বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় আটকে গেছে যেসব ছবির মুক্তি ও নির্মাণ

ঈদে সিনেমা হল খোলা নিয়ে মতভেদ

আলাউদ্দীন মাজিদ

করোনায় আটকে গেছে যেসব ছবির মুক্তি ও নির্মাণ

করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ছবি নির্মাণ, মুক্তি ও সিনেমা হল। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন নির্মাতা ও সিনেমা হল মালিকরা। এদিকে বেশ কিছু সিনেমা হলের মালিক ঈদে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন বলেন, সিনেমা হল ঈদে খুলে দেওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই। প্রদর্শক সমিতি বলছে শপিংমল, পোশাকশিল্প কারখানা ও ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি খুলে দেওয়া যায় তাহলে সিনেমা হল কেন নয়? বছরের দুই ঈদ ও বাংলা নববর্ষ হচ্ছে সিনেমা হল মালিক ও নির্মাতাদের প্রধান ব্যবসার মৌসুম। এই মৌসুমগুলোতে ছবি চালিয়ে সারা বছরের জন্য কিছুটা হলেও আয় ঘরে তোলা যায়। করোনার কারণে এবারের নববর্ষে ছবি প্রদর্শন করা যায়নি বলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রদর্শক ও নির্মাতারা। এখন যদি ঈদে অন্তত সিনেমা হল খুলে দেওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে ছবি চালিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মুক্তি পেতে পারেন প্রদর্শক ও প্রযোজকরা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও চন্দ্রিমা সিনেমা হলের মালিক কাজী শোয়েব রশিদ বলেন, ঈদে সিনেমা হল খুলবে কিনা এটি তখনকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রদর্শক সমিতির আরেক কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, সিনেমা হলে বসার দূরত্ব বজায় রেখে ছবি চালানো সম্ভব। তবে আমার মতে, করোনার কারণে দর্শক সিনেমা হলে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সার্বিক দিক ক্ষতিয়ে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উল্লেখ্য, করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে গত ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে সিনেমা হল। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ছবি নির্মাণ।

ঈদুল ফিতরে সাম্ভাব্য মুক্তির তালিকায় রয়েছে চারটি ছবি। এগুলো হলো- ‘মিশন এক্সট্রিম’ পর্ব-১, ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘মন দেব মন নেব’। ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির প্রযোজক ও পরিচালকদের একজন সানী সানোয়ার বলেন, এ পরিস্থিতিতে দর্শক সিনেমা হলে যাবে কিনা, তাও ভাবার বিষয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে ঈদে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেব। ‘মন দেব মন নেব’ ছবির পরিচালক রবিন খান বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলেও মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরতে সময় লাগবে। তারপরও এ অনিশ্চয়তার মধ্যে ঈদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ‘শান’ ছবির প্রযোজক আজাদ খান বলেন, ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়া যাবে কিনা এটি নির্ভর করবে তখনকার পরিস্থিতির ওপর। মার্চে মুক্তির তালিকায় ছিল ‘নীল মুকুট’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’, ‘চল যাই’, ‘নারীর শক্তি’, ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’, ‘বান্ধব’, ‘নীল ফড়িং’ প্রভৃতি ছবি। এই ছবিগুলো করোনার কারণে মুক্তি স্থগিত করায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন। তার কথায় কোনো ছবি নির্দিষ্ট সময় মুক্তি না পেলে নানা কারণে ছবিটির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এটি লোকসানের কবলে পড়ে। যেসব ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল সেগুলো হলোÑ ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ ২০ মার্চ এবং ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ১৩ মার্চ। মার্চ মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘নীল মুকুট’, ‘জ্বীন’, ‘আমার মা’, ‘গোর’, ‘পরাণ’ প্রভৃতি। এই ছবিগুলোর মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ছবির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘বঙ্গবন্ধু’। এর শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৭ মার্চ। করোনার কারণে তার নির্মাণকাজ পিছিয়েছেন ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। ১৫ মার্চ থেকে নেপালে ‘কানামাছি’ সিনেমার শুটিং শুরুর কথা ছিল। সেটিও স্থগিত। আরও বন্ধ হয়ে গেছে নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘গাঙচিল’, ‘জ্যাম’; রায়হান রাফীর ‘স্বপ্নবাজী’, ‘ইত্তেফাক’; সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’, ‘আকবর’; সাইফ চন্দনের ‘ওস্তাদ’, ‘মন্ত্র’, ‘কাপ্তান’ ও ‘কয়লা’; দীপঙ্কর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’; অনন্য মামুনের ‘নবাব এলএলবি’; কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’; মালেক আফসারীর ‘টেনশন’সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং। এসব ছবির সেট নির্মাণসহ অনেক কাজ আগেই শেষ হয়েছিল। শুটিং শুরু করতে না পারায় ছবিগুলোর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট নির্মাতারা। এদিকে তৈরি রয়েছে দিন : দ্য ডে, মিশন এক্সট্রিম-২, অপারেশন সুন্দরবন, ইত্তেফাক, আনন্দ অশ্রু, নদীর বুকে চাঁদ, সাইকো, গাঙচিল, শনিবার বিকেল, ওস্তাদ, পাপ-পুণ্য, আগামীকাল, আদম, সিক্রেট এজেন্ট, ডেঞ্জারম্যান, স্বপ্নবাজী, ঢাকা ২০৪০, বিক্ষোভ, মানুষের বাগান, পেয়ারার সুবাস, কমান্ডো, ওপারে চন্দ্রাবতী, বসন্ত বিকেল, সাহসী যোদ্ধা ও পদ্মপুরাণসহ বেশকিছু ছবি। ছবি নির্মাণ বন্ধ ও মুক্তি দিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কতটা ভয়াবহ হয় সেই আশঙ্কায় পড়েছেন এখন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর