মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শুভর প্রতি শাকিবের শুভকামনা

আলাউদ্দীন মাজিদ

শুভর প্রতি শাকিবের শুভকামনা

ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিব খান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার সঙ্গে দ্বৈতভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আরিফিন শুভর প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন। শাকিব বলেন আমার অনুজতুল্য শুভ আমার সঙ্গে এই সম্মাননা পাওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। ২০১৭ সালের এই পুরস্কারে ‘সত্তা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান শাকিব খান এবং ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির জন্য পুরস্কার লাভ করেন আরিফিন শুভ। গত বৃহস্পতিবার সরকার ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করেন। দুই বছরই শ্রেষ্ঠ মুখ্য অভিনেতার ক্যাটাগরিতে যুগ্মভাবে দুজন করে অভিনেতার নাম ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালে ‘পুত্র’ ছবির জন্য ফেরদৌস এবং ‘জান্নাত’ ছবির জন্য সাইমন সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করবেন। শাকিব খান বলেন, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দেখা গেছে এই দুই বছরের পুরস্কারে বেশির ভাগ ক্যাটাগরিতে দ্বৈতভাবে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাই অনেকে ব্যঙ্গ করে একে জাতীয় দ্বৈত চলচ্চিত্র পুরস্কার নামে অভিহিত করছেন। এটি কারও কাম্য নয়। এই পুরস্কার যেহেতু চলচ্চিত্রের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা, উৎসাহ ও দায়িত্বের এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন তাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সম্মান যাতে সব সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকে সেটিই আমার কাম্য। জাতীয় পুরস্কারে যারা সম্মানিত হয়েছেন সবার প্রতি আমার শুভ কামনা রইল।

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক চলছেই। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, নানা সময় এই পুরস্কার এমন সব বিতর্কের জন্ম দেয় যা চলচ্চিত্রকারদের জন্য বিব্রতকর। যেমন ২০১৬ সালে ‘নিয়তি’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হিসেবে হাবিবের নাম ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর হাবিব নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করে এর প্রতিবাদ জানান। কারণ এই ছবিতে তিনি নাকি নৃত্য পরিচালনাই করেননি। নৃত্য পরিচালক ছিলেন ভারতের বাবা যাদব। ২০১৪ সালে ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ ছবির জন্য খল-অভিনেতা মিশা সওদাগরকে দেওয়া হয় সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার। তখন এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আটশ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছি। ২০১২ সালে বস নাম্বার ওয়ান ছবির জন্য পেয়েছি সেরা খলনায়কের পুরস্কার। এবার সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার দেওয়ায় আমি অবাক হয়েছি, জুরি বোর্ড যা ভালো মনে করেছেন, তা-ই করেছেন। এ ব্যাপারে আমি আর কিছু বলব না। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল আবার ২০১৭-২০১৮ সালের পুরস্কারের ক্ষেত্রে। এই পুরস্কারে কৌতুক অভিনেতা বিভাগে ২০১৭ সালে ‘গহীন বালুচর’ বিভাগে ফজলুর রহমান বাবু ও ২০১৮ সালে মোশাররফ করিম পুরস্কার পাওয়ায় অবাক হয়েছেন অনেকেই। ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমাকে যে চরিত্রের জন্য কৌতুক চরিত্রে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সেটা কোনো কমেডি চরিত্র ছিল না। এটা একটা সিরিয়াস চরিত্র ছিল। এটা একরকম খলচরিত্রই ছিল।’ ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘কমলা রকেট’ সিনেমার জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন  মোশাররফ করিম। পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন মোশাররফ করিম। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘নূর ইমরান মিঠু পরিচালিত ‘কমলা রকেট’ চলচ্চিত্রের জন্য আমাকে ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এই পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে আমার কিছু কথা রয়েছে। কৌতুকপূর্ণ বা কমেডি চরিত্র আমার কাছে অন্যসব চরিত্রের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ‘কমলা রকেট’ আমার অভিনয় করা ‘মফিজুর’ চরিত্রটি কোনো কৌতুক চরিত্র নয়। এটি প্রধান চরিত্রগুলোর একটি। তাই, সম্মানিত জুরি বোর্ডের কাছে আমার অনুরোধ, ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে’ আমার জন্য বরাদ্দ করা পুরস্কারটা প্রত্যাহার করে নিলে ভালো হয়। আমার পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করা সম্ভব নয়।’ এদিকে ২০১৭ সালের জাতীয় পুরস্কারে ভারতীয় নাগরিক মোহাম্মদ কালামকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির জন্য সেরা সম্পাদকের পুরস্কার দেওয়ায় চলচ্চিত্র জগৎসহ সর্বস্তরে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। চলচ্চিত্র এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে যখন ৩৫ মিলি মিটার অর্থাৎ এনালগ সিস্টেমে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতো তখন একজন সম্পাদককে কোনো ছবিতে কাজ করার ক্ষেত্রে গিল্ডের প্রত্যয়নপত্র নিতে হতো। বিদেশ থেকে কোনো সম্পাদক নেওয়া হলেও নির্মাতা গিল্ডের পারমিশন নিতেন। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার পর এসব নিয়ম কেউ মানছেন না। ফলে বিদেশি হয়েও বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো বিব্রতকর ও হাস্যকর ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে প্রযোজক-পরিচালক থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতনভাবে নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ জানচ্ছি। কালামের পুরস্কার প্রত্যাহারের জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের নজির ঢালিউডে আরও আছে। এর আগে শাবানা ও সুবর্ণা মুস্তাফা এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৮ সালে ‘অশিক্ষিত’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাওয়া নায়করাজ রাজ্জাক অনিয়মের প্রতিবাদস্বরূপ এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর