মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা আতঙ্কে সিনেমা হলে দর্শক কমেছে

আলাউদ্দীন মাজিদ

‘বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে’, রবিবার বিকালে এমন খবর প্রচার হওয়ার পর দেশের সিনেমা হলগুলোতে দর্শক আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।

এমন তথ্য জানিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু

 

‘বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে’, গত রবিবার বিকালে এমন খবর প্রচার হওয়ার পর দেশের সিনেমা হলগুলোতে দর্শক আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি জানান, চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা এমনিতেই নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে, এর ওপর দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় দর্শক আতঙ্কিত হয়ে সিনেমা হলে আসার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ যেখানে জনসমাগম হয় সেখানেই করোনা ঝুঁকি বেশি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় সিনেমা হল যেহেতু জনসমাগমের স্থান, তাই সেখানে দর্শক না আসাটাই স্বাভাবিক। খোরশেদ আলম খসরু বলেন, এতে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছেন। করোনার খবর প্রচার হওয়ার পর থেকে প্রযোজক, সিনেমা হল মালিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সঙ্গে এমন অবস্থায় করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য অনবরত যোগাযোগ করছেন। যারা নতুন ছবি মুক্তি দেবেন সেই প্রযোজকরা তাদের ছবি মুক্তি নিয়ে এখন অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছেন। খসরু জানান, শিগগিরই চলচ্চিত্রের সবার সঙ্গে বৈঠক করে এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ বলেন, আমার সিনেমা হল মধুমিতায় দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো ‘বীর’ ছবিটি চলছে। সিনেমা হলে দর্শক এমনিতেই এখন কম আসে। তার ওপর দ্বিতীয় সপ্তাহে দর্শক আরও কমে যায়। তাই গতকাল আসলেই করোনা আতঙ্কে দর্শক কমেছে কিনা বুঝতে পারছি না। ধীরে ধীরে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যদি করোনার কারণে সিনেমা হলে দর্শক আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। কারণ এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে সিনেমার ব্যবসা মন্দ চলছে। এখন যদি আবার করোনা আতঙ্কে সিনেমা হল দর্শকশূন্য হয় তাহলে সিনেমা হল মালিকরা চরম দুর্ভোগে পড়বে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, করোনার কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে

সব সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আক্রান্ত দেশে স্কুল-কলেজসহ জনসমাগম হয় এমন সব স্থান বন্ধ হচ্ছে এবং তা মানুষ এড়িয়ে চলছে। এ অবস্থায় সিনেমা হলের মতো জনসমাগমের অন্যতম একটি স্থানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটিই স্বাভাবিক। কারণ সিনেমা হলে দিনে চার থেকে পাঁচটি শোতে জনসমাগম হয়। এ অবস্থায় সর্বক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া করণীয় আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ প্রযোজকরা তাদের ব্যবসায়ের নিরাপত্তা অবশ্যই চাইবে। দর্শকশূন্য সিনেমা হলে ছবি মুক্তি দিয়ে কেউই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাইবে না। স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, করোনা শনাক্তের খবর প্রকাশের পর থেকেই স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শক কমেছে। আর দর্শক কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এ অবস্থায় জনসমাগমস্থলে আসতে দর্শক নিরাপত্তাবোধ করবে না। তারপরও আগামী সপ্তাহে হলিউডের ভিন ডিজেলের ‘ব্লাড শর্ট’ ছবিটি মুক্তি দিতে হবে। কারণ ছবিটি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড একসঙ্গে মুক্তি দিতে আগেই তারিখ নির্ধারণ হয়ে গেছে। তবে এই অবস্থায় ছবিটি মুক্তি দিয়ে কতটা ব্যবসা হবে তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়। এদিকে, আগামী ২০ মার্চ মুক্তি প্রতীক্ষিত দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ ছবিটির মুক্তি প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, হাতে যেহেতু কিছুটা সময় আছে তাই আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছি। এর মধ্যে যদি অবস্থা আশঙ্কাজনক না হয় তাহলে ছবিটি অবশ্যই নির্ধারিত তারিখেই মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই নতুন ছবি মুক্তির হার কমেছে। এরপর যদি আবারও একটি ভালো ছবি মুক্তি কোনো কারণে আটকে যায় তাহলে তা দর্শক-প্রদর্শক এবং নির্মাতার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

সর্বশেষ খবর