বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

থেমে গেল জীবনের গল্প...

থেমে গেল জীবনের গল্প...

জন্ম : ৪ নভেম্বর ১৯৫৫-মৃত্যু : ৬ জুলাই, ২০২০

জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প...না আর অল্প নেই, একবারেই থেমে গেল প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের জীবনের গল্প। এখন শুধু ধুলো ঝেড়ে তার স্মৃতি খুঁজে বেড়ানোই হবে অশ্রুসিক্ত ভক্তদের কাজ। তবে তার সমৃদ্ধ গানের ভাণ্ডার তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। প্রয়াত এন্ড্রু কিশোরের জীবন গল্পের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ ও পান্থ আফজাল

 

হেরে গেলেও শেষ ইচ্ছে পূরণ

 থেমে গেল জীবনের গল্প। বেঁচে থাকার প্রাণপণ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে। দেশীয় গানের অন্যতম লিজেন্ড প্লেব্যাক সম্রাট খ্যাত এন্ড্রু কিশোর জেনেই গিয়েছিলেন তার জীবনের গল্প ফুরিয়ে আসছে। আর তাই অল্প কদিন আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাকালীন সময়ে তিনি আরেকবার গেয়ে উঠেছিলেন আশির দশকে ‘ভেজা চোখ’ ছবিতে তার গাওয়া সেই বিখ্যাত গান-‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’। এন্ড্রু কিশোর যখন টের পান তার শরীর তার সঙ্গে বিদ্রোহ করে বসেছে তখনই দেশে চিকিৎসার পর দ্রুত জিতে ওঠার জন্য উড়াল দেন বিদেশের মাটিতে। সিঙ্গাপুরের উন্নত চিকিৎসাও তাকে জেতাতে পারেনি। যখন তিনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন জীবনযুদ্ধে তার পরাজয়ের সময় এসে গেছে তখন তিনি দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। বলে ওঠেন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে রইবোনা আর বেশিদিন তোদের মাঝারে’। এন্ড্র্রু কিশোরের শেষ ইচ্ছে ছিল শেষ নিঃশ্বাস যেন তিনি দেশের মাটিতেই ফেলতে পারেন। চিরঘুম যেন হয় জন্মভূমিতে। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেও পূর্ণ হলো তার ইচ্ছে। গত ৯ জুন ফিরে এলেন দেশে। অল্প কদিন ঢাকায় থাকার পর চলে গেলেন জন্মস্থান রাজশাহীতে। সেখানে মৃত্যুর কাছে নিজেকে সঁপে দিলেন ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে। সাঙ্গ হলো প্লেব্যাক সম্রাটের ভবের লীলা। চার দশকের সংগীত অভিযান শেষ হলো তার।

 

যেভাবে বেড়ে ওঠা

এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে; সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। ছোট বেলা থেকেই সংগীতে অনুরক্ত ছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনায় পড়লেও গানই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।

 

চলচ্চিত্রের গানকেই প্রাধান্য

জীবনের বেশির ভাগ সময়ে মূলত চলচ্চিত্রে গান করেই কাটিয়েছেন। চলচ্চিত্রের এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে অডিও বাজারে খুব একটা অ্যালবাম করেননি। চলচ্চিত্রে ১৫ হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ২০১৬ সালে ‘ভালবাসাপুর’ ও ‘সোনার কাঠি’ ছবি দুটোতে সর্বশেষ কণ্ঠ দেন। চলচ্চিত্রের গানের জন্য আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং পাঁচবার বাচসাস সম্মাননা লাভ করেন।

 

টার্নিং পয়েন্ট

এন্ড্র্রুর গানের ক্যারিয়ার শুরুর দিকে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসে গান রেকর্ডিং করে ফিরে যেতেন। পরে সংগীত জগতে থিতু হতে রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় এসে ফকিরাপুলে ভাড়া মেসে ওঠেন তিনি। রাজশাহী সিটি কলেজে পড়ার সময়ই পূজা-পার্বণে গান গেয়ে পরিচিত পেলেও ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বেতারের এক আয়োজনে গাইতে ঢাকায় এসে তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। এন্ড্রু কিশোরের গান শুনে বাংলাদেশ বেতারের প্রযোজক দুলাল তাকে সুরকার আলম খানের কাছে নিয়ে যান। আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের গানে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় তার। আলম খান বলেন, ‘মনে আছে, গানটা তুলতে গিয়ে ও নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিল। ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, তোমাকে দিয়েই গানটা হবে। পরে আলম খানের সুরেই ১৯৭৯ সালে প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি দিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিতি লাভ করেন কিশোর। তখনো তিনি রাজশাহীতে থাকতেন; আলম খান ফোন করলে ঢাকায় এসে ফকিরাপুলে বন্ধুদের মেসে উঠে গানের রেকর্ডিং শেষ করে ফিরে যেতেন। ১৯৮০ সালের বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদের সংগীতানুষ্ঠানে সুরকার শেখ সাদী খানের সুরে ‘ও আমার উদাস মন’ শিরোনামে একটি গান গাওয়ার সুযোগ পান। শেখ সাদী খান বলেন, ‘এন্ড্রু কিশোর তখন বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন না। ওই সময় অডিশন ছাড়া বিটিভিতে গাওয়া যেত না।

