শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

আমি রাজনীতির নই গানের মনির খান

‘প্রেমের তাজমহল’ ছবিতে টাইটেল ট্র্যাকে কণ্ঠ দিয়ে জয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। রাজনীতির কারণে গান থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। সম্প্রতি রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন। পুরোদমে মন দিয়েছেন গানে। গান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- রাফিয়া আহমেদ

আমি রাজনীতির নই গানের মনির খান

আপনার নতুন ১০০টা গানের প্রজেক্ট নিয়ে একটু জানতে চাই।

আপনারা জানেন যে, অনলাইন ছাড়া বর্তমানে কোনো উপায় নেই আমাদের। আগে আমরা বিভিন্ন উৎসবে অপেক্ষায় থাকতাম কবে নতুন গানের ক্যাসেট বা সিডি প্রকাশ হবে। বেশ ঘটা করে ১০ থেকে ১২টি গানের একটা নতুন সিডি বের হতো কিন্তু এখন তা নেই। এখন সে আমেজটাও পাওয়া যায় না আর। এখন শুধু অনলাইন বা ইউটিউবের মাধ্যমে গান প্রকাশ পায়। তাই যুগের সঙ্গে তাল দিয়ে আমি আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছি। একটা হলো মনির খান অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল, আরেকটা এমকে মিউজিক টোয়েন্টিফোর। আমার পুরনো যে গান ছিল সেগুলো আমার মনির খান অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যাবে। তাছাড়া নতুন গানের চাহিদা তো আছেই ভক্তদের, তার জন্য নতুন ১০০টা গানের উদ্যোগ নিয়েছি আমি এবং মিল্টন খন্দকার ভাই। এখানে অন্যান্য গীতিকার ও সুরকারও আছেন। সিংহভাগ গান মিল্টন ভাইয়ের লেখা ও সুর করা। ইতিমধ্যেই আমরা প্রায় ৩০-৩৫টি গানের কাজ শেষ করেছি। মিল্টন ভাই ছাড়া আরও যাদের লেখা গান ও সুর আছে তারা হচ্ছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রফিকুজ্জামান, লিয়াকত আলী বিশ্বাস- এরকম আরও অনেক গুণী শিল্পীর গান এখানে পাওয়া যাবে।

 

আপনার এই নতুন প্রজেক্টটি কবে পাচ্ছি আমরা?

২০২০ সালের মধ্যে আশা করি আমার ভক্তদের উপহার দেব। দশটি-দশটি করে একেকটি অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে। আর এখন তো অডিওর সঙ্গে ভিডিওটা জড়িয়ে গেছে, যদিও আমি এই বিষয়টি মোটেও পছন্দ করি না। কারণ গান হলো শোনার বিষয়। আমরা এখনো যখন পুরনো দিনের গান শুনি তার জন্য ভিডিওর প্রয়োজন হয় না, মনের ভিতর গেঁথে থাকে গানগুলো। গান মূলত শোনার বিষয়, দেখার বিষয় নয়।

 

আপনার প্রায় ৪২টি অ্যালবামে অঞ্জনাকে নিয়ে একটি করে গান আছে। এই অঞ্জনার রহস্যটা কী?

আসলে সবার জীবনেই তো প্রেম এসেছে। প্রেম না থাকলে তার জীবন বৃথা। প্রেমে পড়েনি এমন কেউ নেই। প্রেম করে কেউ হাসছে আবার কাঁদছে। অঞ্জনা তেমনি একটি প্রেম।

 

সম্প্রতি ‘অঞ্জনা-২০২০’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ হয়। এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

পয়লা জানুয়ারি এমকে মিউজিকের ইউটিউবে প্রকাশ পায় ‘অঞ্জনা-২০২০’ শিরোনামের এই গানটি। এটি অঞ্জনাকে নিয়ে আমার ৪৩তম গান। শ্রোতাদের মধ্যে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার একটি প্রয়াস আমাদের এ গান। প্রকাশের পর থেকেই বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।

 

মাঝে অনেকটা সময় আপনি সংগীত জগতে প্রায় ছিলেনই না, এটা কেন?

