বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → সাজিয়া ইসলাম পুতুল

অডিও ইন্ডাস্ট্রি বলে আমাদের দেশে কিছু নেই

অডিও ইন্ডাস্ট্রি বলে আমাদের দেশে কিছু নেই

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কণ্ঠশিল্পী সাজিয়া ইসলাম পুতুল। এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সংগীতের ভুবনে পা রাখেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের আড্ডায় এসেছিলেন কণ্ঠশিল্পী পুতুল। কথা বলছিলেন তার গান ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে। ছবি ও সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন - রাফিয়া আহমেদ 

 

বর্তমানে ব্যস্ততা কি নিয়ে?

বর্তমানে ব্যস্ততা বেশকিছু নতুন গান নিয়ে। এর মধ্যে দুটো গান শানের কম্পোজিশন করা। একটি গানের গীতিকার কণা চৌধুরী আর সুর করেছেন তামিম। আরেকটি গানের কথা ও সুর করেছেন রাজন সাহা। গান নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আমি লেখালেখিতে একটু বেশি সময় দিচ্ছি।

 

আপনার লেখালেখির শুরুটা কবে থেকে?

আমি লেখালেখি করি স্কুলজীবন থেকে। ছোটবেলা থেকেই লিখতে খুব পছন্দ করতাম। যখন ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই আমি কবিতা, গান এসব লিখতাম। তখন তো আর ছন্দ- মিল অতটা বুঝতাম না কিন্তু আমার মনের এলোমেলো ভাবনাগুলোকে আমি আমার লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করতাম। 

 

কোন বিষয়ে লিখতে বেশি পছন্দ?

আমার কবিতা লিখতে খুব বেশি ভালো লাগে। প্রথমে গান এরপর কবিতা, তারপর উপন্যাস লিখছি। আমার প্রথম কবিতার বই বের হয় ২০১৬ সালের বইমেলায় পুতুলকাব্য উপক্রমণিকা নামে। এরপর পুতুলকাব্য দ্বিতীয় অধ্যায়। তারপর ধীরে ধীরে আমার অন্যান্য বই বের হয়। চার বছরে মোট চারটা বই বের হয়েছে। এখন একটা নতুন উপন্যাস নিয়ে কাজ করছি।

 

আপনার গানের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে মনে হচ্ছে?

গানের সংখ্যা কমছে কারণ অ্যালবাম প্রকাশটা কমে গেছে। আগে আমি নিজেই দুই বছরে একটা অ্যালবাম প্রকাশ করতাম। তখন অবশ্য ১২টি গানের কমে কাজ করিনি কখনো। কিন্তু এখন যা হচ্ছে আমি সারা বছরে একটা কি দুটো গান করছি। সেক্ষেত্রে অনেকের তুলনায় আমার গানের সংখ্যা কম।

 

আপনাকে মিউজিক ভিডিওতেও কম দেখা যাচ্ছে কেন?

আমি মনে করি আমার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কারণ দেখুন মাঝখানে কয়েক বছর মিউজিক ভিডিও নিয়ে বেশ রমরমা আয়োজন ছিল। দর্শকও বেশ উপভোগ করত মিউজিক ভিডিওগুলো। শিল্পীদের মধ্যেও দেখেছি সারা বছরের মঞ্চ পরিবেশনার সঞ্চয় দিয়ে হলেও একটা মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে। তখনো আমাকে যেমন পাওয়া যায়নি এখনো তেমন মিউজিক ভিডিও করে খুব যে লাভ হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এখন কিন্তু গান পৌঁছাচ্ছেই না তেমন দর্শকদের কাছে।  অনেক ভালো মিউজিক ভিডিও আছে যা দর্শকের দোরগোড়ায় যাচ্ছেই না! আমি মনে করি নিজস্ব অর্থায়নটা সব সময় অডিওতে কাজে লাগানো দরকার। আমি মৌলিক গানের সংখ্যা আগে বাড়াই। তারপর না হয় বছরে একবার ভালো মানের মিউজিক ভিডিও করব যা কিনা দর্শকেরও চাহিদা বাড়বে।     

 

তার মানে আপনার কাছে মিউজিক ভিডিওর থেকে অডিও গানের গুরুত্বটা বেশি, তাই তো?