কিন্তু আমি বিটিভির প্রযোজকদের বলে তাকে সেই অনুষ্ঠানে গানটি করিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই দর্শকরা কিশোরের চেহারা প্রথম দেখেছিল।’ ততদিনে আলম খানের আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানের সঙ্গে যুক্ত হন। ব্যস্ততা বাড়তে থাকায় মাসে তিন-চার বারের মতো রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসতে হতো তাকে। আলম খান বলেন, ১৯৮২ সালের দিকে ও বলল, ‘ভাই, ঢাকায় একেবারে চলে আসব। বললাম, চলে আস। বললাম, থাকবা কোথায়? বলে, বন্ধুদের মেসে সিট নিয়ে নেব। বললাম, চলে আস। তুমি তোমার যোগ্যতায় ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেবে। সেই ভরসায় রাজশাহী ছেড়ে চলে এলো।’ বন্ধুদের সঙ্গে রুম ভাগাভাগি করে থাকতেন তিনি। আলম খানের হাত ধরে চলচ্চিত্রের গানে এলেও ধীরে ধীরে তার কাজের পরিধি বাড়তে থাকে। সত্য সাহা, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, আলাউদ্দিন আলী, শেখ সাদী খানসহ অন্য সুরকারের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি।

 

আর ডি বর্মণ বললেন-‘তুই বাঘের বাচ্চা’

এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠ আর গায়কিতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মণ। তাঁর সে প্রস্তাব নাকচ করেছেন এই শিল্পী। এরপর এন্ড্রু কিশোর জানান, সে সময় একটা যৌথ প্রযোজনার ছবি হয়েছিল, হিন্দি নাম ‘শত্রু’। বাংলায় ‘বিরোধ’। ওই ছবিতে আর ডি বর্মণের সুরে হিন্দি ও বাংলায় গান গেয়েছিলেন। স্মৃতিচারণা করে এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, ‘যেদিন আমি দেশে ফিরব, সেদিন বিদায় নিতে গেলে পঞ্চমদা আমাকে বললেন, ‘ঢাকাইয়া, তুই হয়তো ভাবছিস, মাঝেমধ্যে ডাকব, গাওয়াব। কিন্তু আমাদের দেশাত্মবোধটা খুব বেশি। কিছু করতে চাইলে এখানে থাকতে হবে। তুই থেকে যা। বিয়েশাদি করিসনি। সে ব্যবস্থাও আমি করে দেব। কিন্তু আমি তখন তাঁকে বললাম, ‘দাদা, আমার দেশেই আমি অনেক ভালো আছি।’ তিনি তখন আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, ‘তুই একটা বাঘের বাচ্চা।’ এরপর আরও কয়েকবার বর্মণ দাদার সঙ্গে গান করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।

 

এন্ড্রু কিশোরের শেষ অনুরোধ

মৃত্যুর আগে নিজের সহধর্মিণীর সহায়তায় নিজের গান নিয়ে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন এন্ড্রুু কিশোর। যেখানে তাঁর গান ভবিষ্যতে যেন বিকৃত করে না গাওয়া হয়, সে অনুরোধ করেন। ২ জুলাইয়ের সেই পোস্টে এন্ড্রুু কিশোর বলেন, আমি আমার প্রিয় ভক্ত-শ্রোতাদের অনুরোধ করছি আমার গান ভালোবেসে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমার গাওয়া গানকে স্বাভাবিক ও সাবলীল রেখে এবং বিকৃত না করে যত্ন করে রাখবেন।

 

কাজের প্রতি নিষ্ঠা ছিল তাঁর

      - রুনা লায়লা

এন্ড্রু কিশোর আমাদের মাঝে নেই, তাঁর না থাকা নিয়ে আমাকে কিছু বলতে হবে, তা কখনো কল্পনাও করিনি। একসঙ্গে কত গান করেছি আমরা। কত গান তাঁর জনপ্রিয় হয়েছে তা বলে প্রকাশ করার ভাষা নেই। এন্ড্রু কম কথা বলত, কাজ করত পুরো মনোযোগ দিয়ে। বিশেষ করে রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সে ছিল খুবই মনোযোগী। তাঁর সঙ্গে রেকর্ডিং করতে গিয়ে দেখেছি সে কতটা ডেডিকেটেড ছিল কাজের প্রতি। এই ডেডিকেশনই (সাধনা) তাঁকে প্লেব্যাক সম্রাট হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে। একটি বিষয় জেনে অনেকেই অবাক হবেন, আমাদের একসঙ্গে স্টেজ শো ছিল খুব কম। সর্বশেষ সুইডেনে এক যুগ আগে একটা শো করেছিলাম আমরা। কষ্ট হচ্ছে খুব, সে আমাদের মাঝে আর নেই। এন্ড্রু ওপারে ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক এই কামনা আমার।

 

সে ছিল ভালো শিল্পী ও মানুষ

 - আলম খান

এত দ্রুত আমাদের ছেড়ে এন্ড্রু চলে যাবে, ভাবতেও পারিনি। বয়সে আমাদের কত ছোট, কত স্মৃতি আমাদের একসঙ্গে। এন্ড্রু কিশোর নেই। আজ আমার শরীর যতটা খারাপ, তার চেয়েও অধিক খারাপ আমার মন। কিছু ভালো লাগছে না। শুধু দীর্ঘশ্বাস বের হচ্ছে। ১৯৭৭ সাল। ‘মেইল ট্রেন’ ছবিতে এন্ড্রু কিশোর প্রথম গান গেয়েছিল। আমার সুর করা গান। এটি নিয়ে অনেকে আমার কাছে অনেক কিছু শুনতে চান। অনেক পুরনো কথা। ঠিক মনেও পড়ে না এখন। তারচেয়ে বড় কথা, এন্ড্রুর সঙ্গে তো আমার স্মৃতি অনেক। অভাব নেই। তাই প্রথম দিককার গানের কথাটা সেভাবে মাথায় আসে না। অনেক গুণ ছিল এন্ড্রুর। গানের প্রতি কী যে নিষ্ঠা, সততা, তা বলে বোঝানোর নয়। সে ছিল ভালো মানুষ। তার আত্মার চির শান্তি কামনা করছি।

 

আমার সত্তার একটি অংশের মৃত্যু হলো

      - সাবিনা ইয়াসমিন

এন্ড্রু কিশোর আর নেই- খবরটি শোনামাত্র মনে হলো, আমার সত্তার একটি অংশের মৃত্যু হলো। যার সঙ্গে গানে গানে এতটা বছর পথ পাড়ি দিয়েছি, সে মানুষটি আমাদের মাঝে নেই, ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। একসময় প্লেব্যাকের জুটি মানেই ছিল এন্ড্রু কিশোর-সাবিনা ইয়াসমিন। এ জুটির বিদায় হয়েছে। এটা যে কত বড় বেদনার, তা কোনোভাবেই বোঝাতে পারব না।

আমরা একসঙ্গে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছি। ব্যক্তি এন্ড্রু কিশোরের অনেক গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে।  সম্ভবত বাংলা ভাষায় এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আমরা আমাদের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পীকে চিরদিনের জন্য হারালাম। শুধু শিল্পী নয়, মানুষ হিসেবে এন্ড্রুু কিশোর সবার অতিপ্রিয়।

 

তাঁর কণ্ঠ সূর্যের মতো শাশ্বত

     - কনকচাঁপা

তিনি যখন মঞ্চে গান গাইতেন, আমি তখন নিচে বসে বাচ্চাদের মতো হা করে শুনতাম। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় তাঁর কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। আমি কখনই বলব না, এন্ড্রু কিশোর ছিলেন। আমি এখনো গর্ব করে বলছি, আমাদের একজন এন্ড্রু কিশোর আছেন। তিনি কোথাও যাননি, তিনি আছেন। এন্ড্রু কিশোরের গান গাওয়ার স্টাইল, গাওয়ার জন্য দাঁড়ানোর স্টাইল তাকিয়ে থাকার মতো। উনার কণ্ঠকে আমি বলি গলিত সোনা। উনি যখন গান গাইতেন, মনে হতো সত্যি সত্যি সোনা গলে গলে পড়ছে। এত অপূর্ব কণ্ঠ, এত শক্তিমান কণ্ঠ। সূর্যের মতো শাশ্বত কণ্ঠ। তাঁর মতো শিল্পীকে আমার পেশাদার জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পেয়েছি-এটা আমার পরম সৌভাগ্য। ভীষণ গর্ব হয় যে তাঁর সঙ্গে অনেক গান আমি গেয়েছি।

 