আমার এই বিরতিতে আমি নিজের প্রতি নিজেই অবিচার করেছি। তা আমার বুদ্ধির ভুলেই হোক বা অন্য কারণেই হোক। আমি একটু রাজনীতিতে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। এটা আমি অকপটে স্বীকার করি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি গান থেকে দূরে ছিলাম। আমার সংগীত জগতের ভক্তরা, আজ আমার মনির খান হয়ে ওঠার পেছনে যাদের অবদান আছে তাদের মনে আমি আঘাত করেছি। এই বিষয়টি যখন আমি বুঝতে পেরেছি যে, সংগীতের মনির খান এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মনির খানের মধ্যে অনেক তফাৎ। তখনই আমি আবার সংগীত জগতে ফিরে আসি। আমি সংগীতের মনির খান, রাজনীতির মনির খান নই।

 

বাবার মতো শিক্ষক না হয়ে সংগীতের প্রতি আগ্রহ কেন জাগল?

বাবার উৎসাহ থেকেই আমি আজ মনির খান। ছোটবেলা থেকেই গান শিখতাম। গান শেখার ক্ষেত্রে বাবা আমাকে দারুণভাবে উৎসাহ দিতেন। বাবার একটা ঘটনা মনে পড়ে। আমি যখন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ি, আমাদের কলেজে সেদিন নবীনবরণ ছিল। ঢাকা থেকে অনেক শিল্পী গিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় শিল্পী হিসেবে এবং কলেজের ছাত্র হিসেবে আমিও গান গাওয়ার সুযোগ পাই। আমার গান শুনে শ্রোতারা এতই মুগ্ধ হন যে, তাদের অনুরোধে আমি একটি গানের জায়গায় পাঁচটি গান গাই। গান শেষে দর্শকসারি থেকে ঘোষণা এলো যে, মনির খানের গান শুনে মাহবুব আলী খান খুশি হয়ে ১০০ টাকা পুরস্কৃত করলেন। আমি তো অবাক! পরে দেখলাম, তিনি আমার বাবা। তো বাবার এই উপহার পেয়ে আমি আরও উৎসাহ পেলাম গানের প্রতি। আজকের এই সংগীতশিল্পী মনির খান হয়ে উঠার পেছনে আমার বাবার অনেক বড় অবদান।

 

অনেকে বলেন আপনি একই ধরনের গান করেন, এটা কেন?

আমাদের প্রত্যেকের একটি করে নাম আছে। আর এই নামে সবাই আমাদের চেনে বা জানে। আমরা কিন্তু যখন তখন নিজেদের নাম পরিবর্তন করি না। কারণ এই একই নামে মানুষ আমাদের চেনে। তেমনি আমি মনির খান নির্দিষ্ট এক ধরনের গান করি। দূর থেকে মানুষ আমার কণ্ঠ শুনে বলে দিতে পারে। এটাই আমার প্রাপ্তি। অন্য ধারার গান করে নিজেকে বিলীন করতে চাই না।

 

সংগীতের ক্ষেত্রে রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে কিছু তরুণ শিল্পী উঠে আসে, কিন্তু আবার হারিয়ে যায়, এটা কেন?

 

কারণ অধ্যবসায় নেই, তাই তারা হারিয়ে যায়। সংগীত হচ্ছে সাধনার বিষয়। সংগীত যদি সঠিকভাবে চর্চা না করা হয় এবং তাকে আত্মার ভিতর ধারণ করাই না হয় তাহলে তো সংগীতশিল্পী হওয়া যাবে না। আমাদের দেশের বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি অস্থির, যার কারণে তারা চাইলেও সংগীত জগতে থাকতে পারবে না। গান গাইলেই সংগীতশিল্পী হওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর