শিরোনাম
সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সমুদ্রসৈকতে বসছে নাচের মহোৎসব

পান্থ আফজাল

সমুদ্রসৈকতে বসছে নাচের মহোৎসব

আর কটা দিন। এরপর সৌন্দর্যবিধৌত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার সাজবে ভিন্ন আঙ্গিকে। সমুদ্রের মুহুর্মুহু ঢেউ আর নূপুরের ঝঙ্কারে আন্দোলিত হবে সমুদ্রসৈকত। দেশ-বিদেশের অগণিত নৃত্যশিল্পী চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ আনন্দ উৎসবে মিলিত হয়ে একই ধ্বনিতে মুখরিত হবেন। শীতের অতিথি পাখির মতো এই কটা দিন সমুদ্রতটে বসবে নানা সংস্কৃতির মানুষের মেলা। উৎসবের আমেজে মুখর হবে চারপাশ।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল-২০১৯’। চার দিনের নাচের উৎসব বসবে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে। চলতি মাসের ২২ থেকে ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ নাচের সবচেয়ে মহোৎসব। এদিন বিশ্বব্যাপী নৃত্যশিল্পীদের সংগঠন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স-এশিয়া প্যাসিফিক’ বার্ষিক সভার আয়োজন করবে। একই সঙ্গে ডব্লিউডিএ-এপির উদ্যোগে বাংলাদেশ শাখা নৃত্যযোগ প্রথমবারের মতো ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল’ নামের একটি দ্বিবার্ষিক নৃত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। জানা যায়, বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পর্যটনের মেলবন্ধন রচনাই এর মূল উদ্দেশ্য। এশিয়ার ১৫টি দেশ থেকে এ উৎসবে যোগ দেবেন প্রায় দুই শতাধিক নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক ও কোরিওগ্রাফার।

এর আগে এই নাচের মহোৎসব নিয়ে হয়ে যাওয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাত্রার পরিচালক সানাউল আরেফিন, নৃত্যযোগের সভাপতি আনিসুল ইসলাম হিরু, সাধারণ সম্পাদক (দক্ষিণ এশিয়া) ডব্লিউডিএ-এপি লুবনা মারিয়াম, ডব্লিউডিএ-এপির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জুডিথা অল মাকার, জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ, মুনমুন আহমেদ, তামান্না, অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু, শানারৈ দেবী শানু প্রমুখ। নৃত্যযোগের সাধারণ সম্পাদক লুবনা মারিয়াম বলেন, ‘নাচ কেবল বিনোদন নয়, অভিব্যক্তি প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। নাচের এই উৎসব সাংস্কৃতিক-কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক-পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’

নাচের এতবড় আসর নিয়ে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে এই ভেবে যে, প্রথমবারের মতো এমন বড় একটি নাচের মহোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নাচ করতে যেতাম। ৫০টির বেশি দেশে গিয়েছি। ভাবতাম আমাদের দেশে কবে সেরকম উৎসব হবে! বিশ্বের নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে কবে নাচের এমন উৎসব করব। তবে নাচের এ ধরনের বড় আসরের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। মাঝখানে তো নাচের একটা দুঃসময় গেছে। আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। যে কারণে কিছুটা পিছিয়েও গেছি। তবে লুবনা ও হিরুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি খুবই খুশি। এতবড় একটা মহান উদ্যোগের সঙ্গে থাকতে পারাটা আনন্দের। আমি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’ নৃত্যযোগের সভাপতি ও নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসলাম হিরু উৎসব সম্পর্কে বলেন, ‘এই প্রথম বাংলাদেশে নৃত্য নিয়ে এ ধরনের আসর হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই আনন্দের। ইচ্ছা রয়েছে প্রতি বছর সমুদ্রসৈকতে এ উৎসব করার। এবার সৈকতে করার অনুমতি পাইনি নিরাপত্তাজনিত কারণে। আবদ্ধ জায়গায় করতে হচ্ছে। তবে পরবর্তীতে সমুদ্রসৈকতেই হবে নাচের আসর। এবারের নাচের এই মহউৎসবে ১৫ দেশের প্রায় দুই শতাধিক নৃত্যশিল্পী পারফর্ম করবে। বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। আসলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের সমুদ্রসৈকতকে বিশ্বের সব পর্যটকের কাছে পরিচিত করা।’ প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স- এশিয়া প্যাসিফিকের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন হচ্ছে ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল’। কক্সবাজারের কক্স কার্নিভালে বিকাল ৫টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল আহমেদ। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তৃতীয় দিনে থাকবেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস। আর শেষ দিনে থাকবেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার শ্রী অনিন্দ্য ব্যানার্জি ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভার অংশ হিসেবে থাকবে বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতা ও বক্তব্য উপস্থাপন, সেমিনার, কর্মশালা, নৃত্য পরিবেশনা। এ বছরের বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘দূরত্বের সেতুবন্ধ’, অর্থাৎ সমাজের ভিতরকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দূরত্বকে নাচের মাধ্যমে পূরণের ধারণা তুলে ধরা। নিবন্ধনের মাধ্যমে আগ্রহীরা এ উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। চার দিনব্যাপী উৎসবে মারমেইডে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হবে সেমিনার, মাস্টার ক্লাসসহ বিভিন্ন সেশন। সমাপনী দিনে কক্স কার্নিভালে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ থেকে রাত ৯টা ১০ পর্যন্ত নৃত্যাঞ্চল ও সৃষ্টির অংশগ্রহণে হবে ‘বাঁদি-বান্দার রূপকথা’। পারফর্ম করবেন শিবলী, নীপা ও হিরু। নির্দেশনায় সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশ, এশিয়া ও এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ঘরানার নৃত্য। উৎসবে যোগ দিতে বিনামূল্যে নিবন্ধন করা যাবে অনলাইন বা উৎসবস্থলে। উৎসবের আয়োজনে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স- এশিয়া প্যাসিফিক ও নৃত্যযোগ। ইভেন্ট পার্টনার হিসেবে আছে মাত্রা। সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিজম বোর্ড। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এ আয়োজনের অ্যাকাডেমিক সহযোগী। ভেন্যু পার্টনার মারমেইড বিচ রিসোর্ট।

সর্বশেষ খবর