সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বলিউডে অভিনয় ও নাচের কিংবদন্তি বৈজয়ন্তীমালা

বলিউডে অভিনয় ও নাচের কিংবদন্তি বৈজয়ন্তীমালা

বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী বৈজয়ন্তীমালার জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৩ আগস্ট। তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ত্রিপলিক্যান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী এই চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী, কার্ণাটিক গায়িকা, নৃত্য নির্দেশিকা ও সংসদ সদস্য। তার চলচ্চিত্র জীবনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্রে অভিষেক

১৯৪৯ সালে তামিল ‘বাঝকাই’ চলচ্চিত্রের  মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে তার। তার ভরতনাট্যম দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন পরিচালক এম ভি রমন। খুঁজছিলেন নতুন মুখ। প্রস্তাব নিয়ে যান বৈজয়ন্তীমালার দিদিমার কাছে। তিনি তো শুনেই নাকচ করে দেন। বহু কষ্টে রমন আদায় করেছিলেন অনুমতি। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত নবাগতার। ছবিও চূড়ান্ত সফল। পরে তৈরি হয় তেলেগু ভার্সনও। ক্রমে দক্ষিণী ধারার ছবিতে তিনি জনপ্রিয় করেন পশ্চিমী নাচ। প্রথম হিন্দি ছবি ‘বাহার’, মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই একাধিক ভাষার ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি। তার অনবদ্য ভঙ্গিমার জন্য চিত্রনাট্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতো নৃত্যকে। ১৯৫০ সালে তেলেগু চলচ্চিত্র ‘জিভিথাম’-এ  অভিনয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভসহ বলিউডের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় দুই দশক ধরে বলিউড তারকাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ছিলেন। প্রথম দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় তারকায় পরিণত হন।

 

হিন্দি ছবিতে সফলতা

প্রথম হিন্দি ছবি বাহার, মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালে। ১৯৫৪ সালে হিন্দি ‘নাগিন চলচ্চিত্রে সফলতা লাভের পর বৈজয়ন্তীমালা নিজেকে বলিউডের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলেন। প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা বিমল রায়ের ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করে চতুর্থ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের সেরা সহ-অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হন। কিন্তু তিনি ওই পুরস্কার নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তার মতে তিনি কোনো সহকারীর ভূমিকায় অভিনয় করেননি। এতে প্রথম শিল্পী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। এরপর ‘নিউদিল্লি, ‘নয়া দৌড়’ ও ‘আশা’, ‘মধুমতী’, ‘গঙ্গা যমুনা’ ‘সঙ্গম’, ‘সাধনা’ সহ আরও অনেক ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৮ সালে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছেন। ‘সাধনা’ ও ‘মধুমতী’ এ দুটিতে তার দক্ষ অভিনয় ব্যাপক আলোচিত হয়। এ দুটি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার বিভাগের জন্য মনোনীত হন এবং সাধনার জন্য সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৬১ সালে দিলীপ কুমারের গঙ্গা যমুনায় তার ভোজপুরী সংলাপ সমালোচকদের কাছে আজও সেরা হয়ে আছে। এ চলচ্চিত্রে তিনি দ্বিতীয়বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।

 

‘টুইঙ্কেল টোজ’ পদবি লাভ

বৈজয়ন্তীমালা নৃত্যকলায়ও দক্ষতা দেখান এবং বলিউডে ধ্রপদী নৃত্যের অন্তর্ভুক্তিতে ভূমিকা রাখেন। বেশকিছুসংখ্যক চলচ্চিত্রে নৃত্য সহযোগে অভিনয়ের কারণে তিনি ‘টুইঙ্কেল টোজ’ পদবি লাভ করেন।

 

নুমরো ইউনো অভিনেত্রী

১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে তার বর্ণাঢ্যময় চলচ্চিত্র জীবনের কারণে তাকে ‘নুমেরো ইউনো অভিনেত্রী’ বিশেষণে আখ্যায়িত করা হয়।

 

বলিউডে প্রথম বিকিনি

১৯৬৪ সালে সঙ্গম চলচ্চিত্রে তিনি আধুনিক মেয়ে হিসেবে স্বল্পবসন ও সুইমস্যুট মানে বিকিনি পরে করে বলিউডের ছবিতে প্রথম কোনো নায়িকা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। এ ছবিতে রাধা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে ১২তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভ করেন।

 

আরও সম্মাননা

একাধিকবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডেও পাশপাশি বিএফজে এ পুরস্কার, কলাকার অ্যাওয়ার্ডস, স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ডস, ফিকি লিভিং লেজেন্ড এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা বৈজয়ন্তীমালাকে ১৯৫৮ সালের বর্ষসেরা মহিলা চিত্রতারকা ঘোষণা করে। একইভাবে বক্স অফিস ইন্ডিয়া ডটকম বর্ষসেরা মহিলা চিত্রতারকার স্বীকৃতি দেয়। ৪৮তম জাতীয় পুরস্কারের চেয়ারপারসনের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ১৯৮২ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখায় সর্বোচ্চ ভারতীয় সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

 

একাধিক প্রেম...

অভিনয় জীবনে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। বিশেষ করে নিজের সহ অভিনেতাদের সঙ্গে একাধিকবার গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। ষাটের দশকের শুরুতে দিলীপ কুমারের সঙ্গে সখ্য গড়েন। অন্য অভিনেত্রীদের তুলনায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে বেশি অভিনয় করেন তিনি। দিলীপ কুমার প্রযোজিত ও অভিনীত  ১৯৬১ সালে নির্মিত ‘গঙ্গা যমুনা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় এই অভিনেত্রীর প্রত্যেক দৃশ্যে কুমার তার শাড়ির আঁচল ধরে রাখতেন। তখন চলচ্চিত্রবোদ্ধা সঞ্জিত নারওয়েকার নিশ্চিত করেছিলেন যে, কামিনী কৌশল এবং মধুবালার পর বৈজয়ন্তীর সঙ্গে দিলীপ কুমারের তৃতীয় ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। দিলীপ কুমারের পর বলিউডের আরেক হার্টথ্রব অভিনেতা-নির্মাতা রাজ কাপুরের ‘সঙ্গম’ ছবিতে অভিনয়ের সময় এই অভিনেত্রী রাজ কাপুরের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চলচ্চিত্রটি নির্মাণে প্রায় চার বছর সময় লাগে। এ সময় বৈজয়ন্তীকে প্রায় বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর উপক্রম করেছিলেন রাজ কাপুর। এ ঘটনার ফলে কাপুরের পত্নী কৃষ্ণা সন্তানসহ স্বামীগৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর তারা মুম্বাইয়ের নটরাজ হোটেলে সাড়ে চার মাস অবস্থান করেছিলেন।

 

বিয়ে ও অভিনয়ের ইতি...

১৯৬৮ সালে ব্যবসায়ী চমনলাল বালিকে বিয়ে করেন বৈজয়ন্তীমালা। বিয়ের পর অভিনয় জীবনের সমাপ্তি ঘটে তার ও চেন্নাই চলে যান। সুচিন্দ্র বালি নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সহলেখক জ্যোতি সবরওয়ালের সঙ্গে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

 

রাজনীতিবিদ

অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার পর যোগ দেন রাজনীতিতে। দীর্ঘদিন ছিলেন কংগ্রেসে। লড়েছিলেন নির্বাচনেও। ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদও। পরে কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে।

সর্বশেষ খবর