বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

তবু মুম্বাই কাঁপালেন গোবিন্দ

তবু মুম্বাই কাঁপালেন গোবিন্দ

গোবিন্দ আহুজা। ইন্ডাস্ট্রিতে তার নামটাই যথেষ্ট। তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু অভিনয়ের জন্য নয়; অভিনয়ের পাশাপাশি তার কৌতুকরস এবং নাচের স্কিলের জন্যও তিনি ভক্তদের খুব প্রিয় ছিলেন। শুটিং সেটে তার আচরণ এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল যে, সহ-অভিনেত্রীরা সহজেই তার প্রেমে পড়ে যেতেন। এই নাম্বার ওয়ান কমেডিয়ান অভিনেতাকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

চি চি নামের সেই ছেলেটি

ছয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সন্তান ছিলেন গোবিন্দ, যার ডাকনাম ছিল চি চি। পাঞ্জাবি ভাষায় বলা হয় সর্ব কনিষ্ঠ আঙ্গুল। পরিবারের সবাই পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলতেন। বাবা অরুণ আহুজার প্রযোজিত একটি মাত্র সিনেমা অসফল ছিল। এই ক্ষতি বহন করতে না পেরে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। গোবিন্দর বাবা কর্মে অক্ষম হওয়ার পর, তার মা তাদের লালন পালনের দায়িত্ব নেন। ফলে মুম্বাইয়ে কঠিন সময় পার করে গোবিন্দ পরিবার।

ডিস্কো ডান্সার দেখে নাচ শেখায় উৎসাহী

বাণিজ্যে স্নাতক সম্পন্ন করার পর গোবিন্দের বাবা তাকে চলচ্চিত্রে সহযোগী হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন। এই সময়ে গোবিন্দ ডিস্কো ডান্সার সিনেমাটি দেখে নাচের প্রতি উৎসাহী হন। এরপর তিনি বহু ঘণ্টাব্যাপী নাচের অনুশীলন করেন এবং ভিএইচএস ক্যাসেটে তার নাচের একটি নমুনা রেকর্ড করেন। ফলশ্রুতিতে তিনি হায়দ্রাবাদ আল্ওয়ুইন এর একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ পান।

 

চাচার ছবিতে অভিনয়ে অভিষেক

চাচা আনন্দের ‘তান-বদন’ ছবিতে প্রধান অভিনেতার চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার গোবিন্দের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি তার পরবর্তী সিনেমা ‘লাভ ৮৬’র কাজ শুরু করেন। একই বছরের মধ্যে জুলাইয়ে আরও ৪০টি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। গোবিন্দর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা হলো ‘ইলজাম’। যেটি ১৯৮৬ সালে বক্স অফিস সফল সিনেমা হয় এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।  সিনেমার ‘স্ট্রিট ডান্সার’ গানে পরিবেশিত ভগ্ননৃত্য তাকে একজন নৃত্য তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। রাতারাতি তারকা বনে যান।

 

ছয়বার নাম পরিবর্তন

অভিনয় জগতে আসার আগে ও পরে অনেক তারকাই তাদের নাম পরিবর্তন করে থাকেন। গোবিন্দও একবার বা দুইবার নয়, ছয়বার নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন। গোবিন্দ একটি শোতে বলেন, ‘গোবিন্দ নামটির আগে ছয়বার নাম পরিবর্তন করেছি। গোবিন্দ আহুজা, গোবিন্দ রাজ, রাজ গোবিন্দ ও অরুণ গোবিন্দ- এমন কিছু নাম রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোবিন্দ নামটিই আমার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে।’

 

একাধিক নায়িকার সঙ্গে প্রেম

১৯৮৫ সালে ‘তন বদন’ এর মাধ্যমে ফিল্মে ডেবিউ করেন গোবিন্দ। তবে ফিল্মে আসার পরই বিয়ে করেন। ১৯৮৭ সালের ১১ মার্চ সুনীতা আহুজাকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সুনীতা একাই গোবিন্দর জীবনে আসেননি। বলি ইন্ডাস্ট্রির আরও বেশ কিছু সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়েছিল। যেমন ১৯৮৬ সালে ‘ইলজাম’র সহ-অভিনেত্রী নীলমের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে সে সময় খুব চর্চা হয়েছিল। নীলমের পাশাপাশি জুহি চাওলা এবং দিব্যা ভারতীকেও তার ভালো লাগত। শুধু তাই নয়, যদি কখনো তিনি চান এবং তার কু-লীতে লেখা থাকে, দ্বিতীয় বিয়ের কথা, তাহলে তিনি অবশ্যই করবেন। এর জন্য সুনীতাকে সব সময় মনের দিক থেকে তৈরি থাকতে হবে বলেও জানান গোবিন্দ। তবে সবচেয়ে বেশি যে নায়িকার সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং যার জন্য গোবিন্দর বিবাহিত জীবনও ভাঙনের মুখে চলে এসেছিল, তিনি নব্বইয়ের দশকের ‘হাদ কর দি আপনে’সহ অভিনেত্রী রানী মুখার্জি। রানী মুখার্জি আর গোবিন্দর জুটি ছিল সুপার হিট। শোনা যায়, তখন রানীর প্রেমে এতটাই পাগল ছিলেন গোবিন্দ যে, গাডড়ি, ফ্ল্যাট এবং হীরের গয়নার মতো অনেক দামি উপহারও তিনি রানীকে দিয়েছিলেন। তবে, গোবিন্দর জীবনে যে স্ত্রী এবং সন্তানদের গুরুত্ব অনেকটা বেশি, রানীও ক্রমে তা বুঝে যান। তাদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে ফিল্মমেকার আদিত্য চোপড়াকে বিয়ে করেন রানী।

 

অ্যাকশন হিরো থেকে কমেডি হিরো

তার সবচেয়ে বেশি সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৮০’র দশকে। যেগুলো ছিল অ্যাকশন, রোমান্স অথবা পারিবারিক আবহে নির্মিত। নব্বইর দশকে তিনি প্রয়াত অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর বিপরীতে ‘শোলে অর শবনম’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে একজন কমিক অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। এরপর একই দশকে তিনি বহু বাণিজ্যিকভাবে সফল কমেডি সিনেমায় প্রধান অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করেন। এসব সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাভ ৮৬, খুদগার্জ, হত্যা, দরিয়া দিল, জিতে হ্যায় শান সে, হাম, মারতে দাম তাক, মেরি জাং, তাকাত্বা, গের কানুনী, আখেন, রাজা বাবু, কুলি নাম্বার ওয়ান, হিরো নাম্বার ওয়ান, হাসিনা মান জায়েগি, জেন্টেলম্যান, জান সে পেয়ারি, সাজান চালে শ্বাশুরাল, আঁখিয়ো ছে গুলি মারে, হত্যাকারী, বাড়ে মিয়া ছোটে মিয়া, আনাড়ি নাম্বার ওয়ান, ওয়াহ্! তেরা কেয়া কেহনা, স্যান্ডউইচ, হাদ কার দি আপনে, ভাগাম ভাগ, পার্টনার, লাইফ পার্টনার, রাবণ, ফ্রাইডেসহ অনেক জনপ্রিয় ছবি। মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে বহু সিনেমায় একসঙ্গে দেখা গেছে গোবিন্দকে। তাদের অভিনয়, নাচ মন মাতিয়েছে দর্শকদের।

 

একসঙ্গে ছয়টি চরিত্রে অভিনয়

 গোবিন্দ ছিলেন একজন সফল চরিত্রাভিনেতা। তিনি ‘হাদ কার দি আপনে’ সিনেমায় সফলভাবে ছয়টি চরিত্রে অভিনয় করেন। চরিত্রগুলো হলোÑরাজু, রাজুর মা, রাজুর বাবা, রাজুর বোন, রাজুর দাদি এবং রাজুর দাদা। তিনি জেন্টেলম্যান, জান সে পেয়ারি, আখেন, হত্যাকারী, বাড়ে মিয়া ছোটে মিয়া, আনাড়ি নাম্বার ওয়ান, ‘আন্টি নাম্বার ওয়ান’ওয়াহ্! তেরা কেয়া কেহনা এবং স্যান্ডউইচের মতো সিনেমায় সফলভাবে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

নাম্বার ওয়ান গোবিন্দ

 গোবিন্দর ডাকনাম নাম্বার ওয়ান। কারণ, তিনি সিনেমার শিরোনামের শেষাংশ ‘নাম্বার ওয়ান’ বিশিষ্ট ৬টি সিরিজে অভিনয় করেছেন। সেগুলো হচ্ছেÑ কুলি নাম্বার ওয়ান, হিরো নাম্বার ওয়ান, আন্টি নাম্বার ওয়ান, আনাড়ি নাম্বার ওয়ান, বেটি নাম্বার ওয়ান এবং জোড়ি নাম্বার ওয়ান। অক্ষয় কুমারের পর গোবিন্দই একমাত্র অভিনেতা যিনি একটি বিশেষ শিরোনাম সম্পন্ন সিনেমা সিরিজে অভিনয় করেছেন। অক্ষয় কুমার খিলাড়ি সিরিজের ৮টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

 

‘অ্যাভাটার’ নামটি গোবিন্দের

 জেমস ক্যামেরনের বিশ্বখ্যাত ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা গোবিন্দ। তবে সিনেমার নাম ‘অ্যাভাটার’ রাখতে তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

 

সংগীতশিল্পী

২০১৩ সালের নভেম্বরে, গোবিন্দ টিভি অভিনেত্রী পূজা বোসের সঙ্গে তার গানের অ্যালবাম ‘গোরি তেরে ন্যায়না’ বের করেছেন। এই অ্যালবামের সব গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। এটা গোবিন্দর দ্বিতীয় অ্যালবাম।

 

২৫ বছর পর ফের বিয়ে

স্ত্রী সুনীতার সঙ্গে গোবিন্দ বিয়ের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে লন্ডনে হিন্দুরীতি অনুযায়ী দ্বিতীয়বার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ২৫ বছর আগে সুনীতা আহুজাকে বিয়ে করেছিলেন একসময়ের পর্দাকাঁপানো বলিউডের অভিনেতা গোবিন্দ।

সর্বশেষ খবর