সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ঈদের নাটক নির্মাণে করোনার প্রভাব

ঈদের নাটক নির্মাণে করোনার প্রভাব

বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের বিনোদন জগতে। বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনও এর ব্যতিক্রম নয়। বড় পর্দার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে ছোট পর্দায়ও। এবার ঈদের জন্য প্রচুর প্রজেক্ট থাকলেও সব নির্মাতাই শুটিং বাতিল করেছেন। অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার। এবার ঈদের নাটক নির্মাণে করোনার প্রভাব নিয়ে কিছু নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

চয়নিকা চৌধুরী

বর্তমানে সাংবাদিক, ডাক্তার, পুলিশ ও সেনা প্রশাসন অনেক রিস্ক নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু জনগণ সচেতন নয়; তারা বাইরে থাকছে। কিছুই মানছে না। সবকিছুই হালকাভাবে নিচ্ছে। এটি ঠিক হচ্ছে না।

১৯ দিন হলো বাসায় আছি। শেষ শুটিং ছিল মার্চের ৯ ও ১০ তারিখে। পান্থ শাহরিয়ারের লেখা নাটক ‘যাত্রাবিরতি’। এটি ২৬ মার্চ অনইয়ার করার কথা ছিল। করতে পারিনি। নাটকটির সবই প্রস্তুত ছিল। মিউজিকের ডাবিংও করা হয়েছিল চম্পা, শাওনসহ বাকিদের দিয়ে। আর ঈদের প্রজেক্ট কিছু ছিল। ৪০০তম নাটকের কাজ। আরটিভির জন্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুটিং করব। এ সময় সাংবাদিক, ডাক্তার, পুলিশ ও সেনা প্রশাসন অনেক রিস্ক নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু জনগণ সচেতন নয়। তারা বাইরে থাকছে। কিছুই মানছে না। সবকিছুই হালকাভাবে নিচ্ছে। আমি মনে করি,  সরকারকে এদের বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। লকডাউন, কারফিউ আরও কঠোর করা জরুরি। এখনই তো ক্রিটিকাল সময়। ১ বা ২ সপ্তাহ। আমরা পরিবারের সবাই সবার খেয়াল রাখছি। অরুণ বাইরে থেকে আসার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। আমি, আমার পরিবার সর্বোচ্চ সতর্কতায় দিন পার করছি। সবার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে।

 

রেদোয়ান রনি

আমি ১২-১৩ দিন বাসায়। ঈদের জন্য একটি কাজ করার কথা ছিল। ৪ তারিখে ছিল শুটিং। সেটা বাতিল করে দিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এরপর কাজে নেমে পড়তে হবে। ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে কাজ করতে হবে। এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই বাজে অবস্থায় আছে। সবার জন্য কাজ দরকার। নিজেদের স্থান থেকে আমরা চেষ্টা করছি সবার পাশে দাঁড়ানোর। আর বেশিদিন কাজ বন্ধ থাকলে প্রোডাকশন বয়, কলাকুশলীসহ অনেকেই খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেহেতু এখন বিশ্ব পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায়। দেশে লকডাউন। তাই আমি এই সংকটময় মুহূর্তে সবাইকে অনুরোধ করব সতর্ক থাকতে। বাসায় থাকতে। তাহলে সবাই নিরাপদে থাকবেন।

 

মাবরুর রশীদ বান্নাহ্

নাটক সংশ্লিষ্ট কোনো কাজই করছি না। এ সময় আপাতত বাসায় থাকছি আর সারা দিন নেটফ্লিক্স, অ্যামাজান প্রাইম, ইউটিউবে ফিল্ম দেখছি। মাঝে মাঝে বইও পড়ছি। তবে নাটকের জন্য কিছু গল্প ভাবনা মাথায় রয়েছে। এই কঠিন অবস্থাটা যাক, তারপর কাজ শুরু করব। আর আমি কিন্তু সবার আগে শুটিং প্যাকআপ করেছি, ১৬ মার্চ। ৬টি নাটকের কাজ হাতে ছিল। সবই বাতিল করে দিয়েছি। এই অবস্থায় কি রিস্ক নেওয়া যায়! সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ঈদের কোনো কাজ করাও সম্ভব নয় এখন। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ করোনা শুধু আমাদের সমস্যা নয়, সারা বিশ্বের মানুষের অন্যতম সমস্যা। এই মুহূর্তে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। আর কীভাবে মিডিয়ার অসহায় কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ানো যায়, সে চেষ্টাই করছি। ইতিমধ্যে আমি ১৫ জন কলা-কুশলী পরিবারকে সাপোর্ট দিয়েছি। একটা কথা, আমাদের মিডিয়ায় অনেক সচ্ছল বড় ভাই-আপু আছে। তারা যদি ১০-১২টি পরিবারের দায়িত্ব নেয় অর্থাৎ খাবার দেয়, তাহলে শোবিজের অনেকেই খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। এভাবে কিছু ক্রাইসিসও ঠেকানো সম্ভব। 

