শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সরকারি সহযোগিতা, ঐক্যবদ্ধ হলো তিন সমিতি

চলচ্চিত্রের সুদিন কি ফিরছে

নব্বই দশকের শেষ ভাগ থেকেই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে চলচ্চিত্র জগৎ। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বিভেদের কারণে এই সংকট মোচন সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত চলতি মাসে সরকারি উদ্যোগ আর তিন সমিতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে এই শিল্পের সুদিন ফেরার আশার আলো দেখছেন চলচ্চিত্রকাররা। বিষয়টি তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্রের সুদিন কি ফিরছে

দ্বন্দ্ব ভুলে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তিন সমিতি

দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে টানাপেড়েন চলছিল প্রযোজক-পরিবেশক ও পরিচালক সমিতির। সমিতিগুলোর এই বৈরিতা শিল্পটিকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দেয়। দেরিতে হলেও এই ভুল বুঝতে পেরে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এক হয়েছে তিন সমিতি।

১১ জানুয়ারির যৌথসভায় কীভাবে শিল্পের উন্নয়ন করা যায় সে ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হন তারা। প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। হল বন্ধ হয়ে যাওয়া, হল সংস্কারের জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুদান ও স্বল্প সুদে আর্থিক ঋণ পাওয়ার প্রদর্শকদের যে দাবি, তার পাশে আমরা প্রযোজকরা থাকব বলে জানিয়েছি। এ ছাড়া টিকিট বিক্রির দুর্নীতি ঠেকাতে ই-টিকিটিং চালু করা ও সরকারের তরফ থেকে টিকিটের ট্যাক্স মওকুফ করা হলেও অনেক হলের তা আদায় বন্ধের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। সভায় সিনেমা হল থেকে প্রযোজকরা তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কোন ছবি হল থেকে নেমে যাওয়ার পর দিনই যেন একজন প্রযোজক তার ন্যায্য শেয়ার বুঝে পান তার উদ্যোগ প্রদর্শক সমিতি নেবে বলে জানায়। এ ছাড়া সিনেমা হলগুলোতে বর্তমানে প্রজেক্টর মেশিন দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন। এ কারণে প্রযোজকদের বিরাট অঙ্কের ভাড়া গুনতে হয়। হল মালিকরা নিজেরা যেন প্রজেক্টর বসায় তার জোর দাবিও করা হয়েছে। খসরু বলেন, যে সব বিষয় নিয়ে প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলতে পারব। এতে করে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং প্রযোজকরা লাভের মুখ দেখবেন। প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতটুকু চলচ্চিত্র বান্ধব বাকিরা ততটুকু নন। যদি হতেন, তাহলে সংকট নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকত। তাই ব্যথা যখন আমাদের তার উত্তরণের পথটাও আমাদের বের করতে হবে, তবে অবশ্যই সেটা ঐক্যবদ্ধ হয়ে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিন তার বক্তব্যে, সংকট নয় সমাধানের পথে করণীয় বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সব সংগঠনকে উপলব্ধি করতে হবে, চলচ্চিত্র আমাদের।

বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অধিকার আদায় করা যায় না। যে কারণে আমরা এলোমেলো। এ অবস্থার উত্তরণে দ্রুত একটি কমিটি গঠনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার নয় সদস্যের একটি কমিটির কথা প্রস্তাব করলে উপস্থিত সবাই তা সমর্থন করেন। এ ব্যাপারে মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, খুব ভালো লাগছে যে সংকট উত্তরণে আমরা বসতে পেরেছি। এজন্য অবশ্যই প্রদর্শক সমিতিকে ধন্যবাদ জানাই। খুব শিগগিরই আমরা এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাব।

এফডিসিতে জরুরি সভা

এদিকে একই দিন এফডিসির প্রযোজক সমিতি কার্যালয়ে প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির আরেকটি জরুরি যৌথসভা হয়। এতে গত বছর ১৮টি চলচ্চিত্র সংগঠন মিলে ছবি নির্মাণের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল। যা গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বিষয়টি তখন সিনিয়র প্রযোজক-পরিচালক ও অভিনয় শিল্পীদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। সভায় অভিনেতা আলমগীর, কবরী, গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও শাকিব খান উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এই নীতিমালা সমর্থন করেন। উভয় সমিতির নেতারা চলচ্চিত্রে বিদ্যমান সংকট উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা এবং একসঙ্গে এ নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম এবং প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ, মিয়া আলাউদ্দীন প্রমুখ। শাকিব খান বলেন, তিনি ইতোমধ্যে নীতিমালা মেনে ছবি নির্মাণ ও অভিনয় করছেন। সামনেও এ নীতিমালা মেনে চলবেন।

 

এফডিসির ফ্লোর ও যন্ত্রপাতির ভাড়া কমল

ভাড়া কমল এফডিসির ফ্লোর ও যন্ত্রপাতির। চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি গত মঙ্গলবার দুপুরে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও সচিব কামরুন নাহারের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে এফডিসির বিভিন্ন স্পট ও ক্যামেরার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান এফডিসি। গত ১৩ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এফডিসি চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি। বৈঠকে মন্ত্রী সমস্যাটি অনুধাবন করেন এবং অতিরিক্ত চার্জ বাতিলের নির্দেশ দেন।

এ ছাড়া বর্তমান চার্জও অর্ধেক নামিয়ে আনার দাবির বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। এফডিসির বিভিন্ন ফ্লোর, অফিস রুম ও খোলা জায়গা চার্জ করা হয় সেট নির্মাণকালীন ও শুটিং চলাকালীন এই দুই ভাগে। সেট নির্মাণকালীন সময়ে এফডিসির খালি জায়গা, ছাদ ও সুইমিংপুলের ভাড়া ছিল ১০০০ থেকে ২৮০০ টাকা। মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের ফলে এ চার্জ কমে খালি জায়গা ও ছাদ, সুইমিং পুলের জন্য সেট নির্মাণকালীন চার্জ দিতে হবে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। শুটিং চলাকালীন খালি জায়গা, ছাদ ও সুইমিং পুলের চার্জ ছিল ২০০০ থেকে ৩৩০০ টাকা। এখন শুটিং চলাকালীন প্রতি শিফটে ভাড়া দিতে হবে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এ খাতে ৩০০ টাকা কমানো হয়েছে। অন্যদিকে সেট নির্মাণকালীন সময়ে ফ্লোরের ভাড়া ছিল ২৫৫০ থেকে ৫১০০ টাকা পর্যন্ত এবং শুটিং চলাকালীন ফ্লোর ভাড়া ছিল ৬৫০০ থেকে ১৮৫৪০ টাকা পর্যন্ত। এখন ফ্লোরের ভাড়া হবে ২৪০০ থেকে ৪৮০০ টাকা। তবে শুটিং চলাকালীন ফ্লোর ভাড়া যা ছিল তা বহাল থাকবে। আর নতুন সিদ্ধান্তে ক্যামেরার ভাড়া ছিল শিফটপ্রতি ৬১২০ টাকা থেকে ৬৬৩০ টাকা। এখন এফডিসির ক্যামেরা পাওয়া যাবে ৬০০০ থেকে ৬৫০০ টাকায় প্রতি শিফটে। কমেছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। এখানে প্রতি শিফট গণনা করা হয় ৮ ঘণ্টা হিসেবে। এক দিনে দুই শিফটে এফডিসিতে শুটিং করা যায়। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় শিফট। ১৬ ঘণ্টায় সাধারণ নিয়মের দুই শিফট শেষ হয় রাত ১০টায়। রাত ১১টার পর শুটিং করলে তার জন্য চার্জ ছিল দ্বিগুণ।

 

নির্মাণ হবে ২৮ সিনেপ্লেক্স

সরকার দেশে ২৮টি সিনেপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দুই বছরের মধ্যে বিভিন্ন জেলায় এগুলো নির্মাণ করা হবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

শিগগিরই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে। সম্প্রতি প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও সচিব কামরুন নাহার। মন্ত্রী জানান, শিগগিরই সিনেপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হবে। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ২৮টি সিনেপ্লেক্সের জন্য। আগামী দুই বছরে সারা দেশে এগুলো নির্মাণ হবে।

 

সর্বশেষ খবর