বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আজ ফোক ফেস্ট মাতাবেন যারা

পান্থ আফজাল

আজ ফোক ফেস্ট মাতাবেন যারা

বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে লোকধারার গান। শুধু দেশের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় নয়, দেশের বাইরেও সমানভাবে জনপ্রিয় হয়েছে আমাদের লোকসংগীত। একঘেয়েমি শহুরে যান্ত্রিক জীবনের ছাইপাঁশ ঝেড়ে প্রতি বছর শীতের ঠান্ডা পরশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক লোকগানের অমীয় সুধায় বাঙালি নিজেকে ডুবিয়ে নেয়। সংগীতপিপাসুরা বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের সুর-লয়ের খেলায় মনকে ভিজিয়ে নিতে ভিড় করে আর্মি স্টেডিয়ামে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নেই;  বরাবরের মতো এবারও সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লোকসংগীতের উৎসব ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট-২০১৯’। পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার লোকসংগীতের সবচেয়ে বড় আসর। উৎসবের উদ্বোধন হবে আজ। চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের আসরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬টি দেশ থেকে ২০০ জনেরও বেশি লোকসংগীতশিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নেবেন একই মঞ্চে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শ্রোতারা স্টেডিয়ামে উপভোগ করবেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেরা লোকসংগীতশিল্পীদের পরিবেশনায় শিকড় সন্ধানী গান। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের প্রথম দিন গান গাইবেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত বাউলশিল্পী শাহ আলম সরকার, ভারতের দালের মেহেন্দি ও জর্জিয়ার শেভেনেবুরেবি। সামিনা হোসেন প্রেমার ভাবনা নৃত্যদল নৃত্য পরিবেশন করবে। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে লোকসংগীত উৎসব সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা টেলিভিশন।

সামিনা হোসেন প্রেমার ভাবনা নৃত্যদল

নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার সামিনা হোসেন প্রেমার মাধ্যমে ভাবনা নৃত্যদল ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রথমদিকে ভাবনা নৃত্যদল বিভিন্ন নৃত্য আঙ্গিকের মাধ্যমে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথকে মঞ্চে নিয়ে আসতে চায়। নৃত্যদলটি বিশ্বাস করে এর মাধ্যমে আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং শিকড়ের সংরক্ষণ করা ও সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এছাড়া ভাবনা নৃত্যদল বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য, রায়বেশে এবং আধুনিক ধারার নাচ পরিবেশন করে থাকে। ইতিমধ্যে তারা ‘ভানুসিংহের পদাবলী’, ‘শকুন্তলা’, ‘শাপমোচন’ ইত্যাদি পরিবেশন করেছে।

 

জর্জিয়ার শেভেনবুরেবি

শেভেনবুরেবির লোকগোষ্ঠীর সদস্যরা জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন। তারা তাদের অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ফোকগান গেয়ে থাকেন। গ্রুপের প্রতিটি সদস্য লোকজ বাদ্যযন্ত্র বাজাতে ও নাচতে পারেন। শেভেনবুরেবি সাফল্যের সঙ্গে ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছে। এরা নিয়মিতভাবে জর্জিয়ার অঞ্চলগুলোতে লোকগান প্রচারের ব্যবস্থা করেন। তারা লোকগোষ্ঠী পুরনো লোকগানগুলো আবিষ্কার করতে এবং সেগুলোকে সমাজে পরিচয় করিয়ে দিয়ে থাকেন। 

 

বাংলাদেশের শাহ আলম সরকার

গ্রাম-গঞ্জ-শহর নির্বিশেষে বাউলশিল্পী হিসেবে একজন জীবন্ত কিংবদন্তি শাহ আলম সরকার। জন্ম বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার কুড়িগাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবারে। দাদা গোলাম আলী বেপারি দরবারি সংগীতের সঙ্গে খ্যাতিমান হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বড় কাকা গোলাম মহিউদ্দিন বেপারি যিনি অসংখ্য গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে প্রশংসিত। আরেক কাকা ‘আমি তো মরেই যাব’ খ্যাত সাধক মরমি বাউল কবি আবদুস সাত্তার মোহন্ত, যার কাছে তার সংগীতজীবনের হাতেখড়ি। ফুফাজান আবদুল করিম মুন্সী তিনিও দরবারি সংগীতের শিল্পী হিসেবে সুপরিচিত। শাহ আলম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গানের দীক্ষা নেন বিখ্যাত পালাগান শিল্পী আবুল সরকারের কাছে। তিনি প্রায় আড়াই হাজার গানের রচয়িতা ও সুরকার। তার প্রকাশিত গানের ক্যাসেট ও সিডির সংখ্যা সাড়ে ছয়শর অধিক। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী। প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি গীতিকার হিসেবে কাজ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গান হচ্ছে- ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়, আকাশটা কাঁপছিল ক্যান, বান্ধিলাম পিরিতের ঘর, খায়রুন লো তোর লম্বা ইত্যাদি। তার ‘আকাশটা কাঁপছিল ক্যান’ গানটি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ ছবিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। তিনি ২০১৬ সালে গীতিকার হিসেবে ‘রাহে ভা-ার এনোবল অ্যাওয়ার্ড’ পান। 

 

ভারতের দালের মেহেন্দি

ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, লেখক, প্রযোজক, সম্পাদক এবং পরিবেশবিদ দালের মেহেন্দি। তার মূল নাম ‘দলের সিং’। তাকে ভাংড়া সংগীতকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দেওয়া এবং তার যুগের পূর্বের সময়কার অচলচ্চিত্রীয় সংগীতকে বলিউডের সংগীতের সমান্তরালে নিয়ে আসার কৃতিত্ব দেওয়া হয়। এই ভারতীয় পপ ব্যক্তিত্ব অবিরাম নেচে নেচে গান গাওয়া, স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর, পাগড়ি এবং দীর্ঘ আলখাল্লার জন্য পরিচিত।

সর্বশেষ খবর