গানের জগতে জনপ্রিয় একটি নাম নোলক বাবু। বাংলাদেশে প্রথম গানের রিয়েলিটি শো ‘তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’-এর প্রথম চ্যাম্পিয়ন তিনি। বেশ লম্বা একটা বিরতির পর আবারও গানের ভুবনে উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে এই কণ্ঠশিল্পীর। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের আড্ডায় এসেছিলেন এই শিল্পী। কথা বলেছেন তার গান ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে। ছবি ও সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- রাফিয়া আহমেদ
ক্লোজআপ ওয়ানে নিজের ফরহাদ নামের বদলে ‘নোলক বাবু’ নামটি কেন বেছে নিলেন?
আসলে আমি তো রেজিস্ট্রেশন করিনি। রেজিস্ট্রেশনটা করেছিল মূলত আমার এক দূরসম্পর্কের কাজিন। ওর নাম হচ্ছে বাবু। ও নিজেও গান লিখত। নোলক নামে আরেকজন রেজিস্ট্রেশন করেছিল, কিন্তু যে কোনো কারণেই সে যায়নি। তখন আমার কাজিন বাবু আমাকে জানাল ক্লোজআপ ওয়ানের কথা। বলল, আমি যেন যাই এই রেজিস্ট্রেশন নিয়ে। এবং সেই নোলক নামেই আমি ক্লোজআপ ওয়ানের মঞ্চে দাঁড়াই।
আপনি যখন চ্যাম্পিয়ন হলেন তখন কি সেই আসল নোলক বাবু জেনেছিলেন?
আমি ক্লোজআপ ওয়ানে যেদিন থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেদিন থেকে একদম শেষ পর্যন্ত সেই নয়ন আমার সঙ্গেই ছিল এবং আমি যখন ক্লোজআপ ওয়ানের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হই তখন ও নিজেও অনেক খুশি হয়েছিল।
মাঝে গানের জগতে আপনার একটি বিরতি ছিল, এটি কেন?
আসলে হঠাৎ করেই দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তেমন কোনো কারণ নেই আমার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে। প্রায় ১১ মাস ইংল্যান্ডে ছিলাম।
ইংল্যান্ডে গিয়েও কি আপনি গানের জগৎ থেকে সরে ছিলেন?
না, আমি নিজের দেশ থেকে হয়তো লম্বা একটা বিরতিতে ছিলাম কিন্তু ইংল্যান্ডে থেকেও আমি গানের জগৎ থেকে দূরে ছিলাম না। সেখানে মোট ৬০-৭০টির মতো প্রোগ্রাম করেছি। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় গানের প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে আমি দুটি অ্যালবামের কাজ করেছি, এই প্রথম আমার নিজের সুরে গান করেছি। দুটি অ্যালবামই রিলিজ হয়েছে। একটা জি সিরিজ থেকে আরেকটা লেজার ভিশন থেকে। একটা অ্যালবামের নাম ‘আমার আকাশ’, অরেকটার নাম ‘চান্দের আলো’। গান দুটি লিখেছেন সোহেল নামের একজন ভদ্রলোক। তিনি ইংল্যান্ডেই থাকেন। তবে এটা সত্য যে, ইংল্যান্ডে যতদিন ছিলাম ততদিন নিজের দেশের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখিনি। মিডিয়ায় নিজেকে একেবারেই ফোকাস করিনি বলা যায়।
যেসময় তারকাখ্যাতি পেলেন সেসময় সমালোচনার মুখে পড়লেন, এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
যতটা কম সময়ের মধ্যে আমি আলোচিত হয়েছি ততটা কম সময়ের মধ্যে সমালোচিত হয়েছি। তাছাড়া এটা তো জানেন যে, মিডিয়ায় গুজবটাই বেশি হয়। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছিল। যেমন আমি আপনাকে বলি, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল আমার খালাতো ভাই জামালপুরে, যদিও আমি সঙ্গে ছিলাম। আমি বলেছিলাম আমার খালাতো ভাইকে তুমি গাড়িতে বস, আমি আম্মার সঙ্গে দেখা করে আসি। পরে আমি আম্মার সঙ্গে দেখা করে এসে দেখি গাড়ি নেই। অ্যাক্সিডেন্ট করার পর মিডিয়ার সবাই নিউজ করল অ্যাক্সিডেন্টটা আমি করেছি। আমি মিডিয়াকে বুঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু তার আগেই আমার নামে নিউজ করে ফেলে মিডিয়া। এরপর আমাকে নিয়ে অনেক নিউজই হয়েছে, যা কিনা আমার জীবনের জন্য কাল বয়ে এনেছিল। তবে বর্তমানে আমি অনেক ভালো আছি। নিজের গান নিয়ে এবং নিজের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত আছি।
তাহলে কি এই সমালোচনার রেশ ধরেই নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমানো?
