বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সেই আলোচিত জুটি দিলীপ কুমার-সায়রা বানু

সেই আলোচিত জুটি দিলীপ কুমার-সায়রা বানু

বলিউডের সর্বকালের শক্তিমান অভিনেতা দিলীপ কুমার। ফিল্মি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে একাধিকবার প্রেমে জড়ালেও শেষ পর্যন্ত ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেত্রী সায়রা বানুকে। এ বিয়ের পর পরকীয়ায়ও জড়ান তিনি। শেষ পর্যন্ত আবার ফিরে আসেন সায়রার ভালোবাসার ঘরে। ৫৪ বছরের সুখের সংসার। তাদের প্রেম-বিয়ের  গল্প তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

বলিউড তারকাদের মধ্যে বেশির ভাগই অভিনয় ক্যারিয়ারের পাশাপাশি নানা আলোচনায় এসেছেন বার বার। প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য জীবন এবং আলোচিত জুটি হিসেবেও আলোচিত হয়েছেন অনেক তারকা। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন দিলীপ কুমার-সায়রা বানু জুটি। ১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ ছবি দিয়ে হিন্দি ছবির জগতে পা রাখেন মুহাম্মদ ইউসুফ খান, যাকে বিশ্বের দর্শক চেনেন দিলীপ কুমার নামে। তার ব্যক্তিগত জীবনেও জোয়ার ভাটা কিন্তু কম যায়নি, বিশেষত তার প্রেমজীবনে উথাল- পাথাল লেগেই ছিল। তবে, জীবনে যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক দিলীপ কুমারকে আগাগোড়া আগলে রেখেছেন স্ত্রী সায়রা বানু। যদিও বেশ কয়েক বছরের জন্য এই সায়রাকেই ছেড়ে চলে গিয়েছিলন দিলীপ। সায়রার আগেও একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল হিন্দি ছবির সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম দিলীপ কুমারের। কিন্তু সেসব অভিনেত্রীকে ছাপিয়ে আজও দিলীপ কুমারের জীবনে একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছেন সায়রা বানু। দিলীপকে এক মহীরুহের মতো শীতলতা, আদর- যত্নে আগলে রেখেছেন তিনি। দিলীপ কুমারের সাম্প্রতিক এক টুইটে ৯৭ বছর বয়সী দিলীপ কুমারকে দেখা যায়, শার্ট-প্যান্ট পরে এক ছবি পোস্ট করতে। ছবিতে ক্যাপশনে লেখা- স্ত্রী সায়রা বানু এই শার্ট-প্যান্ট তাকে পরতে বলেছেন। ফলে এই বয়সে এসেও এই দুজনের প্রেমের গভীরতা আজও টের পাওয়া যায়। দিলীপকে পছন্দ ছিল সায়রার। শোনা যায় ১৬ বছর বয়সে প্রথমবার মুঘল-ই-আজম দেখেছিলেন সায়রা বানু। তৎকালীন অভিনেত্রী নাসিম বানুর মেয়ে সায়রা তখন থেকেই প্রেমে পড়ে যান হিরো দিলীপ কুমারের। খুব কম বয়সেই হিন্দি ছবিতে অভিষেক ঘটে সায়রার। প্রথম ছবি জংলিতে শাম্মী কাপুরের সঙ্গে অভিনয়ের পর থেকেই বহু হিট ছবিতে কাজ করতে থাকেন সায়রা বানু। সায়রার মা নাসিম সব সময়ই চাইতেন দিলীপ কুমারের সঙ্গে সায়রার সম্পর্ক হোক। কারণ তখন তারা দুজনে চুটিয়ে একসঙ্গে হিট ছবি দিয়ে চলেছেন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে। আর বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে দিলীপ-সায়রা প্রেমে পড়লেন একে অপরের। সায়রা বানুর সঙ্গে সম্পর্কের আগে দিলীপ কুমারের সঙ্গে একের পর এক অভিনেত্রীর সম্পর্কের কথা সামনে আসে। তার মধ্যে একজন মধুবালা। মুঘল-ই-আজম করার সময় থেকেই এই প্রেম ছিল বলে জানা যায়। যদিও পরে তাতে আর সায় দেননি মধুবালা। মধুবালার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর বৈজন্তীমালার সঙ্গে দিলীপ কুমারের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে জানা যায়। সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে শেষমেশ দিলীপ-সায়রার চার হাত এক হয়। ১৯৬৬ সালের ১১ অক্টোবর বিয়ে করেন দিলীপ কুমার ও সায়রা বানু। বিয়ের সময় দিলীপ ছিলেন ৪৪ বছর বয়সী, সেখানে সুন্দরী সায়রার বয়স ছিল ২২। আশির দশকে সায়রাকে ছেড়ে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হন দিলীপ কুমার। হায়দরাবাদের আসমা শাহিবার নামে এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। তারপর তাকে বিয়েও করেন বলে জনসম্মুখে ঘোষণা করেন এই অভিনেতা। পাশাপাশি তিনি জানান, সায়রাকে ডিভোর্স দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার। এ তথ্য সর্বজনবিদিত যে, দিলীপ কুমারকে কী পরিমাণ ভালোবাসেন সায়রা বানু। দুজনের প্রথম থেকে শেষ বয়সের একসঙ্গের ছবি দেখলেই তা বোঝা যায়। তবে কেন সায়রাকে ভুলে অন্য মহিলার প্রেমে পড়েন দিলীপ? এ প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, ১৬ বছর সায়রাকে বিয়ে করে নিঃসন্তান ছিলেন দিলীপ। তাই সন্তানের আকাক্সক্ষায় তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। যদিও আসমার সঙ্গে কিছুদিন পরই বিচ্ছেদ হয় দিলীপের। বিয়ের পর দিলীপ কুমারের পরকীয়ায় জড়ানোর ঘটনাকে সমালোচকরা নানা বিশ্লেষণের পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেও অভিহিত করে হালকাভাবে দেখার প্রয়াস পেয়েছেন। এতে সবশেষে বলতে হয়, যে কোনো দম্পতির কাছেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বড় উদাহরণ হলেন দিলীপ কুমার-সায়রা বানু। ৫৪ বছরের দীর্ঘ মধুর দাম্পত্য জীবনের সঙ্গে বড় পর্দায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ‘দুনিয়া’ (১৯৮৪), ‘বৈরাগ’ (১৯৭৬), ‘সাগিনা’ (১৯৭৪), ‘ছোটি বহু’ (১৯৭১), ‘গোপি’ (১৯৭০) ছবিতে। হিন্দি চলচ্চিত্রশিল্পের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারদের মধ্যে অন্যতম দিলীপ কুমার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় (১৯৪৪-১৯৯৮) দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জয়ের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তারই দখলে। সায়রা বানুর চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৬১ সালে ‘জংলি’ ছবির মাধ্যমে। তার অভিনীত অন্যান্য ছবির তালিকায় উল্লেখযোগ্য ‘পাড়োসান’ (১৯৬৮), ‘পূর্ব অউর পশ্চিম’ (১৯৭০), ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০৩’ (১৯৭২) প্রভৃতি।

দিলীপ-সায়রার নাটকীয় জীবন

দিলীপ কুমার। ১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। ১৯৯৪ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ও ২০১৫ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় এই কিংবদন্তিকে। পাকিস্তানের পেশোয়ারের কিস্সা খাওয়ানি বাজারের ইতিহাসে ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল এক অগ্নিকা-ে বাজারের অধিকাংশ এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর আগে বা পরে এরকম অগ্নিকা- কখনো ঘটেনি। ডিসেম্বর মাসের এই সময় খুব ঠা-া পড়ে পেশোয়ারে। একদিকে আগুন, অন্যদিকে তুষারপাতও হচ্ছিল। সেই বিরূপ পরিবেশে এক পাঠান মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন হিন্দি সিনেমার সর্বকালের সেরা সুপারস্টার দিলীপ কুমার। তার প্রকৃত নাম ইউসুফ খান। বোম্বে টকিজ তখন হিন্দি চলচ্চিত্র প্রযোজনার একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠান। এর সবকিছু দেখাশোনা করতেন মিস দেবিকা রানী। দিলীপ কুমার এক পরিচিতজনের সঙ্গে বোম্বে টকিজের অফিসে যান। দেবিকা প্রথম দেখায়ই দিলীপকে পছন্দ করে ফেলেন। মাসিক ১,২৫০ রুপি বেতনে তিনি অভিনেতা নির্বাচিত হন বোম্বে টকিজের। সালটা ছিল ১৯৪২, দিলীপ কুমার বোম্বে টকিজের অফিসে গেলেন। দেবিকা রানী তাকে বিখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বলিউডের শো-ম্যানখ্যাত রাজ কাপুরও উপস্থিত। খালসা কলেজে পড়ার সময় থেকে দিলীপ আর রাজের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। রাজ কাপুর তো দিলীপ কুমারকে দেখেই টিপ্পনী কাটলেন, ‘আরে, তুমি এখানে। তোমার বাবা কি জানে, তুমি অভিনয়ে নামছ?’ এরপর নিজ মেধা আর গুণে বলিউডের মুঘল হয়ে গেলেন দিলীপ কুমার। অন্যদিকে সায়রা বানুর জন্ম ২৩ আগস্ট ১৯৪৪ সালে। তিনি নাসিম বানু এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক মিয়া এহসান উল হকের ঘরে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। সায়রা মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৬০ সালে বলিউডের ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ১৯৬১ থেকে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেছেন। দিলীপ-সায়রা জুটি পর্দা আর বাস্তব জীবনে কিংবদন্তি হয়ে আছেন, থাকবেন চিরকাল।

সর্বশেষ খবর