সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → শহীদুল্লাহ ফরায়জী

আমি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত

আলী আফতাব

আমি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত

২০১০ সালে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে কয়েক সেকেন্ডের একটি দৃশ্যে দেখা যায় জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীকে। প্রায় ৯ বছর পর একই প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিয়েছেন তিনি। এছাড়া গতকাল বশির আহমেদ পদক পেলেন তিনি। সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সাক্ষাৎকার।

 

সম্প্রতি একটি মুঠোফোন বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

এবারের বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিয়েছি একটি নৈতিক বার্তা বিতরণের প্রয়োজনে। বিজ্ঞাপনচিত্রের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বই। বইকে কেন্দ্র করে আবর্তিত চিত্রনাট্য আমাকে দারুণ প্রলুব্ধ করেছে। কারণ বই হচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহে সবচেয়ে ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক। বই-ই শিক্ষা দিয়েছে জীবন অসীম ও অনন্ত। বই-ই মানবজাতির জন্য আলো, ন্যায় আর মর্যাদা বিতরণ করতে পারে। বই সূর্যের মতো তেজোদীপ্ত সাগরের মতো অতলান্ত। সুতরাং বইয়ের সৌন্দর্যের প্রতি আকুলতাই আমাকে বিজ্ঞাপন করতে বাধ্য করেছে। এই বিজ্ঞাপন সর্বজনস্বীকৃত প্রশংসায় আমাকে প্লাবিত করেছে যা ধারণাতীত। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত আমি। মাননীয় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রিসহ সরকারি উচ্চপদস্থ আমলা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি সাহিত্যিক এবং আমার সংগীত জগতের অগণিত শুভাকাক্সক্ষীর ভালোবাসা ও প্রশংসায় আমি উদ্দীপ্ত। একটি বিজ্ঞাপন এত আলোড়ন, এত মুগ্ধতা, এত হৃদয়স্পর্শী ঘটনার জন্ম দিতে পারে তা আমার কল্পনারও অতীত ছিল। যেখানেই যাচ্ছি মানুষের অন্তরের নির্যাস দিয়ে আমি সংবর্ধিত হচ্ছি। যদিও বিজ্ঞাপনচিত্রের সবটুকু প্রশংসা প্রাপ্য বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের। যদি কোনো কাজে জীবন পিপাসার অনুসন্ধিৎসা থাকেÑ উজ্জ্বল নান্দনিকতার প্রকাশ থাকে তা মানুষ গ্রহণ করে। এ বিজ্ঞাপন আমার ভিতরের একটা গভীর গোপনীয়তাকে প্রকাশ করেছে। এখন ভালোবাসায় বোঝাই-করা আমার হৃদয়তরী।

 

শিল্পী বশির আহমেদ পদক পেলেন, এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

এটা খুবই মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা, যা পেয়ে আমি আত্মায় প্রশান্তি অনুভব করছি। আমার মনে হচ্ছে এ সম্মাননায় আমার সংগীত জীবনের অভিষেক হলো। বশির আহমেদ, যিনি সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন সংগীতের চরণতলে। তিনি সংগীতের মাঝেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন মানুষের অনন্ত ঐশ্বর্যকে। যিনি সুর করেছেন আত্মার অনুভূতি ও হৃদয়ের ব্যাকুলতা দিয়ে। তার নীতিবোধ ও সৌন্দর্যবোধ আমাদের অনুসরণীয়।

বশির আহমেদ সম্মাননা সংগীত জগতের ভিন্নতর এক মর্যাদাপূর্ণ মাত্রা দেবে। আর এ কাজে আত্মনিয়োগের জন্য হোমায়েরা বশির ও রাজা বশির বিরতিহিন প্রশংসা লাভ করবে।

 

গান কম লেখছেন কেন?

গান কম লিখছি এটা সত্য। কারণ গানের রসদ সঞ্চয় করার জন্য কবিতায় সৌন্দর্য অনুসন্ধান করেছি, কবিতার অতল তলে রূপের মহিমা প্রত্যক্ষ করেছি এবং কবিতার অস্ফালন উদযাপন করেছি। সংগীতের চির উজ্জ্বল কালিতে কবিতার একটা বই সম্পন্ন করেছি যা অচিরেই প্রকাশ পাবে। বইয়ের নামকরণ করেছি ঐশ্বরিক অক্ষর। যা অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশ পাবে। এখন আবার গানের সৌন্দর্যে ডুব দেব। গান, কবিতা, বিজ্ঞাপনÑ সবকিছু আমার গোপনতম মৌলিক সত্তাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আত্মজিজ্ঞাসা আত্মোপলব্ধিকে বেগবান করে, প্রাণবন্ত করে। সংগীত আমার আত্মার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। কোনো জনপ্রিয়তার লোভ বা মোহ বা কোনো আকর্ষণ আমাকে গান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

 

এখন অতিসহজেই গীতিকার হওয়া যায়, এটাকে কীভাবে দেখছেন?

সহজে গীতিকার হওয়ার কোনো মাধ্যম নেই। প্রগাঢ় জীবনবোধ, জীবন সম্পর্কে প্রত্যয় ও জীবনের অনুসন্ধিৎসা গভীর হলেই গীতিকার হওয়া যায়। জীবনজিজ্ঞাসা, জীবনপিপাসা এবং আকাশস্পর্শী কাব্য চেতনা না থাকলে সাময়িক জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে কিন্তু গীতিকবিতার মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে না। চৈতন্যের দ্বারা, বিবেকের দ্বারা তাড়িত হয়েই তো গান লিখতে হবে। জীবনের প্রচ- তাড়না অন্ধকার ও ভয়ঙ্কর আর্তনাদ জেনেই তো গান লিখতে হয়। মানুষের স্বপ্ন ও ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা আত্মসাৎ করে, জীবন যন্ত্রণার হলাহল পান করে গান নির্মাণ করতে হয়।

সর্বশেষ খবর