রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সিনেমা চলবে কোথায়?

বছরের শুরুতেই হল বন্ধ

বছরের শুরুতেই হল বন্ধ

সিরাজগঞ্জে সাগরিকা বন্ধ

চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য নতুন বছরের শুরুতেই দুঃসংবাদ। সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেল সিরাজগঞ্জের চালার বেলকুচির ‘সাগরিকা’ সিনেমা হলটি। এ হলের কর্ণধার মো. ইকবালের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন জানান, ছবির অভাবে লোকসান গুনে সাগরিকাকে আর টিকিয়ে রাখা তার পক্ষে সম্ভব হলো না। বেলকুচিতে মোট ৭টি সিনেমা হল ছিল বলে জানান মিয়া আলাউদ্দিন। তার কথায় এখন অবশিষ্ট আছে রজনীগন্ধা হলটি।

গত বছরের ১২ অক্টোবর বন্ধ হয়ে গেল রাজধানীর ‘রাজমনি’ সিনেমা হল। এর পরই বন্ধ হয় রাজধানীর আরেকটি সিনেমা হল রাজিয়া। এ ছাড়া গত বছর বন্ধ হয় শেরপুরের কাকলী, রাজশাহীর উপহারসহ দেশের অনেক সিনেমা হল। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে প্রায় ২৮টি জেলা এখন সিনেমাহল শূন্য। এসব জেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, নড়াইল, মৌলভীবাজার, রায়পুর, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার। রাজধানী ঢাকায় ছিল ৪৪টি সিনেমা হল। এখন রয়েছে ১৫টি। দেশে এখন সিনেমা হলের সংখ্যা একশর মতো বলে জানায় প্রদর্শক সমিতি। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রশ্ন- সিনেমা হল যদি না থাকে তাহলে সিনেমা চলবে কোথায়? এ নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শিল্পের সুবিধা নেই : মিয়া আলাউদ্দীন [প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা]

সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার পর কথা ছিল সিনেমা হলের বিদ্যুৎ বিল শিল্পের সুবিধায় নেওয়া হবে। কিন্তু  এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবেই বিশাল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এতে এই লোকসানি সিনেমা হল আরও ক্ষতি ও হয়রানির মুখে পড়েছে। মানসম্মত ও পর্যাপ্ত  ছবি দিতে পারছেন না নির্মাতারা, তাই সিনেমা হল দর্শকশূন্য। এভাবে লোকসান গুনে কীভাবে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা যায়?

 

 

 

মধ্যস্বত্ব ভোগী দায়ী : আবু মুসা দেবু [চলচ্চিত্র এডিটরস গিল্ডের সভাপতি]

আগে প্রযোজক-পরিবেশক মিলে ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতেন। বর্তমানে এ দুই সংগঠনের মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীর উদ্ভব হয়েছে। তারা ছবির রেন্টাল নির্ধারণ করেন কমিশনের ভিত্তিতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রযোজক ও প্রদর্শক। একটি টিকিট থেকে প্রযোজক পাচ্ছেন মাত্র ২৫ ভাগ শেয়ার মানি। টিকিট বিক্রির গ্রোস সেলের ফিফটি ফিফটি পার্সেন্ট প্রদর্শক এবং প্রযোজক ভাগ করে নিলে উভয় পক্ষ লাভবান হবে।

 

ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে : খোরশেদ আলম খসরু

[প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি]

এখন বছরে একটি কি দুটি ছাড়া বাকি ছবি চলেই না। নকলের নৈরাজ্য আর পুরনো ফর্মুলা থেকে এখনকার নির্মাতারা বেরিয়ে আসতে পারছেন না। ডিজিটালের নামে চলছে প্রতারণা। সরকার, চলচ্চিত্র জগৎ ও সাধারণ মানুষ মিলে টার্গেট করতে হবে ২০ টাকা হারে প্রতি টিকিটে এক কোটি মানুষ ছবি দেখবে। ই-টিকিটিং ব্যবসাও চালু করতে হবে। লগ্নিকৃত অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিয়ে আমরা প্রযোজকদের ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা চাই।

 

অচলাবস্থার জন্য প্রদর্শকরাই দায়ী : বদিউল আলম খোকন

[মহাসচিব, পরিচালক সমিতি]

দেশে কম ছবি নির্মাণ হওয়ার জন্য দায়ী কে? প্রদর্শকরাই এর জন্য দায়ী। কারণ প্রযোজকদের অভিযোগ টিকিট বিক্রির সঠিক হিসাব তারা কখনই পান না। এ কারণে একটি ছবি ব্যবসা করার পরেও তারা মূলধনই ফেরত পান না। দেশের বিভিন্ন স্থানে সিনেমা হল বন্ধের মতো অমূলক কাজ করে এ শিল্পের কল্যাণ অসম্ভব। আমার মনে হয় সরকার শিল্পটির প্রতি আরও মনোযোগ দিলে এ শিল্পটি সিস্টেমের মধ্যে চলে আসবে।

 

সদিচ্ছাই সমাধানের

পথ : শাকিব খান [অভিনেতা]

পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাতারা দিতে পারছেন না বলে প্রদর্শকদের যে অভিযোগ তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।  সমস্যা এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো চলচ্চিত্রের সব সংগঠন আর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলোচনায় বসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ে সরকারের কাছে যাওয়া। আমি মনে করি বিষয়টির দেখভালের জন্য একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারা কী করছে? চলচ্চিত্রের এ দুরবস্থার দায়ভার তারা এড়াতে পারে না। সদিচ্ছা থাকলে কোনো সমস্যাই আর সমস্যা থাকে না। চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচাতে হলে সিনেমা হল আর প্রযোজককে আগে বাঁচাতে হবে।

 

প্রযোজক-প্রদর্শকদের আন্তরিক হতে হবে : জায়েদ খান

[সাধারণ সম্পাদক, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি]

সিনেমা হল বন্ধ রোধে সর্বপ্রথম প্রদর্শক আর প্রযোজকদের আন্তরিক হতে হবে। প্রযোজকরা যদি বেশি পরিমাণে নির্মাণে এগিয়ে আসেন আর প্রদর্শকদের যদি ব্যবসায়িক মুনাফার নিশ্চয়তা দিতে পারেন তাহলে ছবি নির্মাণ বাড়বে এবং সিনেমা হলও বন্ধ হবে না। প্রদর্শকরা যদি প্রযোজকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে দেন আর প্রযোজকরা যদি ভালোমানের ছবি নির্মাণ করেন তাহলে কোনো পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়।

উভয়ের মধ্যকার সব দূরত্ব দূর করে প্রযোজক-প্রদর্শক যদি এগিয়ে আসেন তাহলে চলচ্চিত্র শিল্প বেঁচে যাবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর