শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → আলী যাকের

তোমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন!

তোমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন!

বিশিষ্ট নাট্যজন আলী যাকের। মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ে তিনি অনবদ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই উত্তাল স্মৃতি ও ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন-  পান্থ আফজাল

 

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সেই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি জানতে চাই...

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতে বেনাপোল থেকে যশোরের দিকে হাঁটছিলাম। সে সময় জিপ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ইংরেজিতে চিৎকার করে আমাকে বলছিল, ‘ইউ আর নাউ ফ্রি’, মানে ‘তোমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন!’ এই আনন্দের সংবাদ শুনে তৎক্ষণাৎ মাটিতে বসে পড়লাম। তখন বিকাল সাড়ে ৪টা। মনে আছে, আমি এরপর আনন্দে আত্মহারা হয়ে খেতের পাশ দিয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ি। সেই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার নয়; মুক্ত দেশের সোঁদা মাটির ধূলিকণা ছিল পরম আপন। অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে।

 

এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

বিজয় নিয়ে আমার অনুভূতি অন্যরকম। এই সময়েও আমি বিজয়ের কথা ভাবতে গেলে ফিরে যাই সেই স্মৃতিবহুল দিনে। বর্তমান অবস্থা ভাবি না। কারণ, এখনকার অবস্থা ভাবলে ভালো লাগে না। সব সময় মনে হয়, সেই উত্তাল ১৬ ডিসেম্বরে ফিরে যাই।

 

সেকালে নাটক মঞ্চায়নে সার্বিক অবস্থাটা কেমন ছিল?

সে সময় মানুষ সন্ধ্যাবেলা বাইরে বের হতে ভয় পেত। তাই নাটক মঞ্চায়ন হতো সকালবেলা। আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে রবিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আমরা বেলা ১১টা থেকে নাটক মঞ্চস্থ করতাম। মনে আছে, ওই সময় আমরা সকাল আটটায় রবিবার ব্রিটিশ কাউন্সিলে হল বুক করে নাটক করেছিলাম। তবে ৮ রবিবার শেষ হওয়ার পর আমরা আর হল পাইনি ব্রিটিশ কাউন্সিলে। এরপর মহিলা সমিতিতে নাটক মঞ্চস্থ করার প্ল্যান করি। পরে সারা যাকের জরা-জীর্ণ মহিলা সমিতির পুরোটা ঝেড়ে-মুছে নাটক মঞ্চায়নের জন্য প্রস্তুত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোনো এক রবিবার আমরা মহিলা সমিতিতে প্রথমবারের মতো ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটি মঞ্চস্থ করি।

 

আপনার নির্দেশিত নাটকে তখন কে কে অভিনয় করেছিলেন?

‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে অভিনয় করেছিল সারা আমিন, যাকে আজকে সারা যাকের হিসেবে চিনে সবাই। আরও অভিনয় করেছিল ডা. নায়লা খান, আতাউর রহমান, বাদল রহমান, রশীদ হায়দার। এখন তো প্রতিদিন ঢাকা শহরে দর্শনীর বিনিময়ে কোনো না কোনো নাটক হচ্ছে। মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মঞ্চনাটক দেখতে আসছে, ভাবতেই ভালো লাগে।

 

পরবর্তীতে কোন নাটকটি নাগরিক মঞ্চস্থ করেছিল?

নাগরিকের দ্বিতীয় নাটক ছিল ‘বিদগ্ধ রমণীকুল ও তৈল সংকট।’ এটিও আমি নির্দেশনা দিয়েছিলাম। মূলত দুটো নাটক মিলে তৈরি হয়েছিল নাটকটি। মলিয়রের রূপান্তরে প্রথম অংশ ‘বিদগ্ধ রমণীকুল’ ছিল ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে। দ্বিতীয় অংশ ‘তৈল সংকট’ও ছিল ৪০ মিনিটের। নাট্যরূপ ও রূপান্তর করেছিলেন রশীদ হায়দার।

 

‘গ্যালিলিও’ সৃষ্টি না হলে আজকের আলী যাকের হতো না’- কথাটা কতটুকু যৌক্তিক?

প্রফেসর আবদুস সেলিমের অনুবাদে নাগরিক মঞ্চায়িত ব্রেটল ব্রেশটের ‘গ্যালিলিও’ নাটকটিতে আমি কিন্তু ‘গ্যালিলিও’ চরিত্রে অভিনয় করি। এই নাটকটি আমার পরিচয়। তাই এটি সৃষ্টি না হলে আজকের আলী যাকের হতো না।

 

‘বড় দলের প্রভাবে ছোট দল কম নাটক মঞ্চায়নের সুযোগ পায়’- কথাটা সত্য?

আগে একটা সময় এই বিষয়টি ছিল। কিন্তু এখন কিছুটা হলেও কমেছে। এখন আমার জানা মতে, ছোট দল মাসে ১টা দিন হল পায়। আবার এমনও হয়েছে, ছোট দলগুলো বড় দলগুলোর জন্য অডিটোরিয়াম ছেড়ে দিয়েছে। আর হলের সংখ্যায় তো কম। তিনটি হল শিল্পকলায়, আছে মহিলা সমিতি হল। আমরা কিন্তু বিশেষ দিবসে নাটক প্রদর্শনী করি না, অদিবসেও করি। তবে ছোট দলগুলোর ব্যাপারে ভাবা উচিত। আর পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চনাটকের জন্য হল হওয়া দরকার। আমি অবশ্য এ বিষয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি। আমরা বড় দলগুলোও এই বিষয়ে সঙ্গে থাকব সব সময়।

 

নাটক রূপান্তর করছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, আবার লিখছেনও। সামনে আপনার লেখা কোনো বই পাব কি?

নাটক রূপান্তর, নির্দেশনা, লেখা- সবই হচ্ছে। পত্রিকায় কিছু লিখছি। আগে আমি আমার আত্মকথন বের করেছিলাম। সামনে ‘মধ্যাহ্ন-অপরাহ্ণ’ পরিপূর্ণভাবে বই আকারে বের করার পরিকল্পনা আছে।

 

নাগরিকের সামনের পরিকল্পনা কী?

নাগরিক ‘গ্যালিলিও’র কয়েকটি প্রদর্শনী করেছে। কিছুদিন আগে ৭টি নতুন নাটক নিয়ে শেষ হলো নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ‘নতুনের উৎসব’। আর সামনে নাগরিক আরও কিছু নতুন নাটক মঞ্চস্থ করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর