বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘরবন্দী তারকাদের ঘরোয়া জীবন

ঘরবন্দী তারকাদের ঘরোয়া জীবন

মহামারী করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে ব্যস্ত জীবন থমকে গেছে। শোবিজের মানুষগুলোও ঘরবন্দী। ঘরবন্দী হলেও সময়কে নানাভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তারা। আতঙ্ক দূর আর নিজেকে সচল রাখতে তাদের আয়োজনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ ও আলী আফতাব

 

করোনায় গৃহবন্দী অভিনেত্রী ববিতার সময় কাটছে কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নামাজ, দোয়া, নিয়মিত ব্যায়াম আর ঘরের সব কাজ করছি। আমার পাখি আর ফুলবাগান আছে। বাগানের পরিচর্যা করছি, টিভি দেখছি, বই পড়ছি আর ফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর রাখছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। ড্রাইভার, বুয়া, মালিসহ যারা বাসায় আছে তাদের বের হতে দিচ্ছি না। সবাইকে সাবধানে রাখছি। সবাইকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি। ঘরের চার দেয়ালে বন্দী আমরা সবাই। তাই বলে সব কিছু থেমে যাবে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার কথায়, আমি চুপচাপ ঘরে বসে থাকার মানুষ নই। কোনো না কোনো কাজ খুঁজে নেওয়া চাই। গত কদিন বাসা জীবাণুমুক্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলাম। এরপর শুরু করেছি হাতের কাজ।

কুশন, ফ্লাওয়ার ভাস, শিকাসহ ছোটখাটো জিনিস তৈরি করে যাচ্ছি। দুস্থ ও অসহায় মানুষকে নিজের সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করে যাওয়ার চেষ্টাও করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ইউনিসেফের অফিসিয়াল ফেসবুকে বিভিন্ন বার্তাও দিচ্ছি। তিশার মতো তার স্বামী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও চুপচাপ বসে নেই। ইউনিসেফের ফেসবুকে জনসচেতনার বার্তাগুলো ভিডিও নির্মাণের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে কণ্ঠশিল্পী হাবিব তার স্টুডিওতে বসে নতুন গানের আয়োজন করে যাচ্ছেন। তার কথায়, ঘরে বসেও অনেক কিছু করা যায়। মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ না থাকলেও অনলাইনে কাজ সমাধা করা অসম্ভব নয়।

করোনাভাইরাসের শুরুর দিন থেকে ঘরে বন্দী দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। নানাভাবে নিজের মূল্যবান সময় কাটাচ্ছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি তিনি নজর কেড়েছেন পথকুকুরদের খাওয়ানোর বিষয় নিয়ে। তার ঘরে একটি কুকুর আছে। সে যদি খাবার পায় পথকুকুর কেন খাবার পাবে না। এই লক্ষে তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথকুকুরদের খাওয়াতে শুরু করেন। পাশাপাশি করছেন ঘরের রান্নার কাজ।

অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস বলেন, ঘরের কাজ তো আছেই, কারণ কাজের মানুষকে ছুটি দিয়েছি। নিজেকে এই বন্দী অবস্থায় ফিট রাখতে ইউটিউব থেকে নানা টিপস নিচ্ছি আর সেগুলো ফলো করছি। প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ওয়াক আউট করছি। নিজে ও পরিবারের সবাইকে সাবধানে রাখছি, জয় আর মাকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। সবার প্রতি অনুরোধ, এই দুর্যোগ কাটাতে নিয়ম মেনে চলুন আর ঘরে থাকুন। নিজেকে নিরাপদ রাখুন সবাইকে নিরাপদ থাকতে সহায়তা করুন।

অন্য সব শোবিজ তারকার মতো নুসরাত ফারিয়া এখন বাসায়। নেই কাজের ব্যস্ততা। সময় কাটছে সিনেমা, ঘরের নানা কাজ ও ছাদের বাগানে। সম্প্রতি ফেসবুকে নানা ধরনের সবজি হাতে একটি ছবি বেশ সাড়া ফেলেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি গান গেয়ে শুনিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তাদের কথায়, এই দুঃসময়ে মানুষ ঘরবন্দী থেকে যেন মুষড়ে না পড়ে, তার জন্য এই বিনোদনের ব্যবস্থা।

