শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

অনুদানের টাকায় বিকল্পধারার ছবি কেন হবে?

খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার ও চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক চলচ্চিত্রের বর্তমান অচলাবস্থায় খুবই উদ্বিগ্ন। চলচ্চিত্র নিয়ে তার বলা উদ্বিগ্নের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

অনুদানের টাকায় বিকল্পধারার ছবি কেন হবে?

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণ নিয়ে অনিয়ম চলছে

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণে চরম অনিয়ম চলছে। ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের একটি কথায় খুবই মর্মাহত হয়েছি। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর একটি বায়োপিক আমাকে নির্মাণ করে দিতে বলেছে তাই আমি তা বানিয়ে দিচ্ছি।’ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যিনি এমন দায়সারা গোছের কথা বলেন তিনি কি করে বাঙালির জাতির পিতার মতো একজন মহান মানুষকে সেলুলয়েডের ফিতায় জীবন্তভাবে তুলে ধরবেন? যারা বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিলেন, যারা তার কথা সরাসরি শুনেছেন, তাকে দেখেছেন তাকেই তো এ ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া দরকার। আর বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণে ব্যাপক পড়াশোনা ও গবেষণা দরকার। তা কি হচ্ছে? তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর চরিত্র ছাড়া বাকিদের চরিত্রের জন্য বিদেশি কিংবা নতুন মুখ নেওয়া দরকার। না হলে দর্শকের মনে বায়োপিকটির গ্রহণযোগ্যতা ও আবেগ তৈরি হবে না।

 

বঙ্গবন্ধুর শর্টফিল্ম নিয়েও হচ্ছে অনিয়ম

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে শর্টফিল্ম নির্মাণের জন্য গল্প আহ্বান করা হয়। এর জন্য গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান তিন মাস দেশে না থাকায় আমাকে বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হলো। আমি জমা পড়া ২২৬টি গল্পের মধ্য থেকে বাছাই করে ১২টি চমৎকার গল্প নির্বাচন করে দিই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমলারা আমার নির্বাচিত ৩টি গল্প রেখে বাকিগুলো নিজেদের খেয়াল খুশিমতো করে নিয়ে নিলেন। তাহলে আমাকে ডেকে এনে এই দায়িত্ব দেওয়া হলো কেন? তারা এর জন্য আমাকে সরি পর্যন্ত বলেনি। আমার প্রশ্ন, এর জন্য গঠিত সাব কমিটিতে যারা আছেন তারা করছেনটা কী? এসব আমলার জন্যই তো আজ চলচ্চিত্রের এ দুরবস্থা ।

 

এমপি হলেও আমি কিন্তু সিনেমার লোক

এমপি হলেও আমার আসল পরিচয় আমি একজন সিনেমার লোক। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই শিল্পকে আমি ছেড়ে দিতে পারি না। দেশের প্রধান এই গণমাধ্যমের সাহায্যে মানুষের সুখ-দুঃখের চিত্র তুলে ধরে তার সমাধানের পথ খুলে দেওয়ার কথা বঙ্গবন্ধুই বলে গেছেন। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারা হবে না। কারণ এই মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ রয়েছে। এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য চলচ্চিত্রকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ্আনতে হবে। দুবার এ নিয়ে সংসদে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। আমার কথা হলো গার্মেন্ট সেক্টরের উন্নয়নে যদি ওয়ান পার্সেন্ট থোক বরাদ্দ দেওয়া যায় তাহলে চলচ্চিত্র শিল্পে কেন নয়? টেক্সটাইল শিল্পও কিন্তু যথাযথ সুযোগ-সুবিধার অভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। চলচ্চিত্রকে বাঁচতে অচিরেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এ দেশের মানুষের পরম সৌভাগ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মতো এমন একজন মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ পেয়েছেন। তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। চলচ্চিত্রের অসহায় মানুষকে অকাতরে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দলমতকে তিনি প্রাধান্য দিচ্ছেন না। সবার জন্য অকাতরে সবকিছু করে যাচ্ছেন। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অনেক সুদূরপ্রসারী কাজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়ে নেন’, কিন্তু নেওয়ার মতো লোক কোথায়? চলচ্চিত্র জগতে ইদানীং চরম বিভাজন তৈরি হয়েছে। যখনই চলচ্চিত্র ও এই শিল্পের মানুষের কল্যাণে চলচ্চিত্র পরিবার গঠন করা হলো তখন আমাদের মধ্যেই একজন বলেন, পরিবার নয়, অন্য নাম দিয়ে একটি সংগঠন করা হোক। চলচ্চিত্রের মানুষের মধ্যেও পলেটিক্স ঢুকে গেছে। এভাবেই বিভাজন তৈরি করে এ শিল্পকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

 

চলচ্চিত্রের কয়জন মানুষ এ পর্যন্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন?

স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল চলচ্চিত্র। দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের মানুষের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু  চলচ্চিত্রের কতজন মানুষ এখন পর্যন্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। এর জন্যও দায়ী তথ্য মন্ত্রণালয়। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আমি আর থাকব না। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত আমার মাথার ওপর রয়েছে। তাই কোনো উল্টাপাল্টা কাজ আমি সহ্য করব না।

 

এফডিসির দরকার যন্ত্রপাতি স্থাপন ও ই-টিকিটিং ব্যবস্থা করা

চলচ্চিত্রের জন্যই যদি ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন হয়ে থাকে তাহলে এফডিসির দায়িত্ব হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও সিনেমা হলে ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা। চলচ্চিত্রের লোকজন ও সিনেমা হল মালিকদের দরকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে তার সামনে এই শিল্পের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। কিন্তু চলচ্চিত্রের মানুষের বর্তমান অনৈক্যের কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিতে পারছি না।

 

সিনেপ্লেক্স নয়, সিনেমা হল দরকার

আমি সিনেপ্লেক্সের ঘোরবিরোধী, সেখানে সাধারণ মানুষ উচ্চমূল্যের টিকিটের কারণে কি যেতে পারে? সেখানে তো শপিং করতে গিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য কিছু মানুষ যায়। দরকার কমপক্ষে অত্যাধুনিক ৬০০ আসনের সিনেমা হল নির্মাণ ও বৃদ্ধি করা। সিনেমা হল ভেঙে শপিং কমপেক্স নির্মাণও বেআইনি। কারণ সিনেমা হলের জন্য যে লাইসেন্স দেওয়া হয় তাতেই এ বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে।

 

অ্যাওয়ার্ড ও অনুদানের ব্যাপারেও আমার আপত্তি রয়েছে

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম হয়। এটি আমি মানতে পারি না। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রদেয় সরকারি অনুদান নিয়েও আপত্তি রয়েছে আমার। আমি বলব অনুদান পাবে মেইন স্ট্রিমের নির্মাতারা। বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রের নামে কিছু চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে আর সেগুলো দেশে কেউ দেখে না, বিদেশি উৎসবে যায়। তাহলে এমন চলচ্চিত্রের জন্য সরকারি টাকা ব্যয়ের অর্থ কী? সবশেষে বলতে চাই আমি পরিপূর্ণভাবে একজন চলচ্চিত্রের মানুষ আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই চলচ্চিত্র শিল্পকে আবার পূর্ণাঙ্গরূপে দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর