শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বলিউড ড্রিমগার্ল হেমা মালিনী

বলিউড ড্রিমগার্ল হেমা মালিনী

বলিউড ড্রিমগার্ল হেমা মালিনী। ‘শোলে’ ছবিতে ধর্মেন্দ্রর সেই বাসন্তী। ৭২ বসন্ত ছুঁইছুঁই। অথচ আজও দেখলে মনে হয় কত সজীব, কত তরুণ! এই ড্রিমগার্লকে একান্তই নিজের করে পেতে চেয়েছেন তাবৎ হেমা প্রেমিক পুরুষ। কিন্তু সে দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলে জয়টা নিজের ঝুড়িতে নিয়েছিলেন বলিউড তারকা ধর্মেন্দ্র। বড়পর্দা থেকে রাজনীতির আঙিনায়ও তিনি সমুজ্জ্বল। এই স্বপ্নের দেবীকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

কে এই ড্রিমগার্ল

ড্রিমগার্ল শব্দটি উচ্চারিত হলেই একটি নাম চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কাজল কালো দুটি চোখ, মিষ্টি হাসি আর অপরূপ চেহারার এক প্রতিমারূপী নারী। তিনি হেমা মালিনী। বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী। ষাট থেকে নব্বই টানা তিন দশক দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। জন্ম ১৬ অক্টোবর, ১৯৪৮ সালে। জাতিগতভাবে তিনি একজন তামিল। তার মায়ের নাম জয়ালক্ষ্মী চক্রবর্তী এবং পিতা ভিএসআর চক্রবর্তী। 

 

মহিলা সভায় যোগদান

লেখাপড়ায় খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না হেমা। দশম শ্রেণিতে উঠেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন হেমা। হেমা ইতিহাস নিয়ে পড়ায় আগ্রহী ছিলেন। এই আগ্রহ থেকেই তিনি চেন্নাই শহরের মহিলা সভায় যোগ দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি নারীবাদ পছন্দ করতেন।

 

ছোট্ট চরিত্র দিয়ে বলিউড যাত্রা

ছোট থেকেই তিনি নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি তামিল ভাষার চলচ্চিত্র ‘ইদু সাথিয়া’তে পার্শ¦ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যেটি ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়েছিল। যদিও ১৯৬১ সালে ‘পান্ডব বনবাসাম’ ছবির একটি ছোট্ট চরিত্রের মাধ্যমে বলিউডে তার যাত্রা শুরু হয়।

 

যখন পুরোদস্তুর নায়িকা

ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘তারকাসুলভ’ চেহারা নেই বলে তামিল পরিচালক সিভি শ্রীধরের সিনেমা থেকে বাদ পড়েছিলেন হেমা। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন জয়ললিতা। তবে রুপালি পর্দায় নায়িকা চরিত্রে অভিষেক বললে ১৯৬৮ সালে ‘স্বপ্ন কা সওদাগর’ চলচ্চিত্রের কথাই বলতে হবে।

 

ড্রিমগার্ল খেতাব

মহানায়ক রাজ কাপুরের সঙ্গে জুটি বেঁধে করা ‘স্বপ্ন কা সৌদাগর’ এর পর তাকে সবাই হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের ‘ড্রিম গার্ল’ বা ‘স্বপ্নের তরুণী’ নামে অভিহিত করে। চলচ্চিত্রটি সেসময় ব্যাপক সাড়া ফেলে।

 

বক্স অফিসের তুরুপের তাস হেমা

নায়কের পাশাপাশি হেমাও ছিলেন বক্স অফিসের তুরুপের তাস। তিলে তিলে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন। বাণিজ্যিকভাবে হেমা মালিনীর সাফল্য আসে আশি ও নব্বই দশকে। এই সময়ে তার অভিনীত ‘ক্রান্তি’, ‘নসীব’, ‘সত্তে পে সত্তা’, ‘এক নাহি পেহেলি’, ‘রামকালি’, ‘সীতাপুর কি গীতা’, ‘জামাই রাজা’, ‘আলিবাবা অউর ৪০ চোর’, ‘সম্রাট’, ‘আন্ধা কানুন’, ‘দরদ’, ‘কুদরত’, ‘হাম দোনো’, ‘রাজপুত’, ‘বাবু’, ‘দুর্গা’সহ বহু সিনেমা সুপারহিট হয়। অল্প সময়ে হয়ে ওঠেন ‘ড্রিমগার্ল’। তিনি জুটি বেঁধে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্নার মতো তারকাদের সঙ্গে। যার ফলে মুম্বাই সিনে জগতে তার শক্ত অবস্থান তৈরি হয়ে যায়। সর্বমোট ১১ বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। ২০০০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মাননা লাভ করেন।

 

ধর্মেন্দ্র-হেমার প্রেমের শুরু

ধমেন্দ্র-হেমা মালিনীর প্রথমবার পর্দা ভাগাভাগি ১৯৭০ সালে, ‘তুম হাসিন ম্যায় জাওয়ান’ সিনেমায়। দুজনে একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেই সূত্রে দুজনের প্রেম।

 

ধর্ম, স্ত্রী, সন্তান ত্যাগ করে হেমাকে বিয়ে

বলিউডের ড্রিমগার্ল হেমা মালিনীর এখনো প্রচুর ভক্ত। এই তালিকাটা অনেক লম্বা। কিন্তু সে দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলে জয়টা নিজের ঝুড়িতে নিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। তবে এ জন্য তাকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে। স্ত্রী, সন্তান, ধর্ম-অনেক কিছু ত্যাগ করে জয় করেন হেমাকে। প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কাউর বাধা দিয়েছিলেন স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে। কিন্তু, কোনো বাধাই রুখতে পারেনি ধর্মেন্দ্র-হেমার প্রেমকে। প্রথম স্ত্রী বিচ্ছেদে রাজি না হওয়ায় ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করেন ধর্মেন্দ্র। যা নিয়ে তুমুল জল্পনা শুরু হয়। হেমা মালিনীর সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর বিয়েতে মত ছিল না হেমার বাবারও। তা সত্ত্বেও ১৯৭৯ সালে বীরু-বাসন্তীর চার হাত এক হয়। ধর্মেন্দ্র যখন হেমা মালিনীকে বিয়ে করেন সেসময় তার দুই ছেলে ছিল-সানি দেওল এবং ববি দেওল। হেমার মেয়ে এশা।

 

বিয়ের পিঁড়িতে বসার পরও জিতেন্দ্রকে প্রত্যাখ্যান

ধর্মেন্দ্র ছাড়া অন্য কাউকে আপন করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন বলিউডের ‘ড্রিমগার্ল’। এমনকি, ‘শোলে’র শুটিংয়ের সময় হেমা মালিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ফিরতে হয় সঞ্জীব কুমারকে। জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসার পরও তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন হেমা মালিনী। হেমা-জিতেন্দ্রর বিয়ের দিন মদ্যপ অবস্থায় সেখানে হাজির হন ধর্মেন্দ্র। বিয়ের আসরেই হেমার সঙ্গে কথা বলবেন বলে সময় চেয়ে নেন। ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে কথা বলার পরই জিতেন্দ্রর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন হেমা।

 

হেমার প্রেমিকেরা

নিজের আত্মজীবনীতে হেমা লিখেছেন, বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা সঞ্জীব কুমার তাকে নাকি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর সঞ্জীবকে মদের নেশায় পেয়ে বসে। তাদের বিয়ের কথা কিছু এগোনোর পর হেমা সেই বিয়ে ভেঙে দেন। কারণ, তিনি তখন মন দিয়ে রেখেছিলেন তার থেকে বয়সে অনেক বড় ধর্মেন্দ্রকে। কিন্তু ধর্মেন্দ্র তখন বিবাহিত, চার সন্তানের জনক।

 

বলিউড থেকে রাজনীতির মাঠে

হেমা মালিনী ১৯৯৯ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ওই বছর বিজেপি হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। ২০০৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন হেমা মালিনী। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ অভিনেত্রী রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালে তাকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়। চার বছর পর মথুরার জয়ন্ত চৌধুরীকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে লোকসভার সদস্য হন হেমা।

 

ড্রিমগার্লের ভক্ত ছিলেন বাজপেয়ি

শুধু রসকষহীন রাজনীতিই নয়, বলিউডি সিনেমার বিশেষ গুণগ্রাহী ছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি। গোটা দেশের মতো ড্রিমগার্ল হেমা মালিনীর ভক্তের তালিকায় ছিলেন তিনি। হেমার অভিনয় অটলজির এত পছন্দ ছিল যে, তার অভিনীত ‘সীতা অওর গীতা’ তিনি ২৫ বারেরও বেশি দেখেছিলেন।

 

ফ্যাশন আইকন হেমা

শুধু নাচ ও অভিনয় দিয়েই নয়, হেমা দর্শকদের মুগ্ধ করতেন তার অসাধারণ ফ্যাশন সেন্স দিয়েও। সত্তর দশকে নায়িকাদের বেলবটম প্যান্ট পরার চল তিনিই প্রথম শুরু করেন। সে সময় তরুণীদের মধ্যে এই ফ্যাশন বেশ জনপ্রিয় হয়। বেলবটম প্যান্ট, ফুলহাতা শার্ট আর মাথায় লম্বা হ্যাট পরা হেমাকে যত মিষ্টি লাগত, ঠিক ততটাই তাকে আকর্ষণীয় দেখায় দক্ষিণ ভারতীয় কাতান শাড়িতে। এ অভিনেত্রীর শাড়ির সংগ্রহও বিশাল। 

 

নাচই হেমার জীবনের মূলমন্ত্র

শিল্পকলার প্রতি দারুণ আকর্ষণ রয়েছে হেমার। নাট্যবিহার কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অভিনয়ে সফল হলেও নাচই হেমার জীবনের মূলমন্ত্র। নাচই তার প্রথম ভালোবাসা। নাচে পটু হেমা ভারতীয় সব ধরনের নাচে দক্ষ। পশ্চিমা ঘরানার কিছু নাচও জানা আছে।

 

বাহাত্তরটি বসন্তের চিরতরুণী

অনেকে বলেন, বয়স একটা সংখ্যামাত্র। বলিউডের অভিনেত্রী হেমা মালিনীকে দেখলে এ কথা বিশ্বাস হয়।

 

হেমার সৌন্দর্যের রহস্য 

তার সৌন্দর্যের একমাত্র রহস্য পানি। প্রচুর পানি পান করে ত্বকের পরিচর্চা করেন হেমা মালিনী।

 

সর্বক্ষেত্রেই সফল

শুধু পর্দাতেই নয়; নাচে, নির্মাণে, ফ্যাশন সেন্স কিংবা রাজনীতিতেও হেমা নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

সর্বশেষ খবর