সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জমকালো আয়োজনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান

❖ আজীবন সম্মাননায় এ টি এম শামসুজ্জামান-প্রবীর মিত্র-সুজাতা-আলমগীর ❖ সেরা ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘পুত্র’ ❖ অভিনেতা শাকিব-ফেরদৌস-শুভ-সাইমন ❖ অভিনেত্রী জয়া-তিশা

আলাউদ্দীন মাজিদ

জমকালো আয়োজনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান

জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রশিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গতকাল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে বিকাল ৪টায় শুরু হয় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। অতিথিদের আসন গ্রহণের পর শুরু হয় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ। অনুষ্ঠানে তথ্যসচিব আবদুল মালেকের স্বাগত বক্তব্যের পর সভাপতি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

শুরুতে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তদের ও পরে অন্য বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ২০১৭ সালের আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করেন এ টি এম শামসুজ্জামান ও সুজাতা, ২০১৮ সালের জন্য এম আলমগীর ও প্রবীর কুমার মিত্র। মোট ২৮টি বিভাগে বিশিষ্ট নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীকে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রদান করে সরকার।

২০১৭ সালের পুরস্কার হিসেবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে রূপসজ্জায় পুরস্কার নিতে মঞ্চে আসেন জাভেদ মিয়া এবং পোশাক ও সাজসজ্জায় রিটা হোসেন (তুমি রবে নীরবে)। এরপর শব্দগ্রাহক রিপন নাথ (ঢাকা অ্যাটাক) পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ বছর সেরা অভিনেতা হিসেবে যৌথভাবে পুরস্কার পান শাকিব খান (সত্তা) ও আরিফিন শুভ (ঢাকা অ্যাটাক)। একই বছর ‘হালদা’ ছবিতে অভিনয় করে নুসরাত ইমরোজ তিশা পান সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। সেরা ছবির পুরস্কার পায় দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ‘গহীন বালুচর’ ছবির জন্য ২০১৭ সালের সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান বদরুল আনাম সৌদ। এছাড়াও অন্য বিভাগগুলোতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ (তুমি রবে নীরবে), পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা শাহাদাৎ হোসেন (গহীন বালুচর), খলচরিত্রে জাহিদ হাসান (হালদা), পার্শ্বচরিত্রে সুবর্ণা মুস্তাফা (গহীন বালুচর), রুনা খান (হালদা), শিশুশিল্পী নাইমুর রহমান আপন (ছিটকিনি), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার অনন্য সামায়েল (আঁখি ও তার বন্ধুরা), প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিশ্ব আঙিনায় অমর একুশে), কাহিনিকার আজাদ বুলবুল (হালদা), চিত্রনাট্যকার তৌকীর আহমেদ (হালদা), সংলাপ রচয়িতা বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর), কৌতুক চরিত্রে অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু (গহীন বালুচর), পুরুষ কণ্ঠশিল্পী জেমস (সত্তা), নারী কণ্ঠশিল্পী মমতাজ (সত্তা), গীতিকার সেজুল হোসেন (সত্তা), সুরকার বাপ্পা মজুমদার (সত্তা), চিত্রগ্রাহক কমল চন্দ্র দাস (গহীন বালুচর), নৃত্য পরিচালক ইভান শাহরিয়ার সোহাগ (ধ্যাত্তেরিকি) ও শিল্পনির্দেশক উত্তম কুমার গুহ (গহীন বালুচর)।

