শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নুসরাত কে ঘিরে আবারও বিতর্কের ঝড়

“ যে পোশাকে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, সুন্দর লাগে, আমি সেটিই পরি। লোকের কথা ভেবে চললে আজ আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি কী করছি, কী পরছি, তা দেখতে মানুষ যক্ষের মতো বসে থাকে।

আলাউদ্দীন মাজিদ

নুসরাত কে ঘিরে আবারও বিতর্কের ঝড়

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না অভিনেত্রী মডেল উপস্থাপিকা নুসরাত ফারিয়ার। ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেকের পর থেকে নুসরাত একে একে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন। আর এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব তিনি সব সময়। বেশির ভাগ সময় খোলামেলা পোশাকের কারণে বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তবে নেতিবাচক মন্তব্য কখনো গায়ে লাগাননি নুসরাত। এবার নিজের বিকিনি পরা ছবি দিয়ে আবারও সমালোচিত হলেন এই অভিনেত্রী।   

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সোনালি রঙের বিকিনি পরা একটি ছবি পোস্ট করেছেন ফারিয়া। ঘণ্টাকয়েকের মধ্যেই ছবিতে লাভ রিঅ্যাক্ট পড়েছে প্রায় ৬৫ হাজার। আর কমেন্টস পড়েছে দুই হাজারেরও বেশি। কমেন্টে ফারিয়ার এমন পোশাককে ঘিরে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন নেটিজেনরা। সমালোচনা করেছেন তার শারীরিক অভিব্যক্তি ও বিকিনি লুকের। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন নুসরাতকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। বিষয়টি জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি এবং টেকস্ট মেসেজেরও কোনো জবাব দেননি তিনি। ২০১২ সালে ছোট পর্দার উপস্থাপিকা হিসেবে মিডিয়ায় অভিষেক ঘটে নুসরাত ফারিয়া মাজহারের। এরপর মডেল হিসেবেও আলোচিত হন তিনি। ২০১৫ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ‘আশিকি’ শিরোনামের চলচ্চিত্র দিয়ে বড় পর্দায় আসা তার। ছবিটি কলকাতার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়। ছবিটিতে অভিনয় করতে গিয়ে তখন পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা দৈনিক এবেলা কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কারণে সমালোচিত হন ও বিতর্কের মুখে পড়েন নবাগত নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি বলতে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকেই বোঝায়। ওখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার কত ফলোয়ার রয়েছে তা দেখে বিবেচনা করা হয় কে স্টার আর কে নয়।’ পত্রিকাটিও ফারিয়ার এ কথাগুলোকে হাইলাইট করে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফারিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি মুখ খুলেছেন নামি কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতাও। নির্মাতা সাফি উদ্দিন সাফি লিখেন, ‘এটা তুমি ঠিক বলনি। আমাদের চলচ্চিত্রকে তুমি অপমান করেছ। এর জন্য তোমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর তুমি সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ারের কথা বলছ ১ কোটি ফলোয়ারের। এদের একজন রাস্তায় দাঁড়াক কেউ ফিরেও তাকাবে না কিন্তু ফিল্মের একজন স্টার রাস্তায় দাঁড়ালে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকা অচল হয়ে যাবে যানজটের কারণে। তখন বুঝবে কে স্টার।’ নির্মাতা এস এ হক অলিক লিখেন, ‘ফারিয়া এটা কী বললে তুমি? বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সর্বোপরি বাংলাদেশ এটা তোমার, আমার ও আমাদের সকলের। কেন নিজেকে ও নিজের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ছোট করছ? এতে তো বাংলাদেশকে ছোট করা হয়। বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এতবড় যে, সেখানে তুমি ধূলিকণা মাত্র। নিজের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ভালোবাস, মাতৃভাষাকে ভালোবাস, নিজের দেশকে ভালোবাস। তাহলে সবাই তোমাকে ভালোবাসবে।’

এই বিতর্কের পর ২০১৭ সালে স্বল্প বসনা হয়ে চলচ্চিত্রের একটি সুফি গানে পারফর্ম করে আবার বিতর্কের জন্ম দেন নুসরাত। কলকাতার সঙ্গে যৌথ আয়োজনের ‘বস-২’ ছবির ‘আল্লাহ মেহেরবান’ গানের দৃশ্যে নুসরাতকে খোলামেলা পোশাক আর আবেদনময়ী নাচের ভঙ্গিমায় দেখা যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ছবি থেকে গানটি কেটে বাদ দেওয়ারও দাবি ওঠে তখন। আর বাংলাদেশের দর্শকরা একজন শিল্পীকে কলকাতার ছবিতে স্বল্প বসনায় নিজেকে উপস্থাপন করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ বিষয়ে মিডিয়াকে ফারিয়া বলেন, ‘আমরা যখন কোনো সিনেমায় কাজ করি, তখন শুধু অভিনয়শিল্পী হিসেবেই কাজ করি। একজন অভিনয়শিল্পীকে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। অনেক কিছু উপস্থাপন করতে হয়। এই গানেও গল্পের খাতিরে পরিচালকের নির্দেশে এসব আমাকে করতে হয়েছে।’ ‘আল্লাহ মেহেরবান’ গানের ইউটিউব ও ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের অনেকে নুসরাত ফারিয়ার উদ্দেশে গালিও ছুড়েন। এ প্রসঙ্গে তখন তিনি বলেন, ‘আমি জানি অনেকে আমাকে গালি দিচ্ছেন। আমার মনে হয় সবার এতটুকু বিবেকবোধ ও বিবেচনা থাকা উচিত যে, এসব কখনোই শিল্পীর সিদ্ধান্তে হয় না। শিল্পী তার নিজের পছন্দমতো গানের সঙ্গে পোশাক পরে নাচ শুরু করে দিতে পারে না। এটা কিন্তু পুরো টিমের সিদ্ধান্ত।’ গানটা বিতর্ক ছড়াচ্ছে মনে করলেও এই গানের মাধ্যমে কারও কোনো ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেননি নুসরাত ফারিয়া। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, একটু-আধটু বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু এই গান কাউকে ক্ষতি করছে না।’ ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারিয়া বলেন, ‘গানটি নিয়ে অনেকেই আমাকে যা তা বলেছিলেন। এটা ছিল অভিনয়। সবার অন্তত এতটুকু বিবেকবোধ ও বিবেচনা থাকা উচিত। কোনো কিছুকে আঘাত করার জন্য গানটি করা হয়নি।’ গানে নিজের আঁটসাঁট পোশাক নিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পী কখনোই তার নিজের পছন্দমতো পোশাক পরে গানের সঙ্গে নাচতে পারে না। এটা পুরো টিমের সিদ্ধান্তের বিষয়।’

‘কম পোশাক পরার প্রবণতা’ নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘বিতর্ক-সমালোচনা তো রোজই শুনতে হয়। যে পোশাকে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, সুন্দর লাগে, আমি সেটিই পরি। লোকের কথা ভেবে চললে আজ আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি কী করছি, কী পরছি, তা দেখতে মানুষ যক্ষের মতো বসে থাকে।’

এই বিতর্কের পরের বছর মানে ২০১৮ সালে আবারও বিতর্কের মুখে পড়েন নুসরাত ফারিয়া। সেই বিতর্কের কারণ ছিল ওই বছরের এপ্রিল মাসে ইউটিউবে মুক্তি পায় নুসরাত ফারিয়ার ‘পটাকা’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও। জমকালো উষ্ণ মিউজিক ভিডিওটিতে নুসরাত ফারিয়ার কীর্তি শুধু উদ্দাম নাচ পর্যন্তই নয়, গানটি গেয়েছেনও তিনি। কেউ কেউ গানটিতে আনেন অশ্লীলতার অভিযোগ।

২৬ এপ্রিল সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ পায়। গানটি প্রকাশের পর থেকেই ট্রলের শিকার হন ফারিয়া। এই গানে লাইকের চেয়ে ডিজলাইকের সংখ্যাই ছিল বেশি। প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ লাখ ভিউ হলেও গানটিতে লাইক পড়ে মাত্র ১৩ হাজার। আর ডিজলাইকের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার। শুধু তাই নয়, গানটির কমেন্টেও এ নায়িকার সমালোচনা করে নেতিবাচক মন্তব্যের ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারিয়া বলেন, আমি তো কোনো শাস্ত্রীয় সংগীত গাইনি। ফলে এ গানে ওই ধরনের কিছু খোঁজাটা ডিফিকাল্ট। কিন্তু সেটিই করছে একটা শ্রেণি। তবে আমি কিছু মনে করছি না। এরপর আবার নুসরাত আলোচনায় আসেন বোরকা পরা কিছু ছবির জন্য। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ২৫ মে একটি সাদাকালো ছবি পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায় বোরকা ও হিজাবে ঢাকা নুসরাত ফারিয়াকে।

ছবিটিতে কোনো ক্যাপশন দেননি তিনি। ছবিটি প্রকাশের পরপরই নেটিজেনদের নজরে চলে আসে। ছবিটি নিয়ে নানারকম মন্তব্য আসতে থাকে। কেউ নুসরাত ফারিয়াকে বাহবা দেন রোজার পবিত্র সময়টায় নিজেকে এভাবে পর্দায় ঢেকে নেওয়ার জন্য। কেউ আবার তাকে ভ- বলেও অভিযুক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর