শিরোনাম
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

এফডিসি ঘিরে নতুন উদ্যোগ

ভাঙা হচ্ছে ফ্লোর, সুইমিং পুল এডিটিং ভবনসহ নানা স্থাপনা

আলাউদ্দীন মাজিদ

এফডিসি ঘিরে নতুন উদ্যোগ

ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৩, ৪, ৫ নম্বর শুটিং ফ্লোর

ভেঙে ফেলা হচ্ছে এফডিসির ৩, ৪ ও ৫ নম্বর শুটিং ফ্লোর, পুরনো ১ ও ২ নম্বর এডিটিং ভবন, সুইমিং পুল, মেকাপ শেড, ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক সমিতির কক্ষ এবং পুলিশ শেড। এফডিসির মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে থাকা এসব স্থাপনা আগামী তিন মাসের মধ্যেই ভেঙে ফেলা হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির কারিগরি ও প্রকৌশল পরিচালক কে এম আইয়ুব আলী।

এ কর্মকর্তা জানান, এফডিসিতে বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণ করতেই এসব পুরনো স্থাপনা ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লিখিত স্থাপনা ভাঙার জন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে কোটেশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তিনি জানান, বর্তমান সরকার এফডিসির আধুনিকায়ন করার জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এফডিসিকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ৩২২ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে জানানো হয় মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রশিল্পকে উজ্জীবিত করতে বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় বহুতল এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হবে চারটি থ্রিডি অত্যধুনিক সিনেপ্লেক্স। নির্মাণ করা হবে ৭৩ হাজার ৪৬৯ বর্গমিটার শুটিং ফ্লোর। এর ফলে বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পে বিরাজমান মহামন্দা থেকে গৌরবময় সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আওতায় নির্মিতব্য ভবনে নানা রকম কারিগরি ও আধুনিক সুবিধা স্থাপন করা হবে। ‘গ্রিন বিল্ডিং’ ধারণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভবনটিতে ছাপ থাকবে হাতিরঝিল প্রকল্পের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের। এর আওতায় স্থাপন করা হবে ডিজিটাল প্রজেক্টর ও উন্নত সাউন্ড সিস্টেমসমৃদ্ধ চারটি সিনেপ্লেক্স। বিএফডিসির সিনেপ্লেক্সে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। দর্শক প্রেক্ষাগৃহমুখী হলে বাড়বে চলচ্চিত্র নির্মাণের হার। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ১৯৫৭ সালে বর্তমানের এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএফডিসি কমপ্লেক্সে সিনেপ্লেক্স, তিন তারকা হোটেল আর শপিংমলসহ চলচ্চিত্র নির্মাণের অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এখানে ছবির কাজ করতে পারবেন। ৯৪ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হবে ২০ তলা ভবনের নতুন এই কমপ্লেক্স। এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে এফডিসিতে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও এমডির মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই এফডিসিকে আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর নকশায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, চলচ্চিত্রবিষয়ক পাঠাগার, ক্যামেরা লেন্সসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রির ব্যবস্থা, সিনেপ্লেক্স, তিনটি শুটিং ফ্লোর, চারটি প্রদর্শনী কক্ষ নিয়ে তৈরি একটি মাল্টিপ্লেক্স, শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা, বিশেষ শিশুদের জন্য খেলার জায়গা, ফুড কর্নার, চেইনশপ, প্রযোজনা সংস্থার অফিস, তিনটি বেজমেন্টস, বেসরকারি চ্যানেলের শুটিংয়ের জন্য স্টুডিও রুম, ছাদে জমনেশিয়াম, সুইমিং পুল ও রেস্তোরাঁ। এই প্রকল্প থেকে অর্জিত বার্ষিক আয় এফডিসির খাতেই জমা হবে। বিএফডিসি কমপ্লেক্সের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তথমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর হেসেন চৌধুরী। আর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হলেন, এফডিসির কারিগরি ও প্রকৌশল পরিচালক কে এম আইয়ুব আলী। এই কর্মকর্তা জানান, এ কমপ্লেক্সের জিজাইন তৈরির জন্য ইতিমধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে ডিজাইন জমা দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাস গণনা শুরু হবে। এরপরই ভবন নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হবে।

 

চলচ্চিত্রকাররা কীভাবে দেখছেন

২০১৮ সালে একনেকে বিএফডিসি প্রকল্প পাস হওয়ায় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। প্রকল্প পাসের পর দিনই এফডিসিতে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে। অন্যদিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সিনেমা হল ঠিক না করে এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ করে কী লাভ হবে। যদি সিনেমা হলই না থাকে ছবি বানিয়ে কোথায় প্রদর্শন করা হবে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রত্যেক জেলায় সরকারি উদ্যোগে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, এ উদ্যোগ শুভ, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে বিষয়টি ঘোড়ার আগে গাড়িজুড়ে দেওয়ার মতো হয়েছে। ছবির অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রদর্শকদের দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সিনেমা হল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণে এ শিল্পের কতটা লাভ হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলে কি সিনেমা হল নির্মাণে আমলা কর্তাব্যক্তিদের কোনো আগ্রহ নেই? এর আগে এফডিসির আধুনিকায়নে ৫৯ কোটি আর ফিল্ম আর্কাইভ উন্নয়নে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর থেকে সরকার এখন পর্যন্ত কী বেনিফিট পেয়েছে? সিনেমা হলের উন্নয়ন না করে যত কিছুই করা হোক এতে চলচ্চিত্রশিল্পের কোনো উন্নতি হবে না। সিনিয়র বেশ কজন চলচ্চিত্রকার বলছেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রায় ১৮টি সমিতি রয়েছে। সমিতিগুলোর মধ্যে মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে পরিচিত ‘চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি’। একমাত্র তারাই পারে পর্যাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবস্থা করে শিল্পটিকে চাঙা করতে। এবার এ সমিতিটি সেই পথে হাঁটবে বলে প্রত্যাশা সবার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর