শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → শহীদুজ্জামান সেলিম

করোনার বিরুদ্ধে নিজেকে তৈরি রাখতে হবে

করোনার বিরুদ্ধে নিজেকে তৈরি রাখতে হবে

দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। দীর্ঘদিন ধরে থিয়েটার, টিভি নাটক আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। ছোট পর্দায় আশির দশক থেকে বর্তমানের সেতুবন্ধে যার রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। এখনো অভিনয় করে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র ও ছোট পর্দায়। করোনার এই সময়ে তিনিও সবার মতো রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। সাম্প্রতিক অবস্থা ও সমসাময়িক কাজ নিয়ে তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

করোনাময় পরিস্থিতিতে আপনার সার্বিক অবস্থা কী?

আমি লকডাউন! আমি তো আর সাধারণ মানুষের বাইরে না। বসুন্ধরায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি এক মাসের অধিক। তবে এরমধ্যে কয়েকবার বের হতে হয়েছে বাজার-সদাই করার জন্য। তাছাড়া আর একবারও বাইরে বের হইনি।

 

বাসায় তো এখন দুজনই! কী করে সময় পার করছেন?

হুম, রোজী আর আমি। বাসায় বসেও টেলিফোনে সংগঠনের কাজ করি। নিজেকে সময় দিচ্ছি। ঘর গুছিয়ে, বই পড়ে, টিভি ও প্রজেক্টরে বড় স্ক্রিনে মুভি দেখে আর এক্সারসাইজ করে সময় পার করছি।

 

লকডাউন হলেও তো মানুষজন মানছে না। তারা নিয়মকে তোয়াক্কা করে বাইরে বের হচ্ছে। এটা কি দুশ্চিন্তার বিষয় নয়?

এখনকার চিত্র তো আরও ভয়াবহ! প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এরমধ্যে আবার কল-কারখানা খুলে দেওয়ার যে ডিসিশন নিয়েছে; শ্রমিকরা চলে আসছে। চিন্তায় আছি, বাংলাদেশে মহামারী আকারে যেন না হয়!

 

বিশেষ ব্যবস্থায় দুই শত নাটক নির্মাণের উদ্যোগ কি সত্যি?

এই বিষয়টি একটু পরিষ্কার করা প্রয়োজন। সরকারি লকডাউন যতদিন চলবে, ততদিন পর্যন্ত কোনো শুটিংয়ে কোনো শিল্পী অংশগ্রহণ করবে না। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর যদি সুযোগ থাকে, ঈদের নাটক তৈরির যদি সময় থাকে, তখন সবাই স্বাভাবিকভাবেই শুটিংয়ে অংশ নেবে। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই লকডাউনের সময় সাংগঠনিক বিষয়টি অনেক প্রবল, শক্তিশালী ও গতিশীল হয়েছে- সবাই বাসায় থাকার কারণেই। টেলিফোন ও ইন্টারনেটের কল্যাণে যতটা কাছে থাকা যাচ্ছে, কথা-বিনিময় করা যাচ্ছে, সেটা স্বাভাবিক অবস্থায়ও সম্ভব হতো না বা করতে পারা যায়নি। তখন তো মিটিং ডাকলে সশরীরে উপস্থিত অনেক সময় কেউ হতে পারত, আবার কখনো পারত না। কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বাসায় বসে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেক সুন্দর করে করা যাচ্ছে।

 

অভিনয়শিল্পী সংঘের ত্রাণ তৎপরতা এখনো চলছে?

এখনো চলছে। নিয়মিত তহবিল গঠন কার্যক্রম চলছে। স্বল্প আয়ের যে শিল্পীরা আছেন, তার সঙ্গে অন্যান্য সংগঠনের প্রচুর কলাকুশলী আছেন যারা খুবই দরিদ্র, তাদের প্রথম পর্যায়ে সাহায্য করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও শিল্পীদের সহযোগিতা করার প্লান করছি। প্রয়োজনে আন্তঃসংগঠন থেকে যদি বলা হয় আমাদের ফান্ড দেওয়ার জন্য, তাহলেও অভিনয়শিল্পী সংঘ তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে।

 

একটা অভিযোগ শোনা গিয়েছিল যে, এই মহতী উদ্যোগে অনেক তারকাকে পাশে পাওয়া যায়নি...

সবাই আসছে, আবার সবাই আসেনি! সবাই তো আর আসবে না। যাদের ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তারা একসময় স্বল্প পরিসরে হলেও এগিয়ে এসেছি। এমন নয় যে, তারা আসেনি। তবে হ্যাঁ, একটু দেরি করে এসেছে অনেকে। একটা ফান্ড গঠনের জন্য আবেদন করা হয়, প্রত্যেক মানুষ তথা শিল্পীর আলাদা একটা চিন্তা থাকে। তবে, প্রত্যেক শিল্পীর উচিত তার সংগঠনকে প্রথম প্রাধান্য দেওয়া। তারপর সে তার অন্য কমিটমেন্টের স্থানগুলোকে প্রাধান্য দেবে। প্রত্যেকেরই কমিটমেন্টের জায়গা আছে। সেই হিসেবে এই সংকটময় মুহূর্তে কিছুটা হলেও সবাই অংশগ্রহণ করবে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় পরিসরে এগিয়ে আসবেন। এমন আশাই এখন আমরা করতে পারি।

 

ভবিষ্যতে অভিনয়শিল্পী সংঘ আর কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছে?

আমাদের এই নাটক ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে দৈনিক দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয়। মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লেনদেন! এরকম একটি ইন্ডাস্ট্রিতে ৫০০০ এর মতো লোক কাজ করে। দুই মাস ধরে লকডাউন চলছে। ফলে আমরা কেউ কাজ করতে পারছি না। এটি আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তথা পুরো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলবে। বিনোদন জগতের শিল্পী ও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া উচিত। সরকারি সার্বিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

 

সরকারি প্রণোদনার জন্য সংগঠন থেকে কোনো আবেদন করা হয়েছে?

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য মন্ত্রণালয় হয়ে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছি। আমাদের প্রায় সাড়ে চার শত শিল্পী এবং প্রায় দুই হাজার কলাকুশলীর জন্য আবেদন করেছি সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার জন্য। এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া বা সুফল পাইনি। তবে চেষ্টা কিন্তু চালিয়ে যাচ্ছি।

 

করোনা নিয়ে আপনার বার্তা কী?

সরকারি ও ডব্লিউএইচও’র যে নির্দেশনা রয়েছে, সে অনুযায়ী সচেতন থেকে করোনার বিরুদ্ধে নিজেকে তৈরি রাখতে হবে। ঘরে থাকতে হবে, সুস্থ থাকতে হবে। নিজেকে বাঁচাতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে।

সর্বশেষ খবর