বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → রামেন্দু মজুমদার

একটা নতুন জীবন তৈরি হয়েছে

একটা নতুন জীবন তৈরি হয়েছে

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। তিনি মঞ্চনাটক আন্দোলনের পথিকৃৎ। মঞ্চের পাশাপাশি তিনি অন্যতম একজন টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। স্বাধীনতা আন্দোলনেও ছিল তার অসামান্য ভূমিকা। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই প্রবীণ অভিনেতা রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। মুঠোফোনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন-  পান্থ আফজাল

 

সুস্থ আছেন?

জি, এখনো পর্যন্ত সুস্থ আছি।

 

বাসা থেকে কি বাইরে বের হন?

আমি তো একমাসের বেশি বাসায় আছি। একদম বাড়ির বাইরে যাই না। সেও (ফেরদৌসী মজুমদার) যায় না। যেই আমি প্রতিদিন এত ঘুরাঘুরি করতাম, আজকে এতদিন হলো বাড়ির বাইরে যাই না। কিন্তু এই নতুন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি।

 

এই সংকটময় সময়ে উপলব্ধি কী?

এটা একটা প্রকৃতির প্রতিশোধ। আমরা প্রকৃতির ওপরে অনেক অত্যাচার করেছি, প্রকৃতিকে নিজেদের ভোগ-লালসার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ধ্বংস করেছি। এতকিছুর পরও সর্বংসহা প্রকৃতি এতদিন কিছুই বলেনি। কিন্তু এবার দেখিয়ে দিয়েছে মানুষ কতটা অসহায়! তবে এর সুফলও রয়েছে। একটা নতুন জীবন তৈরি হয়েছে আমার। একটা নতুন অভ্যাস, রুটিন। যদিও মনে সবসময় একটা অস্থিরতা থাকে। আমি মনে করি, এই সময়ে আমরা যে ভালো অভ্যাসগুলো রপ্ত করেছি সেগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনেক কাজে আসবে।

 

করোনার সময়ে বাসায় নিজেকে কীভাবে ব্যস্ত রাখছেন?

একসঙ্গে অনেক কিছুই করতে পারি না। এখন কিছু কিছু বই পড়ি। কিছু লেখা শুরু করেছি। গান শুনি। ইন্টারনেটে সময় কাটাই। টেলিফোনে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলি। টেলিভিশন দেখি।

 

মাঝে ফেসবুক লাইভেও এসেছিলেন দুজনে...

হ্যাঁ, এসেছিলাম। থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপা অনলাইন আড্ডায়। পয়লা বৈশাখের বিশেষ আয়োজন ছিল সেটি।

 

সে লাইভে আপনাদের বসবাসরত বাড়িটিকে ভবিষ্যতে জাদুঘর তৈরির ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ইচ্ছা তাহলে সত্যি হচ্ছে?

লাইভে আমাদের দুজনের অনেক ইচ্ছার মধ্যে একটি বলেছিলাম। আমাদের এখন যে বাড়িটা আছে, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ক প্রচুর বই রয়েছে। এগুলো দিয়ে এই বাড়িটি ভবিষ্যতে একটি জাদুঘর করব।

 

দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ে আপনাকে নিয়মিত পাচ্ছি না কেন?

সাংগঠনিক দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফলে অভিনয়ের ক্ষেত্রে একটা ছেদ পড়েছে। তবে আমি আমার দল ‘থিয়েটার’-এর কিছু প্রযোজনায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছি।

 

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিওতে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করতেন। সেটিও তো করছেন না?

আসলে একটা বয়সের পর আর প্রয়োজন মনে করিনি। আর বাংলাদেশ টেলিভিশনের

সংবাদের বিষয়বস্তু আমার পছন্দ নয়। অনেক কিছুই অর্থহীন মনে হয়। বিটিভিতে যেভাবে খবর প্রচার হয়Ñ তার একেবারে ঘোরতর বিরোধী আমি। যদি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেখি তবে দেখবেন বিটিভির খবর পরিবেশনটা ঠিক নয়।

 

আমাদের মঞ্চনাটকের পরিস্থিতি কেমন বলে মনে হয়?

আমাদের নাটকের দল হয়েছে অনেক। নতুন কিছু দল খুব ভালো প্রযোজনাও করছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের অভিনয় করার মতো যথেষ্ট মঞ্চ নেই। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, অনেক দল আছে যাদের প্রযোজনা মানসম্পন্ন নয়। সুতরাং সংখ্যার দিক নয়, আমাদের গুণগত মানটাও আমি মনে করি দেখা প্রয়োজন।

 

কোন কোন উদ্যোগ মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে?

সরকার অবকাঠামোগুলো তৈরি করে দিক দেশব্যাপী। শুধু ঢাকায় করলে হবে না। সারা দেশে নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা যাতে সহজে বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতে পারেন, শিল্প-সংস্কৃতির কাজ করতে পারেন তার অবকাঠামোগুলো তৈরি করে দিলেই যথেষ্ট সহায়তা হবে বলে আমি মনে করি।

 

নাটক রচনা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

নাটক রচনার ক্ষেত্রে আমার আগ্রহ তেমন ছিল না, এখনো নেই। লেখার ক্ষমতাও আমার নেই বলে আমি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’ নাট্যরূপ দিয়েছিলাম। সেটি অভিনীতও হয়েছিল। পরবর্তীকালে বই আকারেও বেরিয়েছিল। শেকসপিয়রের ‘কমেডি অব এরর্স’র নাট্যরূপ দিয়েছিলাম। আর রেডিওতে কিছু উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর