বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর সবারই চাওয়া

হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর সবারই চাওয়া

আজ কথাসাহিত্যিক ও কলম জাদুকর খ্যাত হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তারই সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন। সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন সাইফ ইমন

 

কিছু দিন আগেই নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসব সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া হুমায়ূনভক্তরা ছড়িয়ে রয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়...

আলহামদুলিল্লাহ। এবার প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। প্রচুর হুমায়ূন আহমেদ ভক্ত এসেছিলেন অয়োজনে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, মঞ্চনাটক হয়েছে। শিশুদের নিয়ে একটা আয়োজন হয়েছে যারা বাংলা পড়তে পারে না, যাদের জন্ম আমেরিকায়, তাদের কাছে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের বাচ্চাদের বই ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে তাদের বোঝানো হয়েছে। আমি মনে করি নিউইয়র্কের এ আয়োজনটা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। এ রকম একটা স্বপ্ন দেখি। একটি বিষয় আমি সবসময়ই বলে আসছি, হুমায়ূন আহমেদকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিংবা হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু করার নেই। হুমায়ূন আহমেদ নিজেই যা লিখে গেছেন তাই যথেষ্ট। যে পাঠক হুমায়ূন আহমেদের একটি বই পড়বে সে তার ভক্ত হয়ে যাবে। আমাদের দায়িত্ব হলো পরবর্তী প্রজন্মের হাতে একটি বই তুলে দেওয়া। একটি বই পড়ে যদি তার ভালো লাগে তবেই না সে দ্বিতীয় বই পড়বে, তৃতীয় বই পড়বে। এভাবেই সে পড়া শুরু করবে।

 

হুমায়ূন আহমেদ জাদুঘর প্রসঙ্গে...

হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত যে জিনিসগুলো আছে, স্মৃতিবিজড়িত যে জিনিসগুলো আছে তা সংরক্ষিত হওয়া দরকার। আমি সংরক্ষণ করছি। হুমায়ূন আহমেদের ভাই-বোনরা আছেন তাদের কাছেও কিছু জিনিসপত্র আছে, তারাও সংরক্ষণ করছেন তাদের মতো করে। হুমায়ূন আহমেদের সন্তানরাও তাদের মতো করে স্মৃতি সংরক্ষণ করছেন। এগুলো একত্রিত করে একটা জায়গায় রাখতে পারলে খুব ভালো হতো। এ উদ্যোগটা আমি নেওয়ার চেষ্টা করছি তিন বছর ধরে। আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ যেখানে আছেন, হুমায়ূন আহমেদের নিজের জায়গা, নিজ হাতে গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীতে জাদুঘরটা হলে ভালো হবে। যারা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে হুমায়ূন সমাধিতে যান তারা যেন জাদুঘরটা দেখতে পারেন সে চেষ্টা করছি। 

 

আহসান হাবীব বলেছিলেন একটা পারিবারিক জাদুঘর করার ইচ্ছা আছে তাদের। এক্ষেত্রে কি কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে? হুমায়ূন আহমেদের যে বিপুল পাঠকগোষ্ঠী- এ ক্ষেত্রে কি শুধু হুমায়ূন আহমেদের একক জাদুঘরই হওয়া উচিত বলে মনে করেন?  

পারিবারিক একটা জাদুঘর অবশ্যই প্রত্যেক পরিবারে থাকতে পারে। একটা মানুষ অনেক ক্ষেত্রে পরিবার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে উঠে যায়। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের কিংবদন্তি। যিনি আকাশ স্পর্শ করেন তাকে পরিবার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে চিন্তা করা উচিত বলে মনে করি। তবে কোন জিনিসটা হুমায়ূন আহমেদ জাদুঘরে থাকবে আর কোনটা পারিবারিক জাদুঘরে থাকবে তা আমাদের সবার ভাবার দরকার আছে। হুমায়ূন আহমেদ প্রথমে পরিবারের অংশ কিন্তু সবচেয়ে ওপরে উনি সবার অংশ। যে বাঙালি পাঠক জীবনে একটিমাত্র বই পড়েছে, সেও হুমায়ূন আহমেদকে পড়েছে। সব পাঠকের হৃদয়ের কথা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে সবাই চাইবে হুমায়ূন আহমেদের এককভাবে একটি জাদুঘর হোক।

 

হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি কমিটির কথা বলছিলেন...

