শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → তারিক আনাম খান

এই দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত

তারিক আনাম খান। মঞ্চ ও টেলিভিশনের একজন দাপুটে অভিনেতা এবং নাট্যনির্দেশক। অভিনয় জগতে পথচলা দীর্ঘদিনের। ক্যারিয়ারে বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, এখনো করছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও বটে। ব্যক্তিগত ও অভিনয় জীবনের জানা-অজানা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

এই দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত

কেমন আছেন? করোনা ইস্যুতে শোবিজ অঙ্গন স্থবির; সব ধরনের শুটিং বন্ধ। আজ কি করছেন?

  ভালো ও সুস্থ আছি। আর হ্যাঁ, সব ধরনের শুটিং বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এখন বাসায় আছি। কোনো কাজ ছাড়া আমি তো বাসা থেকে বের হই না। কিছুদিন আগে আমি নিজে থেকেই কয়েকটি শুটিং ক্যানসেল করেছি। কারণ, এই দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।

 

শোবিজ তারকাদের দিক থেকে করোনা বাদেও যে কোনো সামাজিক সচেতনতা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া কতখানি দরকার?

ভীষণভাবে প্রয়োজন! খুব দরকার এই জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে। এমনিতেই জাতি হিসেবে আমরা খুবই ইমোশনাল। আমরা অনেকেই এখন এটিকে ফুর্তির সময় হিসেবে নিচ্ছি। মনে করছি, আমার কিছুই হবে না! এটা ঠিক নয়। প্রবাসী যারা বিদেশ থেকে অর্থাৎ ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছেন, তারা বাড়িতে এসে পরিবারের সঙ্গে ফুর্তি-আনন্দ করে সময় কাটাতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা ভুল। তাদের বুঝতে হবে, এই সময় একে অন্যের সংস্পর্শে আসাটাই অনেক বেশি ক্ষতির কারণ; জাতির জন্য বিপদের।

 

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শোবিজের সব সংগঠন ও রাষ্ট্র কতখানি তৎপর বলে মনে করছেন?

সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। এই আপৎকালীন অবস্থায় খেটে খাওয়া মানুষসহ অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়া উচিত। চিকিৎসা সুবিধা আরও বাড়ানো দরকার। আর শোবিজ অঙ্গনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে প্রোডাকশনবয়সহ অনেক কলাকুশলী। প্রতিদিন যাদের কাজ করে খেতে হয়, তাদের পাশে সব সংগঠনকে এগিয়ে আসা উচিত। রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা খুবই প্রয়োজন। এই মুহূর্তে দরকার সচেতনতা ও প্রতিরোধ। শুধু আল্লাহ করলে হবে না, তাঁর বান্দারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের বাইরের কাজ বন্ধ রাখা দরকার।

 

এখন তো সরকার থেকে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। ফোনে ফোনে করোনা সতর্কতামূলক ভয়েস-মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম মানুষকে সচেতন করছে।

 

প্রতিরোধ কীভাবে করতে পারি?

এখন তো সরকার থেকে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। ফোনে ফোনে করোনা সতর্কতামূলক ভয়েস-মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম মানুষকে সচেতন করছে। হাত থেকে যেন নাকে-মুখে না ছড়ায়, কেউ কারও সংস্পর্শে না আসে সেটা মেনে চলা উচিত। ঘরে থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। হাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে বার বার ধোয়া বাধ্যতামূলক। সচেতন থাকলে কিন্তু বিপদ কম। এই মুহূর্তে দরকার এনার্জি ঠিক রাখা। আর আপনারা যারা সংবাদ সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত তাদের সেভ সাইডে থাকতে হবে। প্রয়োজনে কাজ বন্ধ করে বাসায় থাকা। তবে দেশে ভ্যাকসিন তৈরি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

 

হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে আপনার ছিল সখ্যতা। কিছু স্মৃতি যদি একুট খুলে বলতেন?

হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তো প্রতিটি মুহূর্তই মজার। তার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হতো। ফরীদির সঙ্গে ক্রিয়েটিভ আলোচনা ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং। তার কথায় ছিল মুগ্ধতা। এমনো হয়েছে সে ১ ঘণ্টা ধরে জোকস বলছে কেউ বিরক্ত হয়নি, সবাই হেসেই যাচ্ছিল। তার কথায় সময় কীভাবে যে চলে গেছে কেউ টেরই পেত না। আমার নাট্যকেন্দ্র করার পেছনে তার বড় ভূমিকা ছিল। অ™ভুত স্বভাবের ছিল সে। সে সবসময় আউট অব দ্য ফ্রেম থাকতে চাইত। আমরা তিন-চার বছর একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি। ও ওর ইচ্ছামতো চলত। ভালো লাগলে চাকরি করত, না লাগলে ছেড়ে দিয়ে চলে আসত। ছবি দেখা, আবৃত্তি করা, আড্ডা দেওয়া, জোকস করা তার খুবই পছন্দ ছিল। ফিল্মে সে লেট করে যেত, লেট করে আসত। ভালো লাগলে করেছে, না লাগলে করেনি। আমি মনে করি, ফিল্মে হুমায়ুন ফরীদি টোটালি নিজেকে ওয়েস্টেড করেছে। ও মোটামুটিভাবে নিজেকে কমার্শিয়ালাইজড বেশি করেছে। ওর সঙ্গে আহা, জয়যাত্রা করেছি। সুবর্ণাকে বিয়ে করার পর আজাদ প্রোডাক্টসে চাকরি করত। সে সময় আজাদ প্রোডাক্টসের একজন একদিন তার সঙ্গে কথায় কথায় যখন বলল, মুসলমানদের চারটি বিয়ে করা যায়। এই কথা শোনার পর থেকেই সে পরের দিন আর অফিসে যায়নি। সে মাঝে মাঝে কথায় কথায় বলত, আমার খুব ইচ্ছা পাকিস্তানে গিয়ে পাকিস্তানিকে কষে একটা চড় মারা। হুমায়ুন দীপ্রকে দেখে বলত, তোর ছেলে বড় হলে অনেক বিনয়ী হবে। আমি বললাম কীভাবে? সে বলল, লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওকে তো ঝুঁকে বলতে হবে রে।

সর্বশেষ খবর