বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

এখনকার প্লে-ব্যাকে এক্সপ্রেশন থাকছেই না

এখনকার প্লে-ব্যাকে এক্সপ্রেশন থাকছেই না

তা ধিন তা ধিন তা ছন্দ ছড়িয়ে সারগামের সুরকে সঙ্গী করে গানের ভুবনে যার আগমন। মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে চ্যানেল আইয়ের খুদে গানরাজের মাধ্যমে শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিল যে মেয়েটি, তার নাম সাবরিনা পড়শী। সংগীতশিল্পী পড়শীর গান ও নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে তার কথোপকথন। সাক্ষাৎকার ও ছবি

রাফিয়া আহমেদ

 

ছোটবেলা থেকে নাচ দিয়ে শুরু কিন্তু নৃত্যশিল্পী না হয়ে সংগীতশিল্পী কেন হলেন?

ছোটবেলায় নাচ এবং গান দুটো একসঙ্গে শুরু করেছিলাম। নাচ আর গানের মধ্যে আমার নাচটাই বেশি ভালো লাগত। একটা সময় দেখা গেল, আমি ক্লাসিক্যালের পাশাপাশি গানের তালে তালে নাচতাম। তখনই খেয়াল করলাম  আমার নাচের থেকে গানের প্রতি মনোযোগটা বেশি কাজ করছে। গানের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। তখন থেকেই নিয়মিত গান শেখা এবং গান নিয়ে কাজ করা। এরপর খুদে গানরাজে অংশ নিলাম। খুদে গানরাজ একসময় আমাকে তৈরি করে দিল সংগীতশিল্পী। তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

 

গায়িকা থেকে নায়িকা হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?

‘রানা পাগলা দি মেন্টাল’ চলচ্চিত্রে আমি সংগীতশিল্পীর চরিত্রেই কাজ করেছি। সেখানে একটা মুহূর্তে শাকিব খানের কল্পনায় আমি তার নায়িকা হয়ে আসি। তাতেই অনেকে ভেবেছিল যে, আমি বুঝি নায়িকা চরিত্রে কাজ করেছি। আসলে তা নয়। আমি সিনেমায়ও সংগীতশিল্পী ছিলাম।

 

শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার অনুভূতি কেমন?

শাকিব ভাইয়ার সঙ্গে কাজ করে অনেক ভালো লেগেছে। তিনি কাজের ক্ষেত্রে খুবই বন্ধুসুলভ। আমি যে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করছি তা একমুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি। আমাকে যখন কাজটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তখন শাকিব ভাই বলছিলেন, ‘ওকে বার বার বুঝাতে হবে না, ও এমনিতেই পারবে।’ আমার প্রতি অনেক কনফিডেন্ট ছিল তার। তার সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি।

 

ভবিষ্যতে কি চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে কাজ করবেন?

অভিনয় করাটা আসলে সাহসের ব্যাপার। অনেক বেশি ইচ্ছাশক্তি থাকতে হয়। আমার মধ্যে যেদিন সেই সাহসটা সঞ্চয় হবে এবং মানসিকভাবে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত হব তখন ভালো কোনো গল্প বা চলচ্চিত্রের কাজ পেলে অবশ্যই অভিনয় করব।

 

আপনার প্রথম চলচ্চিত্র চাচ্চু চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার অভিজ্ঞতাটা বলুন।

এই অভিজ্ঞতাটা সত্যিই খুব কষ্টের ছিল। কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই হৈমন্তী শুক্লা, লতা মঙ্গেশকর, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন- এদের গান শুনেছি এবং খুদে গানরাজে আমি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের মতো বড় শিল্পীদের গান গেয়েছি। ছোটদের গান গাওয়া হয়নি। হঠাৎ করে যখন ছোটদের গান গাইতে হলো তখন একটু কষ্ট হয়েছিল। ছোটদের গান গাওয়ার চেয়ে রোমান্টিক গান গাওয়া সহজ। এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছিলেন সামিনা চৌধুরী ম্যাম। তিনি আমাকে হাতের তালে তালে ছোট বাচ্চাদের যেভাবে শেখায় ঠিক সেভাবে শিখিয়েছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে আমি পুরো বাচ্চাদের কণ্ঠে গানটি গেয়েছিলাম।

 

সময়ের চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাকের বিষয়ে কিছু বলুন।

আমি যখন প্লে-ব্যাকের কাজ শুরু করি তখন ২০০৮ আর এখন ২০১৯- এই এগারো বছরে অনেক বদল এসেছে প্লে-ব্যাকে। তাছাড়া আগে যখন শিল্পীরা সিনেমায় গান গাইতেন তখন গান গাওয়ার সময় কখনো শিল্পীদের হাসতে হতো, কখনো কাঁদতে হতো, এমনকি প্রয়োজনে গানের মাঝে কথাও বলতে হতো। যেখানে নায়ক-নায়িকারা মুখ মিলাতেন। তখনকার সময় প্লে-ব্যাকে কাজ করাটা যেমন কষ্টের ছিল তেমন আনন্দও কাজ করত। আর এখন প্লে-ব্যাকগুলোতে এক্সপ্রেশন বলে তেমন কিছুই থাকছে না। আমরা যদি বলিও এক্সপ্রেশনের কথা, তখন আমাদের বলা হয় এক্সপ্রেশন না দিয়ে শুধু গানটা গাওয়ার জন্য। এই বিষয়টি যে কোনো গানের ক্ষেত্রে হচ্ছে।

 

রেডিওর আর জে হওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?

আর জে হওয়ার সিদ্ধান্তটা অনেক ভেবেচিন্তেই নিয়েছি। আমাকে যখন কেউ সেলিব্রেটি পড়শী বলে তখন আমার ভালো লাগে না। সেলিব্রেটি শব্দটার মধ্যে যেন বাধার দেয়াল। তাই আমি ভাবলাম কীভাবে মানুষের সঙ্গে মেশা যায়, তাদের কাছে যাওয়া যায় এবং তাদের বন্ধু হওয়া যায় এই ভেবে আর জে হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

 

শ্রোতাদের কাছ থেকে কি নিজের গানগুলোর জন্য বেশি অনুরোধ আসে?

এ বিষয়টা খুব মজার। আমি যখন জিজ্ঞাসা করি যে, এখন কি গান প্লে করতে পারি, তখন বলে- ‘আপু আপনার একটা গান প্লিজ প্লে করেন’।

 

অডিও ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অবস্থান কেমন?

অডিও ইন্ডাস্ট্রি তো ভেনিস! আগে মিউজিক জগতে যে একটা আনন্দ বা আগ্রহ কাজ করত সে বিষয়টি নেই বললেই চলে। যেমন আগে একটা ব্যাপার কাজ করত কবে নতুন গান আসবে, কবে ক্যাসেট বা সিডি কিনব, গানের প্রতি সবার আগ্রহই থাকত অনেক বেশি। যা এখন নেই।

 

আপনার ব্যান্ড বর্ণমালার বর্তমান অবস্থা কি রকম?

আমার বর্ণমালার ব্যান্ডটা হলো শুধু আমি যে কনসার্টগুলোতে যাই সেখানকার জন্য নিজের একটা ব্যান্ড তৈরি করি। এর জন্য আলাদা করে যে গান রিলিজ হওয়ার বিষয় থাকে তা এখনো হয়নি।

 

বর্ণমালা নিয়ে সামনে পরিকল্পনা আছে কি?

বর্নমালা নিয়ে তো গত দুই বছর ধরে পরিকল্পনা করেই যাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

 

নিজেকে কোন পরিচয়ে ভালো লাগে?

আবশ্যই সংগীতশিল্পী। আর সব শখের বশে করা।

সর্বশেষ খবর