার। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। একেবারে শৈশবেই মা-বাবাকে হারান রানু মণ্ডল। বড় হয়েছেন অন্যের বাড়িতে। স্কুলে যাওয়া হয়নি। সুরেলা কণ্ঠ, পরিষ্কার উচ্চারণ, সরলতা ছিল সম্পদ।

এক শীতে পাড়ার ছোটরা পিকনিকে যাচ্ছিল। কিন্তু তাকে পিকনিকে নেওয়ার মতো কেউ নেই। মন খারাপ করে পিকনিকের বাসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল রানু। মাইকে বাজানো হচ্ছিল ‘এক প্যায়ার কা নাগমা হ্যায়...’ গানটি। পিকনিকে না যেতে পারলেও বাস থেকে বাজানো গানটা মনে ধরে যায় রানুর। সেই থেকে গান শুনলে সব ভুলে যান তিনি।

রানুর বিয়ে হয় মাত্র ১৩ বছর বয়সে।

 স্বামীর আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। রানু সংসার চালাতেন। মানুষের বাসায় কাজ করেই চলত সংসার। এক সময় ছোট্ট ব্যবসা শুরু করেন। ফেরি করে বিস্কুট বিক্রি করতেন। এর মধ্যে আবারও কপাল পুড়ল। স্বামী মারা গেল রানুর। বিধবা নিঃসঙ্গ রানু ম-ল খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে বিস্কুট বিক্রি করতেন, গান শোনাতেন। ভালো গাইয়ে হিসেবে রানু পরিচিতি পান।

সবাই বলতেন, ‘লতাকণ্ঠি রানু পাগলি’।

এভাবে চলে যাচ্ছিল জীবন। রানাঘাট রেলস্টেশনে বেশির ভাগ দিন কাটে। একদিন সেখানে অতীন্দ্র চক্রবর্তী নামের এক যুবক রানু মণ্ডলের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে মোবাইলে গানের ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিশ্বের কাছে পৌঁছে যায় লতাকণ্ঠি রানু মণ্ডলের গান। তারপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। সবকিছু যেন গল্পের মতো, সিনেমার গল্প, যা কোনো দিন স্বপ্নেও কল্পনা করেননি রানু।

রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে তিনি পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। হিমেশ রেশমিয়া তার নতুন ছবিতে গান করান তাকে দিয়ে। সালমান খান ৫৫ লাখ রুপি দিয়ে উপহার দেন রানুকে। এমনকি তার জীবনী নিয়েও নির্মিত হতে যাচ্ছে একটি ছবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর