বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

যেভাবে নার্গিস-সুনীল দত্তের প্রেম-বিয়ে

যেভাবে নার্গিস-সুনীল দত্তের প্রেম-বিয়ে

বলিউডে চল্লিশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নার্গিস আর পঞ্চাশের দশকে অভিনয়ে আসা সুনীল দত্তের মধ্যে ঘটনাচক্রে গড়ে উঠেছিল প্রেম, আর বিয়েতে গড়ায় প্রেমের পরিণতি। কীভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সে কথাই তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

হিন্দু সুনীল-মুসলিম নার্গিসের প্রেম

নার্গিস আর সুনীল দত্ত। বলিউডের দুই জনপ্রিয় তারকাশিল্পী। আবার সুখী দম্পতি। তাদের প্রেম-পরিণয়ের বিষয়টি বেশ নাটকীয়তায় ভরা। নার্গিস ছিলেন মুসলিম আর সুনীল দত্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সুনীল দত্তের প্রকৃত নাম বলরাজ দত্ত। আর নার্গিসের আসল নাম ফাতিমা রশিদ। সুনীল দত্তের জন্ম পাঞ্জাবের ঝিলামে, ৬ জুন ১৯২৯ সালে। অন্যদিকে নার্গিসের জন্ম কলকাতায় ১৯২৯ সালের পয়লা জুন। সুনীল দত্তের সঙ্গে বিয়ের পর ফাতিমা রশিদ পরিচিত হন নার্গিস দত্ত নামে। বিয়ের আগে মুসলমান ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন নার্গিস। আর হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে তিনি নির্মলা দত্ত নাম ধারণ করেন। অবশ্য তার ফিল্মি নাম নার্গিসই ছিল।

 

নার্গিসের অন্য প্রেম

১৯৪৭ সাল। রাজ কাপুর প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘আর কে ফিল্মস’। আর সেই ব্যানারেই প্রথম ‘আগ’ ছবির নায়িকা হয়ে আসেন নার্গিস। রাজ কাপুরের জীবনে শুরু হয় পরকীয়া প্রেমের নতুন এক অধ্যায়। তাদের দুজনের প্রেমপর্ব শুরু হয়েছিল রাজ কাপুরের আগের ছবি ‘বরসাত’-এর শুটিং থেকেই। রাজ কাপুর বিবাহিত জেনেও সাত বছর তিনি নানাভাবে চেষ্টা করে গেছেন সেই ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করার। কিন্তু নার্গিস হয়তো ভালোবাসায় অন্ধ হয়েছিলেন। বুঝেও বুঝতে চাননি সেই নিদারুণ সত্য, প্রেম নেই। তিনি শুধু আর কে ফিল্মসের লোগোর সেই বিখ্যাত ফ্রেমে বন্দী। এই সত্যটা বুঝতে নার্গিসের সময় লেগে গিয়েছিল সাত বছরেরও বেশি। রাজ কাপুর ভালোবাসতেন তার সংস্থাকে, ভালোবাসতেন আরও অন্য নায়িকাদের। তবে নার্গিসকে তিনি ভালোবাসেননি এমনও নয়। সাত বছর পর নার্গিস যখন অভিনেতা সুনীল দত্তকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন, ছেড়ে দিলেন রাজ কাপুরের হাত, শোনা যায় রাজ কাপুর তখন রাতে বাড়ি ফিরতেন মদ খেয়ে টালমাটাল হয়ে। নিজের ঘরে বসে কাঁদতেন একা একা।

 

রাজকে ছেড়ে সুনীলের প্রেমে নার্গিস

রাজ কাপুরের দিক থেকে কেন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন নার্গিস? সে কাহিনিও সিনেমার গল্পের চাইতে কম নাটকীয় নয়। সময়টা ১৯৫৭ সাল। মুম্বাই থেকে একটু দূরে উমরাও নামক স্থানে শুটিং চলছে মেহবুব খানের ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির। হঠাৎ করেই আগুন লাগল সেটে। সে আগুন মুহূর্তেই গ্রাস করে নিল সব কিছু। আর আগুনের মধ্যে আটকা পড়লেন স্বয়ং নার্গিস। সেটের কেউই ওই ভয়াবহ আগুনের মধ্য থেকে নার্গিসকে উদ্ধার করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। ঠিক তখনই অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে নার্গিসকে উদ্ধার করে আনলেন সেই ছবির এক অখ্যাত অভিনেতা সুনীল দত্ত। মাদার ইন্ডিয়ায় সুনীল দত্ত অভিনয় করছিলেন নার্গিসের ছেলের ভূমিকায়।

সেই অগ্নিকাণ্ডের কয়েকদিন আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন নার্গিস। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন রাজ তাকে বিয়ে করবেন না। তাদের মধ্যে প্রেমের নদী থাকলেও কোনো সেতু নেই। রাজ কাপুর কিছুতেই স্ত্রী আর সন্তান ছেড়ে এসে তাকে বিয়ে করবেন না। তাই সে দিন আগুনের ভিতর থেকে কোলে করে তাকে যখন বের করে আনছিলেন সুনীল দত্ত নার্গিসের হয়তো মনে হয়েছিল এমন একজন পুরুষের সন্ধানই তিনি করেছেন সারা জীবন। এ ঘটনার পর ১৯৫৬ সালে ‘জাগতে রাহো’ সিনেমার শুটিং শেষ করে আর কে ফিল্মসের ফ্লোরে আর কোনো দিন পা রাখেননি নার্গিস। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন রাজ কাপুরের দিক থেকে। মাদার ইন্ডিয়া ছবির শুটিং শেষ হলে নার্গিস দুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল আর সিনেমায় অভিনয় করবেন না। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, বিয়ে করবেন সুনীল দত্তকে। রাজের সঙ্গে মোট ১৬টি ছবিতে অভিনয় করেন নার্গিস। তার মধ্যে ছয়টি ছিল রাজ কাপুর ফিল্মসেরই প্রযোজনা।

 

নার্গিস-সুনীল দত্তের পরিচয় ও প্রেম

‘মাদার ইন্ডিয়া’য় অভিনয় করার সূত্রে নার্গিসের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সুনীল দত্তের। নার্গিসের তুলনায় সুনীল তখন বলিউডে প্রায় নবাগত, দুজনের স্টার স্ট্যাটাসে তখন বিস্তর ফারাক। ছবিতে সুনীল দত্ত নার্গিসের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তা ছাড়া ওই ছবির শুটিংয়ের সময় সেটে নার্গিসকে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচিয়েছিলেন সুনীল। কিন্তু নিজে আহত হন। হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। কৃতজ্ঞ নার্গিস সেবা করেন তার। তারপর দুজনের মধ্যে জন্ম নেয় প্রেম। এ ঘটনার কিছু দিন পরই ছবির সহঅভিনেতা সুনীল দত্তকে বিয়ে করেন নার্গিস। যদিও সে সময়ে গুজব রটেছিল, বলিউডে নিজের উত্থানের সোপান হিসেবে নার্গিসকে ব্যবহার করছিলেন তখন সুনীল। সুনীল দত্ত পরবর্তীকালে এক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে জানান, প্রথম দেখাতেই নার্গিসের প্রেমে পড়েন তিনি। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির শুটিংয়ের সময় আগুন লাগার  সে ঘটনায় জীবনবাজি রেখে তাকে উদ্ধার করায় সুনীল দত্তর প্রতি আকৃষ্ট হন নার্গিস। আহত সুনীল দত্তের অনেক সেবাও করেন তিনি। সে সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর প্রেম থেকে পরিণয়।  

 

অভিনয়ের কথা ছিল দিলীপ কুমারের

‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালের ২৫ অক্টোবর। এ ছবিতে বিরজুর ভূমিকায় মানে সুনীল দত্তের স্থলে প্রথমে দিলীপ কুমারের কথা ভাবা হয়। কিন্তু দিলীপ কুমার এর আগে অন্য ছবিতে নার্গিসের বিপরীতে রোমান্টিক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। দর্শক হয়তো মা-ছেলে রূপে তাদের দেখতে চাইবে না। তাই আনকোরা ও অপরিচিত অভিনেতা সুনীল দত্তকে বেছে নেওয়া হয়। আর এ ছবির মাধ্যমেই স্টার হয়ে ওঠেন পাঞ্জাবের ছেলে সুনীল দত্ত। ছবিটিতে যদি সুনীল অভিনয় না করতেন তা হলে হয়তো নার্গিস-সুনীলের প্রেম-বিয়ে-দাম্পত্য জীবন আলোর মুখ দেখত না।

 

নির্মাতার অনুরোধে গোপনে প্রেম

ছবি মুক্তির আগে প্রেমে জড়ালেও ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির নির্মাতা মেহবুব খানের অনুরোধে বিষয়টি তারা গোপন রাখেন। কারণ পর্দায় মা-ছেলের ভূমিকায় যারা অভিনয় করছেন তাদের মধ্যে প্রেম চলছে এমন খবর ছবির দর্শকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারত। ছবি মুক্তির পরের বছর ১৯৫৮ সালেই সুনীল দত্তকে বিয়ে করেন নার্গিস।

সর্বশেষ খবর