 

মিজানুর রহমান আরিয়ান

এখন বাসায় থাকছি। নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছি। ঈদ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা তো ছিল! প্রতি ঈদে তো আমি ৪-৫টা নাটক বানিয়ে থাকি। এবারও সেরকমই প্রস্তুতি ছিল। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে শুটিং করতে পারিনি। কিছু কাজ বাতিলও করতে হয়েছে। গত মাসের ১৮ তারিখে পয়লা বৈশাখের কাজ শুরু করলেও পরে তা বাতিল করি। এখন তো লকডাউন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানি না। আর লকডাউন ছাড়ার পর স্বাভাবিক হতেও আরও ১-২ সপ্তাহ সময় লাগবে। আশা করছি ভালো কিছু হবে। শিগগিরই আমরা এই সংকটময় অবস্থা থেকে বের হয়ে আসব।

 

হিমু আকরাম

আমি নোয়াখালীতে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছি। ৬ দিন হলো। শেষ শুটিং করেছি গত মাসের ২ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত। আরটিভির জন্য ৭ পর্বের একটি নাটকের। নাম ‘ইস্কান্দার শাহ একজন সুপারস্টার’। জাহিদ ভাই ও নীলাঞ্জনা নীলা অভিনয় করেছেন। তবে পয়লা বৈশাখের একটি কাজ, ৭ পর্বের আরও ২টি সিরিয়াল বাতিল করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় আছে যারা সিঙ্গেল নাটকের কাজ করেন। প্রায় অভিনয়শিল্পীর অবস্থাই খারাপ। নাটকের ক্রুরা তেমন ভালো নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারছি, করে যাচ্ছি। খবর নিচ্ছি। আশা করছি, এই দুরবস্থা চলে যাবে সবার। তবে সামনের ১ বা ২ সপ্তাহ অবস্থা আরও খারাপ হবে।

 

আবু হায়াৎ মাহমুদ

আমি গত মাসের ২০ তারিখে শেষ শুটিং করেছিলাম। সিরিয়ালটির নাম ‘প্রিয় প্রতিবেশী’। এটি অনইয়ার হচ্ছে। আরটিভির জন্য ঈদের ২টি কাজ করেছি। একটি নাটকে লাভলু ভাই, অন্যটিতে মোশাররফ ভাই। এগুলো অনইয়ার হবে। এখন আপাতত বাসায় আছি। নিজে ও পরিবার সুরক্ষিত আছি। ব্যক্তিগতভাবে সবার খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অনেক সংগঠন মিলে স্বল্প আয়ের ডিরেক্টর, শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য সাহায্য করার চেষ্টা হচ্ছে। আশা করছি, পরিস্থিতি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হবে।

 

সাজ্জাদ সুমন

আমি বাসায় আছি। ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ! শেষ শুটিং ছিল মার্চের ২০ তারিখে। ঢাকার বাইরে শুটিং ছিল। দীপ্ত টিভির জন্য একটি ডেইলি সোপের। ২৬ তারিখ পর্যন্ত শুটিং পরিকল্পনা থাকলেও সেটা বাতিল করা হয়। ঢাকার ভিতরে আর শুটিং করা হয়নি। ঈদের কাজ ছিল ৮ ও ৯ তারিখে। করোনার কারণে আর করতে পারিনি। বসে আছি এখন। এই মাসে আর শুটিং হবে না। এই পরিস্থিতিতে আমরা ডিরেক্টরসহ সবাই শিল্পী-কলাকুশলীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আর্থিকভাবে ক্রুদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে সবাই।

সর্বশেষ খবর