বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জন্মভূমির মতো আপন আর কিছু নেই

জন্মভূমির মতো আপন আর কিছু নেই

কানাডা প্রবাসী পুত্র অনিকের টানে হুট করেই গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়েন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা। যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এবার স্থায়ীভাবেই চলে যাচ্ছি। এখানে একা একা মন টেকে না। অনিকও  সেখানে খুব একা। কিন্তু বিদেশ-বিভূঁইয়ে থিতু হওয়ার চিন্তা এখন ববিতাকে ভোগাচ্ছে। মত পাল্টেছেন তিনি। শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন। কানাডা থেকে মুঠো ফোনে এমনটাই জানালেন ববিতা। তার বলা কথা তুলে ধরেছেন-  আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কেমন আছেন?

ভালো ও মন্দ দুটোই বলতে পারেন। অনিক আমাকে পেয়ে খুব খুশি। আমারও খুশির সীমা নেই। ওকে নিজ হাতে রেঁধে খাওয়াতে পারছি। ও এখানে পড়াশোনা ও জব দুটিই করছে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে ওকে  রেঁধে খেতে হয়। ঘরের সব কাজ করতে হয়। ওর ওপর ভীষণ চাপ যাচ্ছে। মা হয়ে তার এই কষ্ট সহ্য করতে পারি না। এখানে আসাতে দুজনই খুব আনন্দে আছি।

 

এত আনন্দের মধ্যেও আবার ‘মন্দ আছি’ বলা কেন?

আসলে একটি বিষয় আমাকে খুব ভোগাচ্ছে। আর তা হলো ভেবেছিলাম পুত্রের টানে এখানেই সেটেল হব। কিন্তু অল্প সময় পরই মনে হলো জন্মভূমির চেয়ে আপন আর কিছুই হতে পারে না। দেশের মায়া বড় মায়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা নৈসর্গিক আমার বাংলাদেশের মতো দেশ আর কোথাও নেই। যে সুজলা-সুফলা বাংলাদেশে আমার জন্ম, যে দেশের আলো-বাতাসে আমি বেড়ে ওঠেছি, যে দেশ আমাকে ‘অভিনেত্রী ববিতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সে দেশকে ফেলে আমি কখনো বিদেশে সেটেল হতে পারি না। দেশের প্রতি সবার মতো আমারও দায়বোধ আছে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের জন্য কিছু করে যেতে চাই। দেশ আমার কাছে সবার আগে। জীবনের বাকি দিনগুলো প্রিয় মাতৃভূমি বাংলার মাটিতেই কাটাব।

 

তাহলে শিগগিরই ফিরছেন?

না, আরও কিছুদিন পর। অনিককে আরেকটু সময় দিতে চাই। দুজন মিলে মাছ ধরব। আমাদের দুজনের শখ মাছ ধরা। কিছুদিন পর বাহারি সব ফুল ফুটবে এখানে। ফুল আমার খুব প্রিয়। মা-ছেলে মিলে ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়াব। নানা প্রজাতির ফুলের গাছ সংগ্রহ করব। ঢাকায় আমার বাসার ছাদবাগানকে নতুন নতুন ফুল গাছ দিয়ে আরও ভরে তুলব। দেশে থাকলে এই ফুল গাছগুলোই আমার সব। ওরা আমার সব একাকিত্ব দূর করে দেয়। 

 

চলচ্চিত্র জীবন এখন আপনাকে কতটা ভাবায়?

চলচ্চিত্র আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চলচ্চিত্রের কারণেই আজ আমি  দেশ-বিদেশে সবার কাছে ‘ববিতা’ নামে পরিচিত। দিখলাম রাজকাপুরের ছবির পাশে ববিতার ছবি স্থান করে নিয়েছে। মানে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সম্মানজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্বের জনপ্রিয় পত্রিকাগুলো গুরুত্ব দিয়ে আর্টিকেল তৈরি করল  ববিতাকে নিয়ে। বিশ্বের প্রধান চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে আমি হয়ে গেলাম ডার্লিং অব দ্য ফেস্টিভেল।  ফেস্টিভেলের ওপেনিং আর ক্লোজিং হতো আমার হাতে। পৃথিবীর খ্যাতনামা ইউনিভার্সিটিগুলোতে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। বিভিন্ন দেশের উৎসবে বক্তব্য রাখতে সেসব  দেশের ভাষা শিখেছি। দেশীয় চলচ্চিত্রের সেই সোনালি দিন কখনো ভোলার নয়।

 

চলচ্চিত্র জগতে আবার কখন ফিরছেন?

চলচ্চিত্রে তো ফিরতেই চাই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত গল্প, চরিত্র, নির্মাণ খুঁজে পাচ্ছি না। সবদিক দিয়েই কেমন যেন একটা অচলাবস্থায় পড়ে আছে এই শিল্পটি। মাঝে মধ্যে আশার আলো দেখতে পেলেও পরক্ষণেই তা নিভে যায়। এ অবস্থায় কীভাবে আবার আমার প্রাণের এই জগতে ফিরব বলতে পারছি না।

 

তাহলে কি চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরার কোনো পথ নেই?

চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরার কোনো পথ নেই, তা বলব না। মানুষ নিকষ কালো অন্ধকারেও আলোর দিশা খোঁজে। আমিও তাই একবারে হতাশ নই। এ সমস্যার সমাধানে প্রশিক্ষিত ও মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। সদিচ্ছা থাকতে হবে। শুধু দেশকে নয়, বিশ্বকে কীভাবে সেরা কাজ উপহার দেওয়া যায় সেই চেষ্টা নিয়ে নতুন করে এগুতে হবে। কারণ ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে  কোনো উপাদান বা উপকরণের অভাব আমাদের নেই। এর সঙ্গে সদিচ্ছার সংমিশ্রণ ঘটাতে পারলেই আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র।

সর্বশেষ খবর