মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কেমন আছেন প্লে-ব্যাক সম্রাট

পান্থ আফজাল

কেমন আছেন প্লে-ব্যাক সম্রাট

প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’-গানের মতোই বর্তমানে চলছে তার জীবনতরী। ভালো নেই অসংখ্য জনপ্রিয় গানের এই কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী! আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এন্ড্রুু কিশোর বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থ অবস্থায় গত ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। জানা যায়, তিনি Non Hodgkin Disease (Lymphoma) তে আক্রান্ত। এরপর থেকে নিয়মিত কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে তাকে। একটু একটু করে সেরে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাধ্যমতো। এই শিল্পী সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ডা. লিম সুন থাইয়ের অধীনে গত ৪ মাস ধরে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চিকিৎসা সমাপ্ত করে এই কণ্ঠশিল্পীর দেশে ফেরার কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে আপাতত তা আর সম্ভব হচ্ছে না। শারীরিক নানা সমস্যার কারণে তার কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা হয়েছে। আরও  কিছুদিন লাগবে। তাই ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরা হবে না তার। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরাও এমনটাই জানিয়েছেন। চিকিৎসার শুরুতে জানানো হয়েছিল, এন্ড্রু কিশোরকে ৬টি ধাপে ২৪টি কেমোথেরাপি দিতে হবে। ইতিমধ্যে ৪টি ধাপে তার ১৭টি কেমো সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম ধাপে প্রথম কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়েছে। এখনো ৭টি কেমো দেওয়া বাকি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য কণ্ঠশিল্পী মোমিন বিশ্বাস। শারীরিক নানা সমস্যার কারণে এন্ড্রু কিশোরের কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। মোমিন বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত তার ১৭টি কেমোথেরাপি সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ৭টি কেমোথেরাপি বাকি আছে! বিগত এক মাস ধরে তিনি হাসপাতালেই ভর্তি আছেন। শারীরিক নানা অসুবিধা দেখা দেওয়ায় বর্তমানে তার কেমোথেরাপি সাময়িক বন্ধ আছে! শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠলে পুনরায় তার কেমোথেরাপি দেওয়া হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সব কেমোথেরাপি দেওয়া শেষ হয়ে যাবে। এরপরই তিনি দেশে ফিরতে পারবেন। কিন্তু গত এক মাস দাদার শরীরের নানা জটিলতা দেখা দেয়। যার কারণে কেমো আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। শরীরের এই সমস্যাগুলো দূর না হলে কেমোথেরাপি দেওয়া সম্ভব নয়। এখন নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। গত এক মাস হাসপাতাল থেকে ওখানকার বাসাতেও ফেরা হয়নি দাদার। সবকিছু ঠিক হলে বাকি কেমো থেরাপিগুলো দেওয়া হবে। আমরাও আশা করেছিলাম ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দাদাকে দেশে নিয়ে আসতে পারব। আর তা সম্ভব হচ্ছে না। সবাই দাদার জন্য দোয়া করবেন। শিগগিরই যেন সুস্থ হয়ে তিনি নিজের দেশে ফিরতে পারেন। আগের মতো যেন গাইতে পারেন।’

সংগীত জীবনের শুরুতে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীত চর্চা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রে তার প্লে-ব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। দেশের অডিও ও চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির একজন নিবেদিতপ্রাণ এন্ড্রু কিশোর। যাকে একনামেই সবাই চেনে। এই শিল্পীর গাওয়া ‘হায়রে মানুষ রঙের ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’সহ তার অসংখ্য গান সবার মুখে মুখে।

সর্বশেষ খবর