বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কমছে সিনেমা হল বাড়ছে সিনেপ্লেক্স

একজন প্রযোজক সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল থেকে সিনেপ্লে­ক্সে বেশি মুনাফা পান।

আলাউদ্দীন মাজিদ

কমছে সিনেমা হল বাড়ছে সিনেপ্লেক্স

নব্বই দশকের শেষভাগ থেকে দেশে সিনেমা হল বন্ধের হিড়িক শুরু হয়েছে। দেশে থাকা প্রায় ১৪শ সিনেমা হলের স্থলে এখন আছে দেড়শরও কম। সুখের কথা হলো সিনেমা হল বন্ধ হতে থাকলেও চালু হতে শুরু করেছে সিনেমা দেখার আধুনিক ব্যবস্থা ‘সিনেপ্লেক্স’। ২০০৪ সালে ‘স্টার সিনেপ্লে­ক্স’ নামে প্রথম সিনেপ্লে­ক্স প্রতিষ্ঠা হয় রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মলে। এরপর প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কে ব্ল­কবাস্টার সিনেমাস, শ্যামলী শপিং মলে শ্যামলী সিনেপ্লে­ক্স, ধানমন্ডিতে স্টার সিনেপ্লেক্স, মিরপুরে সনি স্টার সিনেপ্লেক্স। আগামী ২০ অক্টোবর মহাখালীতে চালু হতে যাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্সের আরেকটি শাখা। এ ছাড়া উত্তরা, মিরপুরসহ কিছু স্থানে আরও সিনেপ্লে­ক্স নির্মাণ করার কথা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে কেরানীগঞ্জে লায়ন সিনেপ্লেক্স, সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ কমপক্ষে ২০টি সিনেপ্লে­ক্স শিগগিরই চালু হবে। জানা গেছে, আগামী পাঁচ বছরে দেশে প্রায় ১০০টি সিনেপ্লে­ক্স নির্মাণ হবে। চলচ্চিত্র নির্মাতা নূরে আলম নির্ভীকের কথায়, সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, চীনসহ প্রায় সারাবিশ্বেই সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। এখন সিনেপ্লে­েক্সর যুগ। ভারতে ১৫ হাজারের ওপর সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে আছে ছয় হাজারের মতো, দিন দিন আরও কমছে। ভারতে সিনেপ্লে­ক্স বা মাল্টিস্ক্রিন হল আছে ২১০০-এর মতো। দিন দিন আরও বাড়ছে। একটু দেরিতে হলেও দুনিয়ার হাওয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। সিনেপ্লে­ক্সের সংখ্যা বাড়ছে। আসলে সিনেপ্লেক্স এখন যুগের চাহিদা। একজন প্রযোজক সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল থেকে সিনেপ্লে­েক্স বেশি মুনাফা পান। সিঙ্গেল স্ক্রিনে একজন প্রযোজক ১০০-১৫০ টাকার টিকিটে পান মাত্র ৫-১৫ টাকা। অন্যদিকে সিনেপ্লে­ক্স থেকে পান ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তাছাড়া সিনেপ্লে­ক্সে একটি সিনেমার দিনে ১০টি পর্যন্ত শো সম্ভব। হিসাব করে দেখলে ঢাকার মাত্র তিনটি সিনেপ্লে­ক্সে ৫টি করে শোতে ২০০ মানুষ দেখলে প্রযোজকের আয় হয় ৩ লাখ টাকা। শো এক মাস চালাতে পারলে প্রায় ১ কোটি টাকা। ২০০৪ সালে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে চালু হওয়া ‘স্টার সিনেপ্লে­ক্স’ গত ৮ অক্টোবর তাদের পথচলার ১৫ বছর পূর্ণ করল। এ উপলক্ষে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে রাজধানীর মহাখালীতে নবনির্মিত এসকেএস (সেনা কল্যাণ সংস্থা) টাওয়ারে চালু হচ্ছে ‘স্টার সিনেপ্লে­ক্স’-এর নতুন মাল্টিপ্লে­ক্স। ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় এর উদ্বোধন হবে। ২০ অক্টোবর থেকে দর্শক এখানে সিনেমা দেখতে পারবেন বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (বিপণন ও মিডিয়া) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন এ ধরনের নতুন মাল্টিপ্লে­ক্স চালু করার উদ্যোগ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় সুসংবাদ বলে মনে করেন স্টার সিনেপ্লে­ক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, ঢাকায় আরেকটি মাল্টিপ্লে­ক্স চালু করতে যাচ্ছি। মহাখালী ও এর আশপাশের দর্শকদের জন্য এটি নতুনমাত্রা যোগ করবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, পূর্বাচলসহ বিভিন্ন স্থানে আরও ২০টি মাল্টিপ্লে­ক্স এবং দেশব্যাপী ১০০টি মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’ ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় পুরান ঢাকার লায়ন সিনেমা হল। যা ছিল পুরান ঢাকাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ। তবে সুখবর হচ্ছে,  বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠেছে নতুন চারটি সিনেমা হল। নাম ‘লায়ন সিনেমাস’। লায়ন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষই এটি চালু করছে। ২৫ কাঠা জমির ওপর ১৬ হাজার বর্গফুটে নির্মিত হয়েছে এই সিনেপ্লে­ক্স। এতে সিনেমা হলের সংখ্যা ৪টি। পাশাপাশি আছে আধুনিক সুবিধাও-শপিং সেন্টার, ব্যায়ামাগার, বাচ্চাদের খেলার জোন, সুইমিং পুল প্রভৃতি। পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি হলে আসন সংখ্যা ২৩৫টি। এদিকে, বগুড়া শহরের পৌরসভা এলাকার চেলোপাড়া নামক স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘মধুবন সিনেপ্লে­ক্স’। এর স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ প্রদর্শনের পর ‘মধুবন সিনেমা হল’ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে আধুনিক মাল্টিপ্লে­ক্সে রূপান্তরের কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে রোকনুজ্জামান ইউনূসের পিতা ‘মধুবন সিনেমা হল’-এর ভিত্তি স্থাপন করেন। পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আর কাজ করতে পারেননি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে তার পিতা চালু করেন ‘মধুবন সিনেমা হল’। খুলনার খালিশপুরের লিবার্টি সিনেমা হলের স্থানে গড়ে উঠেছে লিবার্টি কমপ্লে­ক্স। তিনটি পর্দা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই অত্যাধুনিক হলটি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রয়েছে আরামদায়ক সিট ও হাল প্রযুক্তির প্রজেকশন ব্যবস্থা। চালু হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্লে­ক্স ‘সিলভার স্ক্রিন’। নগরের দুই নম্বর গেটের ফিনলে স্কয়ারে ৭২ আসনের ‘প্ল­াটিনাম’ ও ১৮ আসনের ‘টাইটানিয়াম’ হল রয়েছে এ সিনেপ্লে­ক্সে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা ছটকু আহমেদ, সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক ইফতেখার নওশাদসহ সবারই অভিন্ন মত ‘দর্শক যানজট ঠেলে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে যেতে চায় না। দর্শকের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে। তারা একই সঙ্গে শপিং, খাওয়া-দাওয়া, বাচ্চাদের খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শপিং মলে অবস্থিত সিনেপ্লে­ক্সে ছবি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

সর্বশেষ খবর