তাঁর কণ্ঠের জাদু শ্রোতাদের মুগ্ধ করত

   - ইলিয়াস কাঞ্চন

এন্ড্রু কিশোরের এই মৃত্যু অবশ্যই অকাল প্রস্থান। অপূরণীয় ক্ষতি। দেশীয় গানের ভান্ডার বিশেষ করে চলচ্চিত্রের গানের পূর্ণতার জন্য তার আরও বেশিদিন বেঁচে থাকার দরকার ছিল। আমার সৌভাগ্য তাঁর কণ্ঠ আমার সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। আমার অভিনীত ছবির প্রায় সব গানই তাঁর করা এবং অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। যেমন-জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছেসহ অনেক। তাঁর সঙ্গে আমার তেমন ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও তিনি আমার খুব পছন্দের একজন শিল্পী ও মানুষ ছিলেন। তাঁকে এমন অকালে শুধু আমি নই, কেউই হারাতে চায়নি। তার কণ্ঠের জাদু সহজেই শ্রোতাদের মুগ্ধ করত। এটিই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ। এমন একজন শিল্পী সহজে জন্মায় না। তার কাজ বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।

 

এন্ড্রু কিশোর-বাংলা গানের ঐশ্বর্য

     -হানিফ সংকেত

‘এন্ড্রুু কিশোর আর নেই’, প্রিয় বন্ধুর এই মৃত্যু সংবাদটি এত দ্রুত শুনতে চাইনি। কানে বাজছে ৯ জুন দেশে ফিরে প্রথমেই আমাকে ফোন করে বলল ‘বন্ধু চলে এসেছি, আমার জার্নি শেষ, এবার ফ্লাইটের অপেক্ষা’ বললাম কী বাজে বলিস। তার কথাই সত্যি হয়ে গেল। আলম খান ছিলেন তাঁর সিনেমার গানের ব্যাকগ্রাউন্ড আর এন্ড্রুর মান ভাঙিয়ে প্রায় ১৫ বছর পর ১৯৯৯ সালে আমি টিভিতে নিয়ে আসি তাঁকে, ইত্যাদিতে ‘পদ্ম পাতার পানি নয়’ করালাম, গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেল। এরপর টিভিতে তাঁর ফের যাত্রা শুরু। এন্ড্রু কিশোর-বাংলা গানের ঐশ্বর্য, যার খ্যাতির চাইতে কণ্ঠের দ্যুতিই ছিল বেশি। সংগীতাঙ্গনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অনেক কষ্ট পেয়েছি বন্ধু, এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি ভাবিনি- তোর আত্মার শান্তি কামনা করছি।

 

স্মৃতির অ্যালবাম

 

ভালো থাকবেন রোমান্টিক গানের মাস্টার ভয়েস : শাকিব খান

এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকের মতো গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢালিউডের শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান।

তিনি তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী, প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন আরও একজন লিজেন্ড হারাল। এ ক্ষতি কখনই পূরণ হওয়ার নয়।’ তিনি আরও লেখেন, ‘যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন রোমান্টিক গানের মাস্টার ভয়েস। এমন গুণীজনের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।’ শাকিব খান তার গাওয়া গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন। তাদের সম্পর্কও বেশ মধুর ছিল বলে জানা যায়। তাই অনেকের সঙ্গে এই নায়কও শোকাহত।

 

একনজরে

নাম : এন্ড্রু কিশোর

পদবি : প্লেব্যাক সম্রাট

জন্ম : ৪ নভেম্বর ১৯৫৫

জন্মস্থান : রাজশাহী

মৃত্যু : ৬ জুলাই ২০২০

স্ত্রী : লিপিকা এন্ড্রু

সন্তান : মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা ও ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২), সারেন্ডার (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১), কবুল (১৯৯৬), আজ গায়ে হলুদ (২০০০), সাজঘর (২০০৭) ও কি যাদু করিলা (২০০৮)।

বাচসাস পুরস্কার

প্রিন্সেস টিনা খান (১৯৮৪), স্বামী স্ত্রী (১৯৮৭), প্রেমের তাজমহল (২০০১), মনে প্রাণে আছ তুমি (২০০৮) ও গোলাপি এখন বিলেতে (২০১০)।

 

জনপ্রিয় গান

  জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প

  হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস

→  ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে

→  আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি

→  ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা

→  সবাই তো ভালোবাসা চায়

→  চাঁদের সাথে আমি দেব না

→  বেদের মেয়ে জোসনা আমায়

পরে না চোখের পলক

তুমি আমার জীবনের ভাবনা

ভালো আছি ভালো থেকো

ভালোবেসে গেলাম শুধু

আমি তোমার মনের মাঝি

তুমি মোর জীবনের ভাবনা

আমার বুকের মধ্যেখানে

আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল

আমার গরুর গাড়িতে

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর