মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খান

গত তিন দশক ধরে বলিউড মাতিয়ে রাখার কাজটি করে যাচ্ছেন বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেতা আমির খান। তাঁর অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছুই নেই। যে কোনো চরিত্রেই তিনি মানানসই। অভিনয় দক্ষতার জন্য তাকে বলা হয় বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। খানদের সেরা এই বলিউড তারকাকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খান

কে এই মোহাম্মদ আমির হোসেন

বলিউড চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী অভিনেতা আমির খান। জন্ম ১৯৬৫ সালের মার্চের ১৪ তারিখ। ভারতের মুম্বাইয়ে বান্দ্রা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম মোহাম্মদ আমির হোসেন খান। কিন্তু সবার কাছে আমির খান হিসেবেই সুপরিচিত। মায়ের নাম জীনাত হোসেন। পিতা তাহির হোসেন ছিলেন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তার চাচা নাসির হোসেন ছিলেন একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। আমিরের তিন ভাই-ফয়সাল খান, ফরহাত খান এবং নিখাত খান। অভিনেতা ইমরান খান হলেন আমির খানের ভাগ্নে।

 

বিবাহিত জীবন ও সন্তান

আমির রীনা দত্ত নামের এক তরুণীকে ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে করেন। এই রীনা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ চলচ্চিত্রের একটি গানে কিছুক্ষণের জন্য অভিনয় করেছিলেন। তাদের জুনায়েদ খান নামে একটি পুত্র এবং ইরা খান নামে একটি মেয়ে হয়। রীনা আমিরের চলচ্চিত্র ‘লগান’ এর প্রযোজক হিসেবে কাজও করেছিলেন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে আমির রীনাকে তালাক দেন এবং জুনায়েদ এবং ইরার দায়িত্ব রীনা নেন। ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর আমির কিরণ রাওকে বিয়ে করেন, যিনি আমিরের ‘লগান’ চলচ্চিত্রের পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকরের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন।

 

অভিনয় জীবনে পদার্পণ

মাত্র আট বছর বয়সে চাচা নাসির হোসেনের ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ (১৯৭৩) ছবিতে একজন শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন আমির। ১১ বছর পর প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেতা হিসেবে কেতন মেহতার হোলি (১৯৮৪) ছবিতে কাজ করেন। প্রথম সফল ছবি চাচাতো ভাই মনসুর খানের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’। এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার আমির চকলেট হিরো লুকের জন্য ‘টিন আইডল’ হিসেবেও পরিচিত।

 

খানের নায়িকারা

আমির খান বরাবরই ছিলেন একাই একশ। নায়িকা নির্ভর নায়ক নন তিনি। বেশিরভাগ ছবি তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন, নায়িকার দরকার হয়নি। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিছু ছবিতে তিনি নায়িকাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ হিট ছবি দিয়ে। প্রযোজক ছিলেন আমিরের বাবা তাহির হোসেন। ছবিতে আমির খানের নায়িকা ছিলেন জুহি চাওলা। পরেও এই জুটি ‘লাভ লাভ লাভ’, ‘হাম হ্যায় রাহি প্যার কে’ এবং ‘ইশ্ক’-এর মতো বহু ছবি উপহার দেন দর্শককে। রাম গোপাল ভার্মার সুপার হিট ছবি ‘রঙ্গিলা’। এতে আমিরের নায়িকা ছিলেন ঊর্মিলা মাতন্ডকর। রানী মুখার্জির বিপরীতে করেন ‘গুলাম’। ‘সারফারাস’র নায়িকা ছিলেন সোনালী বেন্দ্রে’। ‘দিল হে কে মানতা নেহি’ ছবিতে তার সঙ্গে অভিনয় করেন পূজা ভাট। টুইঙ্কেল খান্নার সঙ্গে দেখা যায় ‘মেলা ছবিতে। ‘লাগান’ ছবিতে গ্রেসি সিং ছিলেন আমিরের নায়িকা। সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী র‌্যাচেল শেলি। কমেডিনির্ভর ছবি ‘আন্দাজ আপনা আপনা’য় তার বিপরীতে ছিলেন রাভিনা ট্যান্ডন। ছবিতে কারিশমা কাপুরও ছিলেন। আমির-মাধুরী অভিনীত ‘দিল’ ছবিতে ছিল সুপারহিট। তার সঙ্গে এরপর করেন ‘দিওয়ানা মুজছে নেহি’। কারিশমা কাপুরের সঙ্গে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবিটিও ছিল অন্যতম হিট ছবি। মনিষা কৈরালার সঙ্গে জুটি বেঁধে করেছিলেন ‘মান’ ছবিটি। ‘যো জিতা ওহি সিকান্দর’ ছবিতে আয়েশা জুলেখা ছিলেন আমিরের নায়িকা। ‘ফানা’ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন কাজল। প্রীতি জিনতা ‘দিল চাতা হে’ ছবিতে আমিরের বিপরীত অভিনয় করেন। ‘রং দে বাসন্তি’ ছবিতে আমিরের নায়িকা ছিলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী এলিস প্যাটার্ন। ‘গাজিনি’ ছবিতে অভিষেক হয়েছিল অসিনের। ‘পিকে’ ছবিতে আমিরের বিপরীতে ছিলেন বলিউড ডিভা আনুশকা শর্মা।

 

যে দশ ছবি তাকে ‘আমির’ করেছে

৫৬ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে বলিউডের সুপারস্টারের অভিনয় করা সিনেমার সংখ্যা এখন প্রায় ৫৯টি। এক একটি সিনেমায় বিচিত্র সব চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার বদলে দর্শক ও ভক্তদের সামনে এনেছেন তিনি। বলিউডের ছবিতে হিট মানে আমির, আমির মানেই হিট। এমনকি বলিউডের যে শত কোটির ক্লাব, বলা চলে সেটি তিনিই গড়েছেন। মেধা ও মনন দিয়ে গত ৩৩ বছর তিনি রীতিমতো বলিউড শাসন করেছেন। তবে তার অভিনয় করা দশটি ছবি তাঁকে আমির করেছে। সেগুলো হলো- ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ (১৯৮৮), ‘রঙ্গিলা’ (১৯৯৫), ‘লাগান’ (২০০১), ‘দিল চাহতা হ্যায়’ (২০০১), ‘রং দে বাসন্তি’ (২০০৬), ‘তারে জমিন পর’ (২০০৭), ‘গাজিনি’ (২০০৮), ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯), ‘পিকে’ (২০১৪) এবং ‘দঙ্গল’ (২০১৬)। ‘দঙ্গল’ ভারত ও ভারতের বাইরে আয় করেছিল ৫৩২ কোটি রুপিরও বেশি। আমির খান একাই এ ছবি থেকে আয় করেছেন প্রায় ১৭৫ কোটি রুপি। পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন ৩৫ কোটি রুপি।

 

যে ছবিগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন

চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় ‘সাজন’ এবং ‘ডর’ আমির করেননি। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ করার জন্য আমির খানকে অফার করা হলে তিনি চিত্রনাট্যে কিছু পরিবর্তনে মতবিরোধ হলে সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিটিও ব্যস্ততার কারণে প্রত্যাখ্যান করে। ‘হাম আপনে হ্যায় কৌন’ ছবিও আমির ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

 

প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ

তিনি নিজস্ব উদ্যোগে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা আমির খান প্রোডাকশন্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ ‘তারে জমিন পার’র মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

 

তাঁর ‘আমির’ হওয়ার মূলমন্ত্র

আমির সবসময়ই নিজেকে পুনঃআবিষ্কার করে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। আজ তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন অস্কার-মনোনীত চিত্র প্রযোজক, প্রভাবশালী দানবীর। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর আয় অনেকের কাছে সবসময় ঈর্ষণীয়।

 

সামাজিক সমস্যা নিয়ে ‘সত্যমেব জয়তে’

আমির সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে ‘সত্যমেব জয়তে’ নামে একটি টক-শো পরিবেশনা করেছিলেন। যেটি মানুষকে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করে সামাজিক বিষয়গুলো এবং তার প্রতিকার নিয়ে।

 

একজন মানবিক আমির

প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতেই ভালোবাসেন আমির। তবে কখনো সেটা ফলাও করে প্রকাশ করেননি। করোনা সংকটে একাধিক সংগঠন, পিএম কেয়ারস ফান্ড, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তহবিলসহ বলিউডের দিনমজুরদেরও পাশে ছিলেন আমির খান।

 

পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ পদকে সম্মানিত

ভারত সরকার তাকে ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১০ সালে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করেন। ২০১৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় তিনি বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যেও ছিলেন।

সর্বশেষ খবর