ছোট ও বড় পর্দার আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। নামাজ, বই পড়া, আর বারান্দায় থাকা নানা ধরনের পাতাবাহার গাছের সঙ্গে বেশ ভালো একটি সময় কাটছে তার। আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা সজলও এখন বাসায় বন্দি। সিনেমা দেখার পাশাপাশি তাকেও দেখা যাচ্ছে ঘর পরিষ্কার ও ছাদের বাগান পরিচর্চার কাজে। অন্যদিকে ছোটপর্দার আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন। তারও সময় কাটছে রান্নাঘর আর শরীরচর্চা নিয়ে। সম্প্রতি বিরিয়ানি রান্নার একটি ভিডিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার। সিনেমা দেখা, বই পড়ার পাশাপাশি সময় মতো করছেন শরীরচর্চা। এ সময়ের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী বাঁধন। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথম থেকেই নানা ধরনের সচেতনতামূলক ভিডিও দিয়ে আসছেন প্রথম থেকে। পাশাপাশি চলছে নানা ধরনের মজার মজার রান্না নিয়ে। সময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল। পরিবারের পাশাপাশি তার এখন সময় কাটছে শরীরচর্চা নিয়ে। পাশাপাশি চলছে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতার কাজ। সিনেমা পর্দার আরেক জনপ্রিয় তরুণ  অভিনেত্রীর নাম পূজা চেরি। এ অবসরে ঘরে বসে দুটি নতুন পদ রান্না করা শিখেছেন তিনি। প্রথমবার বাসার মানুষের জন্য একদিন ফ্রাইড রাইস ও আরেক দিন বিরিয়ানি রান্না করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগে থেকে কিছু পদের রান্না পারতাম। ঘরে বসে কতক্ষণ থাকা যায়, তাই নতুন নতুন কিছু রান্না শেখার চেষ্টা করছি। ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে প্রথম বিরিয়ানি ও ফ্রাইড রাইস রান্না করেছি।’ রান্নার পাশাপাশি অনেক ধরনের বই পড়ছেন তিনি।

অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম প্রথমবারের মতো পুডিং ও চিজপাস্তা তৈরি করা শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বাসায় ফিরে রান্না শেখার সময় হতো না। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ঘরে থাকতে হচ্ছে অনেক দিন। সেই অবসরে ইউটিউব দেখে পুডিং, চিজপাস্তা বানিয়েছি। আর সময় পেলেই শরীরচর্চা করছি।

করোনা মহামারীর কবল থেকে রক্ষা পেতে মাহিয়া মাহির বন্দীদশা কাটছে গান শুনে আর তার প্রিয় বেবি টোকিওকে নিয়ে। মাহি বলেন, টোকিও মানে আমার প্রিয় কুকুর ছানা। প্লিজ, ওকে কুকুর বলবেন না। ও আমার বেবি। গত ডিসেম্বরে দেড় মাস বয়সী এই কুকুরটি তিনি বনানী থেকে কিনেছেন। টোকিও তার এতটাই প্রিয় যে, তাকে নিয়েই তিনি কিশোরগঞ্জ গিয়েছিলেন ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবির শুটিং করতে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ রয়েছে এফডিসি, সেখানকার অভুক্ত প্রাণীগুলোকে দেখার কেউ নেই। এই প্রাণীগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তাদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তিনি। তার কথায় এফডিসির কুকুরগুলো খেতে না পেয়ে শুকিয়ে গেছে। এখন থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করব। এফডিসির বানরগুলোকে খাবার দিলাম, ঝরনা স্পটে গিয়ে পাখিদের খাবার দিয়েছি। তারা অভুক্ত থাক এটি আমি সহ্য করতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর