রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দেশের সিনেমা হল মালিকরা

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দেশের সিনেমা হল মালিকরা

এমনিতেই কয়েক বছর ধরে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত চলচ্চিত্রের অভাবে সিনেমা হলের ব্যবসা মন্দা চলছিল। লোকসান গুনে বন্ধ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ শ সিনেমা হল। এখন একশর মতো সিনেমা হল কোনোভাবে চালু থাকলেও করোনার কারণে সেগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন সারা দেশের বেশ কজন সিনেমা হল মালিক। তাদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

স্টাফরা মানবেতর জীবনযাপন করছে : আবুল হোসেন

কর্ণধার সিনেমা প্যালেস, ঝুমুর

চট্টগ্রাম

আমার দুই সিনেমা হলে ৩০ জন স্টাফ আছে। তাদের বেতন, নানা কর ও বিল মিলে মাসে ২ লাখ টাকারও বেশি খরচ আছে। দীর্ঘদিন লোকসান গুনেও সিনেমা হল চালু রেখেছিলাম। এখন করোনার কারণে একেবারে বন্ধ। কবে খুলবে কেউ জানে না। বন্ধ থাকলেও ব্যয় ঠিকই নির্বাহ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে স্টাফরা টাকা না পেলে না খেয়ে মরবে। কিন্তু কতদিন এভাবে আয় ছাড়া ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। সরকার যদি অন্যান্য সেক্টরের মতো সিনেমা হলকেও প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে অন্তত স্টাফরা বাঁচতে পারবে। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স, সরকারের নানা কর ও বিদ্যুৎ বিল যদি শিল্প খাতের আওতায় নেওয়া হয় এবং করোনামুক্তের পর সরকার ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে এ শিল্পটি আবার চালু হতে পারে।

 

স্টাফদের বাঁচাতে প্রণোদনা

চাই : রুবেল, কর্ণধার, মধুবন

বগুড়া

স্টাফদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলে মাসে ব্যয় আছে প্রায় দুই লাখ টাকা। আগে ছবি ও দর্শকের অভাবে লোকসান দিয়ে চালিয়ে নিয়েছি। এখন করোনার কারণে একেবারে বন্ধ হলেও খরচ ঠিকই বহন করতে হচ্ছে। কিন্তু এটি কতদিন সম্ভব। সরকার যদি একশটি সিনেমা হলের জন্য একশত কোটি টাকা প্রণোদনা বা সুদমুক্ত ঋণ দেয় তাহলে এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব এবং বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ শিল্পটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

 

ধারদেনা করে আর কত : খুরশিদ আলম,

কর্ণধার উর্বশী

মুন্সীগঞ্জ

সিনেমা হলের ব্যবসা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ছবি আর দর্শক নেই, সরকার নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। প্রায় ২৬ জন স্টাফ আর নানা বিল, কর বহন করতে মাসে ২ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়। এতদিন লোকসান আর ধারদেনা করে চালিয়েছি। এখন করোনার কারণে একদম বন্ধ। তারপরেও খরচ কিন্তু ঠিকই বহন করতে হচ্ছে। সরকার যদি স্টাফদের প্রতি সদয় হয়ে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেন তাহলে দেশে সব সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

 

চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি : আজগর কর্ণধার,

পান্না সিনেমা

দিনাজপুর

সিনেমা হলের ব্যবসা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে দর্শক দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হলবিমুখ। তখন থেকেই লোকসান গুনে হলেও এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। এখন করোনার কারণে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি। স্টাফরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় সরকারের কাছে প্রথমে তাদের বাঁচাতে প্রণোদনা চাইব। এরপর স্বল্প বা বিনা সুদে সিনেমা হল নতুন করে খুলতে সংস্কারের জন্য ঋণের আবেদন করছি। আমার সিনেমা হলে মাসে খরচ আছে প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশি।

 

প্রণোদনা দিয়ে স্টাফদের বাঁচান : রবিউল ইসলাম

কর্ণধার উপহার

পাবনা

সিনেমা হলের ব্যবসায় এতদিন লোকসান দিয়ে আসছি। কারণ মানসম্মত ছবি ও দর্শকের অভাব রয়েছে। সরকার সিনেমা হল ডিজিটাল করার ঘোষণা দিয়েও নিশ্চুপ রয়েছেন। দেশের প্রধান গণমাধ্যম বলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লোকসান গুনেও বন্ধ করিনি। এখন করোনার কারণে একবারে বন্ধ। কিন্তু স্টাফদের বেতনসহ নানা খরচ ঠিকই আছে। আয় না থাকলে এসব বহন করব কীভাবে। সরকারের কাছে এ অবস্থায় আবেদন করব স্টাফদের বাঁচাতে হলেও অন্যান্য সেক্টরের মতো আপাতত প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক, দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা হোক। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়টি আসবে।

 

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে : রফিকউদ্দীন,

কর্ণধার উল্কা

গাজীপুর

আগে ছবি না থাকায় লোকসান গুনেছি, এখন করোনার কারণে বন্ধ থাকায় চরম বিপর্যয়ে পড়েছি। আমার সিনেমা হলে প্রায় ২৭ জন স্টাফ আছে। সব খরচ মিলিয়ে মাসে পৌনে চার লাখ টাকা খরচ আছে। ইতিমধ্যে লোকসান দিয়ে এক মাসের খরচ চালিয়েছি। আগামীতে কী করবো জানি না। সরকার যদি স্টাফদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে এ দরিদ্র মানুষগুলো বেঁচে যাবে। ১৯৭০ সাল থেকে চালু হওয়া এ সিনেমা হলের স্টাফদের বেতন কখনো একদিনের জন্যও বন্ধ রাখিনি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থা থেকে একমাত্র সরকারই উদ্ধার করতে পারেন।

 

এমন বিপর্যয় আগে দেখিনি : উত্তম কুমার সিংহ

কর্ণধার মাধবী

টাঙ্গাইল

১৯৮০ সাল থেকে সিনেমা হলটি পৈতৃকভাবে চালিয়ে আসছি। আগে কখনো এমন ভয়াবহ দুর্যোগে পড়িনি। ১৫ জন স্টাফ আছে। ৩০ বছর ধরে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আগে ছবি আর দর্শকের অভাবে ধারদেনা করে হলেও সিনেমা হল চালিয়েছি। এখন করোনার কারণে বন্ধ, সিনেমা হলের খরচ কোথায় পাব?

সরকারের কাছে আবেদন ঈদের আগেই দরিদ্র দৈনিক মজুরিভিত্তিক এসব স্টাফকে বাঁচাতে প্রণোদনা দিন। করোনা শেষে না হয় ঋণ দিয়ে সিনেমা হলটি আবার চালুর ব্যবস্থা করে দেবেন।

 

আয়বিহীন ব্যয় কতদিন : আশরাফুল বাবু

কর্ণধার ময়ূরী

যশোর

সিনেমা হল ব্যবসার আগের মন্দ অবস্থার কথা না-ই বা বললাম। বর্তমানে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের ব্যয় কিন্তু ঠিকই নির্বাহ করতে হচ্ছে। আয়বিহীন এ ব্যয় কতদিন বহন করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে করুণ অবস্থায় পড়ছে স্টাফরা। ব্যবসার প্রধান এক মৌসুম নববর্ষ চলে গেছে। ঈদেও খুলবে কিনা জানি না। এ অবস্থায় স্টাফদের বাঁচাতে হলেও সরকারের কাছে আবেদন প্রণোদনা দিন। পরে বিনা বা স্বল্প সুদে ঋণ দিলে আবার সিনেমা হল চালু করা সম্ভব হবে।

               

হলটি আর খুলব কিনা জানি না : সফর আলী ভূঁইয়া

কর্ণধার, অভিসার

ঢাকা

সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করলেও শিল্পের সুবিধা কখনোই পাইনি। তাই প্রায় সব সিনেমা হলই বন্ধ হয়ে গেছে। ৭২ জন স্টাফ ছিল। করোনার বন্ধের পর সবাইকে এক মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করেছি। আগামীতে সিনেমা হলটি খুলব কিনা জানি না। মাসে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ আছে। কয়েক বছর ধরে মাসে এক লাখ টাকাও আয় নেই। মূলত এ শিল্পের প্রতি সরকারের অবহেলার কারণেই শুধু আমারটি নয় আগামীতে আরও অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে। আর সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলে দেশের প্রধান এ গণমাধ্যমের অভাবে সরকার বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত ও যুব সমাজে অপরাধ বাড়বে

 

খরচ মেটাতে হিমশিম  খাচ্ছি : আমির হামজা

কর্ণধার, নিউ গুলশান

জিঞ্জিরা

আমার সিনেমা হলের স্টাফ ৪৯ জন। মাসে সবমিলিয়ে খরচ প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। এখন বিদ্যুৎ বিল কার্ড সিস্টেমে চলে। কার্ডের টাকা শেষ হলে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থা এবং ছবি ও দর্শকের অভাব সত্ত্বেও অনেক কষ্টে সিনেমা হল চালু রেখেছি। সরকার অনেক সময় নানা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার সিকি ভাগও পূরণ হয়নি। এখন করোনার কারণে বন্ধ হলের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। স্টাফদের বাঁচাতে হলেও সরকার যদি প্রণোদনার ব্যবস্থা করে তাহলে আপাতত বেঁচে যাই। পরে না হয় নতুন করে চালু করতে সংস্কারের অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়ে এ সিনেমা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবে সরকার।

 

বেতন কীভাবে দেব জানি না : মো. কলিমউল্লাহ কর্ণধার,

আজাদ

ঢাকা

দীর্ঘদিন ধরে এমনিতেই সিনেমা হলের ব্যবসা ছবি ও দর্শকের অভাবে মন্দ। এখন করোনার কারণে বিপর্যস্ত। বন্ধ অবস্থায় খরচ মেটাতে হচ্ছে। প্রায় ২০ জন স্টাফ ও অন্য খরচ মেটাতে মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়। স্টাফদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কীভাবে দেব জানি না। সরকার যদি অসহায় স্টাফদের বাঁচাতে আপাতত প্রণোদনার ব্যবস্থা করে তাহলে এ দুর্যোগের হাত থেকে সিনেমা হল বেঁচে যাবে। সরকারের কাছে অনুরোধ প্রয়োজনে আপনাদের লোক দিয়ে তদন্ত করে প্রণোদনা দিন।

সর্বশেষ খবর