হ্যাঁ, অবশ্যই। অডিও গানের প্রাধান্য আমার কাছে বেশি। কারণ একজন ভালো শিল্পীর বা শিল্পীদের জীবনে মৌলিক গানের সংখ্যাটা বাড়ানো দরকার।

 

কিন্তু যাদের শুরুটা মিউজিক ভিডিও দিয়ে, তাদের ভবিষ্যৎটা কী?

আসলে যারা শুধু মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে মিডিয়াঢ প্রবেশ করেছে, তাদের অধিকাংশের সংগীতের ওপর কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া নেই। এ বিষয়ে তারা একেবারেই অজ্ঞ বলা যায়। তাছাড়া যে মুহূর্তে তাকে নিয়ে এত মাতামাতি করছে সে মুহূর্তে ওই উঠতি শিল্পীর কিছু দায়িত্ব আছে, তা হলো সে যেন তার কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে। তাছাড়া গান একটা সাধনার বিষয়। একে নিজের মধ্যে ধারণ করতে হলে অবশ্যই গানের জন্য একজন ভালো ওস্তাদের সান্নিধ্যে যেতে হবে।

 

বর্তমানে বাংলাদেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অবস্থা কেমন মনে হয়?

অডিও ইন্ডাস্ট্রি বলে আমাদের দেশে কিছু আছে কিনা সেটাই তো আমার কাছে সন্দেহ হয়। ইন্ডাস্ট্রি বলতে তো দ্বিমুখী, ত্রিমুখী, চতুর্মুখী একটা অংশগ্রহণ। এখানে একজন শিল্পী একা তো আর একটা ইন্ডাস্ট্রি নয়। সেখানে সুরকার, গীতিকার, কম্পোজার, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, শিল্পী-  প্রত্যেকে মিলে একটা দলগত প্রচেষ্টা। ইন্ডাস্ট্রি নেই এখন, এখন প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। এখানে যেমন রয়েলিটির ব্যবস্থাও কখনো ছিল না, যেমন শিল্পীর নিরাপত্তা প্রদানের প্রক্রিয়াও কোনোদিন ছিল না। এখানে একজন শিল্পীর পেছনে লগ্নি করার মতো তেমন পরিবেশ দেখি না। সুতরাং এখানে ইন্ডাস্ট্রি বলে কিছু দেখি না। হয়তো কিছু কিছু শিল্পী গান বানিয়ে কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারছে বা পারছে না। এই আরকি অবস্থা।

 

আপনার নিজের লেখা ও সুর করা গানের অ্যালবাম এখন পর্যন্ত কয়টা বের করেছেন?

আমার এ পর্যন্ত পাঁচটি অ্যালবাম বের হয়েছে। প্রথম অ্যালবাম ক্লোজআপ ওয়ান থেকে বের হয়েছে। আর বাকি চারটি অ্যালবামই আমার নিজের কম্পোজিশন এবং কথা ও সুর আমার নিজের করা। এরপর গত কয়েক বছরে যত গান আসছে সব গানই আমার নিজের কথা, সুর ও কম্পোজিশনে করা।

 

টিভি-লাইভ শো-তে আপনাকে কম দেখা যাচ্ছে, এর কারণ কী?

হ্যাঁ, আমি লাইভ শো খুব কম করি। আসলে এখন টিভি চ্যানেলগুলো গানের লাইভ শোগুলো করে ফেলেছে তিনজন, চারজন শিল্পীর সমন্বয়ে। একক লাইভ খুব কম হয়। আর আমি একক লাইভ ছাড়া করি না। আমার গানের নির্দিষ্ট একটা আঙ্গিক আছে, আমার যন্ত্রশিল্পীদের নির্দিষ্ট একটা আঙ্গিক আছে, সেখানে আমি যখন অন্য একজন শিল্পীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতে যাব তখন আমার গানের ছন্দপতন ঘটে।

সর্বশেষ খবর