হুমায়ূন আহমেদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হওয়া উচিত ছিল এত দিনে।

হুমায়ূন আহমেদ বিষয়ক যাবতীয় সিদ্ধান্ত সেই ট্রাস্ট থেকেই হওয়া উচিত। হুমায়ূন আহমেদকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া, জন্মদিন পালন, মৃত্যুবার্ষিকী সবকিছুই ওই ট্রাস্ট থেকেই হওয়া উচিত। যেখানে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সবাই তো থাকবেনই, পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী মহল ও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ থাকা উচিত নীতিনির্ধারণের জন্য। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এখনো তা করতে পারিনি। আমি বারবারই চেষ্টা করেছি এটা করতে। কথা দিচ্ছি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই এরকম কিছু একটা হবে ইনশা আল্লাহ।

 

একটা সড়ক হুমায়ূন আহমেদের নামে করার দাবি পাঠকভক্তদের অনেক দিন থেকেই...

এ বিষয়ে ভক্তরা উদ্যোগ নিতে পারে। আমি ভক্তদের সঙ্গে আছি। ভক্তরা যখন একত্রিত হয় তখন অনেক বড় কিছু করা যায়। সরকারের গত টার্মের একজন মন্ত্রী যিনি হুমায়ূন আহমেদের খুবই ঘনিষ্ঠজন, তার সঙ্গে একবার কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, এটা নিজ থেকে করা যায় না, আবেদন করতে হয়। আবেদন এলে করা উচিত। হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা সড়ক ও জনপদ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আবেদন করতে পারেন। আমি পাশে আছি। কোথায় কী লাগবে আমি করব। যে কোনো কিছু চাওয়ার একটা লিগ্যাল পথ আছে। আমার মনে হয় সে পথে হাঁটার চেষ্টা করলে পথ বেরিয়ে আসবে। আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। 

 

হুমায়ূন আহমেদ ভক্তরা নিজেরাও নানা বিভাজনে ভাগ হয়ে আছে...

আমরা বাঙালিরা সবকিছুতেই বিভক্ত হয়ে পড়ি। দেশের কোনো বিষয়েই আমরা এক হতে পারি না। সেখানে হুমায়ূন আহমেদের বিষয়ে এক হওয়া যাবে এটা তো অকল্পনীয়। একটু আগেই যে ট্রাস্টি বোর্ড করার কথা বলছিলাম এটা হলে আমি ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে আবেদন করব যে হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে যত অনলাইন প্লাটফর্ম আছে, ওয়েবসাইট আছে, ফেসবুক পেজ আছে, সেখানে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করা হয়। শুধু হুমায়ূন আহমেদে আটকে থাকে না। ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে এদের মনিটরিংয়ের আওতায় আনা উচিত। হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে যাই হোক সেটা সম্মিলিত কণ্ঠ হওয়া উচিত। এ সম্মিলিত কণ্ঠের জন্যই আমি বার বার আবেদন জানাচ্ছিলাম। আমি ক্লান্ত, একা কণ্ঠ তুলতে তুলতে। এর চেয়ে জোর আর আমার নেই। হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে যে কোনো সৎ আয়োজনে আমি চাই হুমায়ূনভক্তরা একত্রিত হোক। আমি পাশে আছি।

 

‘কিন্নরদল’ নামে একটি সংগঠন করেছেন...

কিন্নরদল আসলে আমার একটা স্বপ্ন। আমি এতদিন কাজ করে এসেছি হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন নিয়ে। আমারও যে একটা স্বপ্ন থাকতে পারে, এরকম করে কখনো ভাবিনি। আমি সব সময় বলি, হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন পূরণই আমার স্বপ্ন। তার পাশাপাশি কিন্নরদল আমার নতুন একটা স্বপ্ন। আমাদের সমাজে তরুণরা অনেকেই আছে যারা ভালো কিছু করতে চায় ক্রিয়েটিভ সেক্টরে। কিন্তু সেই ভালো কিছু আসলে কীভাবে করতে হবে সে পথটা হয়তো জানে না। এরকম সম্ভাবনাময় যারা আছে তাদের নিয়ে আমরা সবাই মিলে পথ খুঁজে নেব ভালো কিছু করার জন্য। ভালো তথ্যচিত্র, ভালো কিছু গান, ভিডিওগ্রাফি; যা দেখে মানুষ কিছুটা হলেও অন্যভাবে পজেটিভ চিন্তা করার উৎস খুঁজে পাবে। এরকম ভালো কিছু করার জন্য একদল মানুষ একত্রিত হচ্ছি, তারাই কিন্নরদল। তবে একটি জায়গায় আমরা সবাই একটা সুতায় হৃদয়ে হৃদয়ে বাঁধা। সুতাটা হচ্ছে আমরা সবাই হুমায়ূনভক্ত।

সর্বশেষ খবর