না, তা কখনোই ঠিক নয়। এসব সমালোচনা মাথায় নিয়ে আমি দেশের বাইরে যাইনি। আমি আমার নিজের ইচ্ছায় ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম। আসলে দেশের বাইরে গিয়ে নিজের গানের জগৎ নিয়ে নিজের মতো করে কাজ করেছি এবং সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি, প্রোগ্রাম করেছি।
এখন গানের পাশাপাশি শিল্পীরা প্রচুর মিউজিক ভিডিও করছে। সেখানে আপনার মিউজিক ভিডিওর সংখ্যা কম কেন?
এটা সত্য যে, আমার মিউজিক ভিডিওর সংখ্যা অনেকের চেয়ে কম। কারণ হচ্ছে আমি কোয়ালিটিফুল মিউজিক ভিডিও চাই। এরই মধ্যে পাঁচ-সাতটি মিউজিক ভিডিওর কাজ শেষ করেছি। তার মধ্যে ‘ভালোবাসার হয় না মরণ’ ও ‘ভালোবাসি শুধু তোমায়’ অন্যতম। গানগুলো অনেক ভালো হয়েছে। সামনে আরও ভালো কিছু মিউজিক ভিডিও নিয়ে কাজ করব।
গান ছাড়া কি আর কিছু করা হয়?
না, আমি গানের পাশাপাশি আর কিছু করছি না। গানটাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। বর্তমানে আমি স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত আছি। ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ সময় স্টেজ শোর কাজ থাকে। আর এখন আপাতত টিভি লাইভশোগুলোতে একটু সময় দিচ্ছি। বর্তমানে কিছু গান নিয়ে কাজ করছি আর নিজের পরিবারকে বেশি সময় দিচ্ছি।
চলচ্চিত্রে নতুন কোনো গান করছেন?
হ্যাঁ, হাতেগোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানের কাজ আছে। আপনি জানেন, দীর্ঘ বিরতির কারণে নিজের দেশের গানের সঙ্গে তেমন জড়িত ছিলাম না। কিন্তু এখন আমি নিয়মিত গানের সঙ্গে কাজ করব। বর্তমানে আমি নতুন একটি চলচ্চিত্রের গানের কাজ করছি। চলচ্চিত্রটির নাম ‘আষাঢ়-শ্রাবণ’। এই চলচ্চিত্রে আমি দুইটা গান করেছি।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে আপনার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তার লেখা বা সুর করা কোনো গান আপনি করেননি কেন?
স্যারের লেখা বা সুর করা কোনো গানে কাজ করতে পারিনি সত্য। তবে কথা হয়েছিল আমাকে দিয়ে স্যার কিছু গান গাওয়াবেন। এরই মধ্যে পাঁচটি গানের কাজও হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর সম্পূর্ণ হতে পারল না, এর আগেই স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে আপনার কোনো স্মৃতি আছে?
স্যার আমাকে বাবা বলে ডাকতেন, অনেক স্নেহ করতেন আমাকে। একদিন আমি স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। সেদিন স্যার আমাকে একটা গান তুলে দিয়েছিলেন। খুব সুন্দর বেহালা বাজাতেন স্যার। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনলাম স্যারের বেহালা বাজানো। সত্যি গানের জগতে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল স্যারের অভাব কখনোই পূরণ হবে না।
সন্তানকেও কি গানের জগতে আনার ইচ্ছা আছে?
সন্তানরা এখনো অনেক ছোট। বড় ছেলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে আর ছোট ছেলেটা এখনো ছোটই। আর মেয়ে তো মাত্র কোলে, হা. হা.. হা...। তবে হ্যাঁ, ইচ্ছা তো আছেই। যেহেতু আমি গান করি ছেলেকেও গানের জগতে রাখব। ছেলেকে মিউজিক ডিরেক্টর বানানোর ইচ্ছা আছে।