২০১৮ সালের সেরা অভিনেতা হন যৌথভাবে ফেরদৌস (পুত্র) ও সাইমন সাদিক (জান্নাত)। এ বছর ‘দেবী’র জন্য জয়া আহসান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। আর সেরা ছবির পুরস্কার পায় সাইফুল ইসলাম মান্নু (পুত্র)। এ বছর ‘জান্নাত’ ছবির জন্য মোস্তাফিজুর রহমান সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান। অন্যান্য ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- সংগীত পরিচালক ইমন সাহা (জান্নাত), পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা আলী রাজ (জান্নাত), খলচরিত্রে অভিনেতা সাদেক বাচ্চু (একটি সিনেমার গল্প), পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী সুচরিতা (মেঘকন্যা), শিশুশিল্পী ফাহিম মুহতাসিম (পুত্র), শিশুশিল্পী (বিশেষ) মাহমুদুর রহমান (মাটির প্রজার দেশে), প্রামাণ্যচিত্র ফরিদুর রেজা সাগর (রাজাধিরাজ রাজ্জাক), কাহিনিকার সুদীপ্ত সাইদ খান (জান্নাত), সংলাপ রচয়িতা হারুন রশীদ (পুত্র), পুরুষ কণ্ঠশিল্পী নাইমুল ইসলাম রাতুল (পুত্র), নারী কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন (পুত্র) ও আঁখি আলমগীর (একটি সিনেমার গল্প), গীতিকার কবির বকুল (নায়ক) ও জুলফিকার রাসেল (পুত্র), সুরকার রুনা লায়লা (একটি সিনেমার গল্প), নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল (একটি সিনেমার গল্প), কৌতুক অভিনেতা মোশাররফ করিম (কমলা রকেট) ও আফজাল শরীফ (পবিত্র ভালোবাসা), চিত্রগ্রাহক জেড এইচ মিন্টু (পোস্টমাস্টার ৭১), শব্দগ্রাহক আজম বাবু (পুত্র), সম্পাদক তারিক হোসেন বিদ্যুৎ (পুত্র), শিল্প নির্দেশক উত্তম কুমার গুহ (একটি সিনেমার গল্প), রূপসজ্জায় ফরহাদ রেজা (দেবী) এবং শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জায় সাদিয়া শবনম (পুত্র)।

পুরস্কার প্রদান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নির্মাতাদের ভালো ছবি নির্মাণের তাগিদ দেন যাতে সব শ্রেণির দর্শক আবার সিনেমা হলে ফিরে আসে এবং এদেশের ছবি দেশ-বিদেশে আবারও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। তিনি এফডিসির উন্নয়ন, ফিল্ম আর্কাইভ ভবন, গাজীপুরে ফিল্মসিটি নির্মাণ, অসহায় শিল্পীদের অনুদান প্রদানসহ বর্তমান সরকারের নানা কাজ ইতিমধ্যে বাস্তবায়নের বিবরণ তুলে ধরে চলচ্চিত্রকাররা যাতে অসহায় হয়ে না পড়েন তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান সময়োপযোগী করা, এফডিসিকে অত্যাধুনিক করা, সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্স নির্মাণে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের আগামী পরিকল্পনার কথাও জানান। যারা সম্মাননা পেয়েছেন ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি আরও মানসম্মত কাজ দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পকে সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানান।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হয় তারকাদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব উপস্থাপনা করেন চলচ্চিত্র তারকা ফেরদৌস ও পূর্ণিমা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথমেই সত্তা ছবির ‘না জানি কোন অপরাধে’ গান নিয়ে মঞ্চে আবির্ভূত হন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। তিনি ‘না জানি কোন অপরাধে’ গানটি গেয়ে শুনান। এরপর গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলম। এরপর ইমরান ও কণা ‘ওহে শ্যাম’ গানটি পরিবেশন করেন। ইভান শাহরিয়ার সোহাগের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন চিত্রনায়িকা আঁচল-জয় চৌধুরী। দুজন বাংলা ছবির কয়েকটি জনপ্রিয় গানের ফিউশনে পারফরম করেন। নাচ শেষে নকীব খান সোলসের জনপ্রিয় গান ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ পরিবেশন করেন। এরপর সাব্বির ও লিজা পরিবেশন করেন ‘তুমি সাত সাগরের ওপার হতে আমায় ডেকেছ’ গানটি। এরপর চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও মাহিয়া মাহী একটি ফিউশন গানে পারফরম করেন। এরপর গান পরিবেশন করেন সামিনা চৌধুরী। তিনি ‘আমাকে তোমার কাছে’ গানটি পরিবেশন করেন। ওয়ার্দা রিহাবের একটি দেশাত্মবোধক নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জমকালো আয়োজন।

 

সর্বশেষ খবর