মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

প্রদর্শকদের দাবি বন্ধ হয়ে যেতে পারে সব সিনেমা হল

আলাউদ্দীন মাজিদ

করোনায় চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

করোনায় বন্ধ থাকায় প্রায় ১ মাসে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এই দাবি শিল্পসংশ্লিষ্টদের। আর চরম মানবেতর জীবনের কবলে পড়েছেন চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের শিল্পী, কলাকুশলী, নির্মাতা ও সিনেমা হলের কর্মীরা। করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সিনেমা হল। বেশির ভাগ বন্ধ সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা  বেতন বা ভাতা পাননি। বলাকা হলের অন্যতম ব্যবস্থাপক শাহিন জানান, এখন পর্যন্ত তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিয়ে যাচ্ছেন। তার কথায় হলের ব্যবসা হয় মাসে ২-৩ লাখ টাকার, কিন্তু মাসে বেতন দিতে হয় ৬ লাখ টাকার বেশি। ঈদ মৌসুম বা খুব হিট ছবি ছাড়া প্রতি মাসে ভর্তুকি দিতে হয়। সেটা মার্কেটের ভাড়া থেকে অ্যাডজাস্ট করা হয়। এখন মার্কেট বন্ধ থাকায় সেখান থেকেও আয় নেই। মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, মার্চ-এপ্রিলের বেতন এখনো দিতে পারিনি। গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে হল চালিয়েছি। বতমান যে পরিস্থিতি তাতে আসন্ন ঈদেও হল চালানো সম্ভব হবে কিনা জানি না। প্রদর্শক সমিতি জানায়, এ অবস্থায় অনেক সিনেমা হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশির ভাগ হল কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেনি। রায়েরবাজারে অবস্থিত মুক্তি সিনেমা হল। করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ায় রায়েরবাজার এলাকায় চলছে লকডাউন। এ হলটিতে কাজ করেন ২২ জন কর্মচারী। তাদের অনেকেই এ এলাকায় বাস করেন। যারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। হলটির ব্যবস্থাপক শহিদুল্লাহ বলেন, হল বন্ধের প্রায় এক মাস হতে চলল। আগের মাসের বেতনই দেওয়া হয়নি। কাউকে সামান্য বেতন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মিরপুরের পূরবী হলের ম্যানেজার পরেশ জানান, তাদের হলে মোট ৩২ জন কর্মচারী কাজ করেন। এ হলের কর্মচারীরাও বেতন পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা না থাকলে মালিকের পক্ষে বেতন দেওয়া কীভাবে সম্ভব? রংপুরের শাপলা হলের ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, মার্চ মাসের বেতন  দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন যা অবস্থা, তাতে হল খুললেও মানুষ আসবে বলে আমার মনে হয় না। এ হলে ২২ জন কর্মচারী ফুলটাইম চাকরি করেন। যশোরের মণিহার  প্রেক্ষাগৃহের কর্মচারীরাও দুই মাস ধরে বেতন পাননি। এ প্রেক্ষাগৃহের হিসাবরক্ষক  তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা ৩২ জন কাজ করি। মালিকপক্ষ ভর্তুকি দিয়ে হল চালাত। বেতন দেওয়া হতো আমাদের মার্কেট, আবাসিক হোটেল ও কমিউনিটি  সেন্টারের আয় থেকে। লকডাউনের ফলে তাও বন্ধ আছে। চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেসে কাজ করেন ১৫ জন, ঝুমুর হলে ১২ জন। তাদেরও বেতন হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন  প্রেক্ষাগৃহ দুটির ম্যানেজার সাইফ হোসেন। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, সারা দেশেই হল মালিকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় তারা সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছেন। মিয়া আলাউদ্দিন আরও বলেন, মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ  ঠেকাতে বন্ধ হওয়ার আগে যে হলগুলো চালু ছিল তার তালিকা উপজেলার ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী যেন কর্মচারীদের বেতন বা সহায়তা প্রদান করা হয়। না হলে বর্তমানে চালু থাকা প্রায় ৬২টি সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে মালিকরা। এদিকে করোনার কারণে এক মাস ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন বন্ধ থাকায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে চলচ্চিত্র শিল্প, জানিয়েছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় এখন সরকারি প্রণোদনা। না হলে চলচ্চিত্র শিল্প আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানালেন প্রযোজক নেতারা। দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে প্রায় ১৫ চলচ্চিত্র। সময়মতো মুক্তি না পাওয়ায় ও চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেমা হল বন্ধ থাকায় গত এক মাসে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ও সিনেমা হল মালিকদের জন্য সরকারি প্রণোদনা দিতে হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, অনেক হলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা না চলায় স্টাফদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিকরা। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি স্টাফদের প্রণোদনা ও ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য। এদিকে ছবির নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন কাটছে চলচ্চিত্রের কলাকুশলী ও সহশিল্পীদের। এছাড়া সম্পাদনা বিভাগ, ডাবিং, মেকআপম্যান, স্ট্যান্টম্যান, ক্যামেরাম্যান, প্রোডাকশনবয়সহ সবাই  বেকার। সবমিলিয়ে চরম দুর্যোগের কবলে পড়েছে চলচ্চিত্র শিল্প। সরকারি সহায়তা না পেলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে জানান প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। এদিকে গত দুই মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না এফডিসি কর্তৃপক্ষ। এফডিসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির আয় থেকেই ব্যয় নির্বাহ করা হয়। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় এফডিসিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো আয় নেই। সংস্থার কর্তৃপক্ষ বেতন প্রদানের জন্য সরকারের কাছে ঋণের আবেদন করেছে বলে সংস্থার প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর