বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
চলচ্চিত্র সংগঠনের উদ্বেগ

করোনায় বিপর্যস্ত চলচ্চিত্রের অসচ্ছল মানুষ

আলাউদ্দীন মাজিদ

করোনায় বিপর্যস্ত চলচ্চিত্রের অসচ্ছল মানুষ

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেছে চলচ্চিত্র নির্মাণ, মুক্তি এবং সিনেমা হল। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন অসচ্ছল শিল্পী, কলাকুশলী, পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে যেসব শিল্পী আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং কলাকুশলী যারা দিন আনে দিন খায় যেমন ড্রেস, মেকআপ, লাইটম্যান, স্পট বয়, স্টিল ফটোগ্রাফার প্রমুখ এখন অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা বলছেন করোনায় নয়, উপোস করেই পরিবারসহ আমাদের প্রাণ যেতে বসেছে। এ অবস্থায় চলচ্চিত্রকারদের কথা হলো চলচ্চিত্রের অসহায় মানুষের এ দুর্দিনে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। যেমন অঞ্জনা, শাহনূর, অনন্ত, মিস্টি জান্নাত, তাহমিনা ইসরাত মৌ প্রমুখ। চলচ্চিত্রের মানুষদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক সচ্ছল চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পী রয়েছেন যারা চলচ্চিত্রের অর্থেই ঢাকায় প্রাসাদসম বাড়ি আর গাড়ি করেছেন, ব্যাংকে লক্ষ কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তারা কখনোই চলচ্চিত্রের অসহায় মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসেননি এবং বর্তমান এ দুর্যোগেও নীরব রয়েছেন। তাদের কি বিবেক বলে কিছু নেই? এ নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হলো-

 

আয় না থাকলে ব্যয় নির্বাহ কীভাবে হবে?

ইফতেখার নওশাদ

কর্ণধার, মধুমিতা সিনেমা হল

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার নওশাদ বলেন, সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি উক্ত তারিখের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এই বন্ধের সময় বাড়বে। আশঙ্কার বিষয় হলো সিনেমা হল বন্ধ থাকলেও স্টাফদের বেতন ও নানা বিল এবং কর দিতে হচ্ছে। আয় না থাকলে এ ব্যয় কতদিন বহন করা সম্ভব হবে? এতে চরম মানবেতর অবস্থার মুখে পড়বে সিনেমা হল কর্মচারীরা।

 

সরকারি সাহায্য চাই

মিয়া আলাউদ্দীন

সাবেক কর্মকর্তা, প্রদর্শক সমিতি

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সিনেমা হল বন্ধের সময় আরও বাড়বে। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে সিনেমা হলের কর্মচারীরা। ব্যবসা না থাকলে মালিকরা তাদের বেতন কীভাবে চাালিয়ে যাবেন। সরকার মফস্বল এলাকার অসচ্ছল মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার যদি এভাবে সিনেমা হলের অসচ্ছল কর্মচারীদের জন্যও খাদ্যদ্রব্যের ব্যবস্থা করেন তাহলে তারা উপোস করা থেকে বেঁচে যাবেন।

 

কলাকুশলীরা উপোস করছে

খোরশেদ আলম খসরু

সভাপতি, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি

করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবনযাপনের মুখে পড়বে চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা। ইতিমধ্যেই তারা উপোস করা শুরু করেছেন। কারণ দিন আনে দিন খায় এ শ্রেণির মানুষদের কাজ বন্ধ হলে বাসায় আর চুলা জ্বলে না। যদি ২ এপ্রিলের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক না হয় তাহলে আরও তিনশ’র মতো কলাকুশলীর জন্য খাদ্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করবে প্রযোজক সমিতি।

 

সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসতে বলব

মুশফিকুর রহমান গুলজার

সভাপতি, পরিচালক সমিতি

এ অচলাবস্থার নিরসন কখন হবে কেউ জানে না। চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে যেসব কলাকুশলী, অসচ্ছল নির্মাতা, সহকারী নির্মাতা যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করতেন তারা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছেন।

সমিতির পক্ষ থেকে ফান্ড গঠন করা হয়েছে। ১ এপ্রিল পর্যন্ত তহবিলে অর্থ সংগ্রহ চলছে। সামর্থ্যবানদের কাছে অনুরোধ আপনারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।

১ তারিখের পর সমিতি অসহায় চলচ্চিত্রের মানুষকে তহবিল থেকে সহযোগিতা প্রদান করবে।

 

শিল্পী সমিতি কতদিন সাহায্য করতে পারবে?

জায়েদ খান

সাধারণ সম্পাদক, শিল্পী সমিতি

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মোট সদস্য ৪৪৯ জন। এর মধ্যে অসচ্ছল অবস্থায় আছেন প্রায় ২২৫ জন।

সমিতির অনুরোধে অনেকেই তাদের সহযোগিতা করছেন।  পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয় শিল্পী সমিতি কতদিন এভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবে। সমিতির তেমন কোনো বড় অঙ্কের ফান্ডও নেই। সচ্ছল চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন চলচ্চিত্রের অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ান।

সরকারের কাছেও অনুরোধ, সরকার যেন এফডিসির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের অসচ্ছল মানুষদের জন্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করে। কারণ চলচ্চিত্রের মানুষরা সারা জীবন অনেক পরিশ্রম করে দেশের মানুষকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাণী ও বিনোদন দিয়ে আসছেন। তাদের এ দুঃসময়ে সরকারসহ প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষ যদি তাদের পাশে এসে দাঁড়ান তাহলে তারা পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে যেতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর